মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের বেইজ ঢালাই ভেঙে ফেলায় গাংনী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধাদের বিক্ষোভ

 

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের নির্মাণাধীন ভবনের বেইজ ঢালাই ভেঙে ফেলার প্রতিবাদে গতকাল বৃহষ্পতিবার দুপুরে বিক্ষোভ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। পরে সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেনের মধ্যস্থতায় বিষয়টি নিরসনের দিকে গড়ায়। রাস্তা নির্মাণের জন্য গাংনী পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলামের লোকজন বুধবার রাতে নির্মাণাধীন ভবনের বেইজ ঢালাই ভেঙে তা কয়েক ফুট সরিয়ে দেয়।

নির্মাণাধীন মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের পেছনে প্রাক্তন গাংনী ইউনিয়ন পরিষদ ভবন। যা পরবর্তীতের গাংনী পৌরসভার প্রথম ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কমপ্লেক্সের পাশ দিয়ে সেখানে যাওয়ার রাস্তা ছিলো। কমপ্লেক্স নির্মান শুরু হলে সেখান দিয়ে ১০ ফুট রাস্তা দাবি করেন পৌর মেয়র। কমপ্লেক্স নির্মাণের সময় সেখানে ৮ ফুট রাস্তা ফেলে রাখে ঠিকাদার। মঙ্গলবার বেজ ঢালাই দেন ঠিকাদার নিয়োজিত নির্মাণশ্রমিকরা। পরে বুধবার বিকেল থেকে মেয়র তার লোকজন দিয়ে বেজ ঢালাই ভেঙে দুই ফুট পিছিয়ে। বিষয়টি নিয়ে বুধবার রাত থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এর জেরে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মুক্তিযোদ্ধারা জড়ো হন নির্মাণস্থলে। বেআইনিভাবে বেজ ঢালাই ভেঙে দেয়ার প্রতিবাদে মুক্তিযোদ্ধাদের তোপের মুখে পড়েন পৌর মেয়র ও মেহেরপুর এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী।

গাংনী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুন্তাজ আলী বলেন, পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম তার নিজস্ব লোকজন দিয়ে বুধবার রাতে নির্মাণাধীন মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের বেইজ ঢালাই ভেঙে ফেলে। যা মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মসম্মানে আঘাত লেগেছে। পৌরসভার নিয়মানুযায়ী রাস্তার জন্য ৫ ফুট জায়গা রাখার পরিবর্তে আমরা ৮ ফুট ছেড়েছি। কিন্তু পাশের জমির মালিক রাস্তা জন্য জমি না ছেড়েই বাড়ি ও পাঁচিল নির্মাণ করেছেন। তবে পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, এমপি ও নির্বাহী প্রকৌশলী রাস্তার জন্য ১০ ফুট জায়গা ছাড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। নির্বাহী প্রকৌশলীর উপস্থিতিতে বেজ ঢালাই সরিয়ে দেয়া হচ্ছিলো। কিন্তু বিষয়টি তারা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করেছে। সেখানে ট্রাকসহ যানবাহন চলাচলের জন্য ১০ ফুট রাস্তার প্রয়োজন। তবে মেয়রের এ বক্তব্য অস্বীকার করে মেহেরপুর এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী আজিম উদ্দীন সর্দ্দার বলেন, মন্ত্রণালয়ের দরপত্রের নকশা অনুযায়ী কমপ্লেক্স নির্মান হচ্ছে। নকশার এক চুল এদিক-ওদিক করার সুযোগ আমার নেই। তাই বেজ সরিয়ে দেয়ার কোনো প্রকার অনুমতি দেয়া হয়নি।

এদিকে বিক্ষুদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের শান্ত করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সভাকক্ষে উদ্ধুব্ধ পরিস্থিতি নিরসনে বৈঠক হয়। সেখানে বক্তৃতায় মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন গাংনী পৌর আশরাফুল ইসলামের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করেন। একজন মেয়র কিভাবে আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে এ কাজ করতে পারেন সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। তিনি আরো বলেন, তিনি যে কাজ করেছেন তা মুক্তিযোদ্ধা ও সরকারি সিদ্ধান্তের অবমাননা।

তবে বিষয়টির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের ছেড়ে দেয়া ৮ ফুট জায়গার সাথে পাশের জমির থেকে দুই ফুট জায়গা নিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হবে। তবে ওই বাড়ির পাঁচিল ভাঙাসহ রাস্তা নির্মাণের সকল খরচ তিনি বহন করবেন বলেও ঘোষণা দেন। বক্তৃতায় বেজ ঢালাই ভাঙার তীব্র সমালোচনা করেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের জেলা উপজেলা নেতৃবৃন্দ।

বৈঠকে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম জামাল আহমেদের সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ফরিদ উদ্দীন, মেহেরপুর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বশীর আহমেদ ও গাংনী থানার ওসি আনোয়ার হোসেন। গাংনী মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি জানান, বেজ ঢালাই আবার ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। এতে তার ব্যয় বৃদ্ধি পাবে।