জীবননগর পাঁকায় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তর হানা : ঘুমন্ত কৃষককে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে খুন

 

জীবননগর ব্যুরো/আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়নের পাঁকা গ্রামে ঘুমন্ত এক কৃষককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত ধারালো অস্ত্র  নিয়ে বুধবার রাত ১২টার দিকে হামলা চালিয়ে আবুল কালামকে (২৮) খুন করে। এ সময় তার স্ত্রী আনোয়ারা খাতুনকেও (২৫) কুপিয়ে জখম করা হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে যশোর সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত কৃষক আবুল কালাম পাঁকা গ্রামের মৃত খোকাই বিশ্বাসের ছেলে। জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ এনামুল হক জানান, কৃষক আবুল কালাম তার স্ত্রী আনোয়ারা খাতুনকে নিয়ে রাতে ঘরের বারান্দায় ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত ১২টার দিকে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে ঘুমন্ত কালামকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে খুন করে। এ সময় তার স্ত্রী আনোয়ারাকেও কুপিয়ে জখম করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং নিহত কালামের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা মর্গে পাঠানো হয়েছে। পূর্বশক্রতার জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে। হত্যার মোটিভ উদ্ধার ও খুনিকে গ্রেফতারে পুলিশ জোর প্রচেষ্টা জালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি। চুয়াডাঙ্গা সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) মো. কলিমুল্লাহ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

জানা গেছে, পাঁকা শালতলাপাড়ার মৃত খোকাই বিশ্বাসের ছোট ছেলে কালাম হোসন পেশায় একজন দিনমজুর। গত বুধবার রাতের খাওয়া-দাওয়া শেষে তিনি স্ত্রী আনোয়ারা খাতুনকে সাথে নিয়ে ঘরের বাড়ান্দায় ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঘুমন্ত অবস্থায় অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা তাকে দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করে। পাশে থাকা তার স্ত্রী রক্ষা করতে গেলে দুর্বত্তরা তার দু হাতে কুপিয়ে রক্তাক্ত আহত করে পালিয়ে যায়। আনোয়ারা খাতুনের চিৎকারে নিহতর ভাই ও স্বজনরা ঘরের বারান্দায় ক্ষতবিক্ষত লাশ দেখে পুলিশে খবর দেন। আহত আনোয়ারা খাতুনকে রাতেই স্বজনরা উদ্ধার করে যশোর আড়াইশ বেড হাসপাতালে ভর্তি করে। খবর পেয়ে রাতে জীবননগর থানা ও শাহাপুর ক্যাম্প পুলিশ উদ্ধার করে। জীবননগর থানার এসআই মকবুল হোসেন লাশের প্রাথমিক সুরাতহাল রিপোট তৈরি করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন। আলামত জব্দ করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার কলিমুল্লাহ (দামুড়হুদা ও জীবননগর) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পুলিশ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে নিহতর লাশ গতকাল বিকেলে স্বজনদের নিকট হস্তান্তর করেন। বিকেল ৪টার দিকে নিহতর লাশ বাড়িতে এসে পৌঁছুলে স্বজনদের কান্নায় এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। বাদ আছর পাঁকা ঈদগা ময়দানে নামাজে জানাজা শেষে গ্রামের মাদরাসা কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। খুনের ধরণ দেখে মনে হয়েছে কোনো অপেশাদার খুনি তাকে উপর্যুপরি এলোপাতাড়ি ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথা, বুক, পেট ও পায়ের বিভি স্থানে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে খুন করে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ১২টি কোপের দাগ রয়েছে বলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মকবুল হোসেন জানান।

সরেজমিনে এলাকা ঘুরে ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কালাম হোসেন শ্রবণ প্রতিবদ্ধি ছিলেন। তিনি নিরীহ প্রকৃতির মানুষ ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানান। কারো সাথে জমি-জায়গা, টাকা পয়সা ও বসবাসকে কেন্দ্র করে তার দ্বন্দ ছিল না। তিনি দিন মজুরের পাশাপাশি কয়েক বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে জীবিকা র্নিবাহ করতেন। নিরীহ কৃষককে হত্যা কেন? এ প্রশ্নের কোনো হিসাব মেলাতে পারেনি গ্রামের সাধারণ মানুষ। নিহত কালাম হোসেনের ভাই জাকির হোসেন জানান, রাতে ছোট ভাইয়ের স্ত্রী আনোয়ারা খাতুনের চিৎকারে এসে দেখি ভাইয়ের রক্তাক্ত দেহ ঘরের বাড়ান্দায় পড়ে আছে, ছোট বৌর দু হাত রক্তাক্ত। কান্নকাটি করছে। তিনি তার ভাইয়ের গ্রামের কারো সাথে কোনো বিরোধ ছিলো না বলে দাবি করেন। প্রশ্ন উঠেছে, রাজনৈতিক, জমি-জায়গা ও নারী ঘটিত কোনো ঘটনায় মানুষ খুন হয়। নিরীহ মানুষকে খুন কেন? তবে স্ত্রীর পরকীয়া না কি অন্যের কোনো অনৈতিক কর্মকাণ্ড দেখে ফেলার কারণে নিরীহ কৃষককে হত্যা করা হয়েছে।  পুলিশ নারী ঘটিত বিষয়কে প্রধান্য দিয়ে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে।

নিহতের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের শালতলাপাড়া শাহাপুর রাস্তার শেষের দিকে নিহত দিনমজুর কালাম হোসেনের বাড়ি। বাড়িটি একপ্রান্তে আধাঁপাঁকা ঘর। সামনের দিকে বাঁশের কাবারি দিয়ে ঘেরা। বাঁশের রেলিং দিয়ে গেট। গেটে তালা দেয়া ছিলো। দুর্বত্তরা রেলিঙের তার খুলে ভেতরে প্রবেশ করে এ নৃংশস খুন সংঘটিত করে। বাড়ান্দায় রক্ত শুকিয়ে জমাট বেঁধে রয়েছে। তথ্য অনুসন্ধান নিয়ে জানা গেছে, নিহত কালামের সেজো ভাই আব্দুল মজিদ প্রবাসী। তার স্ত্রীর সাথে কালামের স্ত্রীর মনোমালিন্য ছিল দীর্ঘদিনের। এ মনোমালিন্য কে কেন্দ্র করে ঘেরাঘিরি করে উভয় পরিবার বসবাস করছিলো। দ্বন্দ্বের  বিষয়টি নিহতর ভাই জাকির হোসেনের নিকট সত্যতা জানতে চাইলে তিনি আনুরা বলতে পারেন বলে জানান।

নিহতর পরিচয়: মৃত খোকাই বিশ্বাসের ৫ ছেলে ও ২ মেয়ে মধ্যে কালাম ছিলো সকলের ছোট। বড় ভাই রবিউল ইসলাম, মেজ ভাই হাবিবুর রহমান, সেজ ভাই আব্দুল মজিদ ব্রনাই প্রবাসী, জাকির হোসেন ও নিহত কালাম হোসেন ছিলেন সকলের ছোট। সকলেই পেশায় কৃষক, দিনমজুর। দুই বোন হালিমা ও সালমা বিবাহিতা। এ ব্যাপারে জীবননগর থানার অফিসার ইনর্চাজ এনামুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মাথাভাঙ্গা এ প্রতিবেদকে বলেন, নিহর ভাই জাকির হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত নামা আসামি করে মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ হত্যা রহস্য উদঘাটঁন করতে জোর তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। দ্রুত খুনিকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।