সবুজে ভরা মাঠে ধানের আবাদ গ্রাস করছে পাতাপোড়া রোগ

 

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি অফিসে উপায় জানতে গিয়ে হতাশ হওয়ার অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার: মাঠজুড়েই এখন সবুজে ভরা। ধান আর ধান। সবুজের মাঝে দূরে দাঁড়িয়ে থাকালে মনে হবে, কিছু জমির ধান যেনে আগেই পেকে গেছে। কিন্তু না, পাতাপোড়া রোগে জমির ধান নষ্ট করে দিচ্ছে। এ রোগ দ্রুত মাঠে ছাড়াচ্ছে। প্রতিকার না পেয়ে বহু ধানচাষির হাত উঠেছে মাথায়।

চুয়াডাঙ্গা বেলগাছি দক্ষিণপাড়ার ধানচাষি আবু কাওছার বিশ্বাসের কয়েক বিঘা জমির ধানের পাতা পোড়া রোগে বিনষ্ট হচ্ছে। ধানগাছ রক্ষার উপায় জানতে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি অফিসারের নিকট গিয়ে কোনো প্রতিকারই পাননি বলে অভিযোগ করে বলেছেন, এলাকার উপসহকারী কৃষি অফিসারের তো টিকে দেখা যায় না, অফিসে গিয়ে ধানের গাছ পাতাপোড়া রোগ থেকে বাঁচানোর উপায় জানতে গেলেও কোনো সহযোগিতা পেলাম না। চোখের সামনে আড়াই বিঘা জমির ধান পাতা পোড়া রোগে নষ্ট হচ্ছে। নিজে নিজেই বাজার থেকে একটি ওষুধ নিয়ে দিয়েও কিছু হলো না। লোকমুখে শুনে পটাশ দিলাম। তাতেও তো ধানের পাতা সবুজ হচ্ছে না।

চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রায় সব এলাকার জমিই ধানের আবাদের জন্য উপযোগী। অধিকাংশ কৃষকই মরসুমভিত্তিক ধানের আবাদ করেন। চুয়াডাঙ্গার অধিকাংশ মাঠেই ধান আর ভুট্টার আবাদে ভরা। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকা বেলগাছির বিস্তীর্ণমাঠে ধানের আবাদে পাতাপোড়া রোগ লেগেছে। এ রোগ মাঠের ধানের আবাদে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। বেলগাছি দক্ষিণপাড়ার ধানচাষি আবু কাওছার বিশ্বাস বলেছেন, চুয়াডাঙ্গা দৌলাতদিয়াড়স্থ বিএডিসির বীজ বিক্রয় কেন্দ্র থেকে ব্রি-২৮ ভিত্তি জাতের ধানের বীজ নিয়ে বীজতলায় পাতু করে বিল জমিতে তা রোপণ করি। খানেকটা হঠাত করেই দিন ১৫-১৬ আগে দেখি ধানগাছের পাতা সব সুকিয়ে যাচ্ছে। যে ধানের এখনও থোড়ই হলো না, অথচ পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে কেন? প্রতিকারই বা কী? এসব জানতে সদর উপজেলা কৃষি অফিসে কিছু ধানগাছ নিয়ে গেলাম। সাহেবরা আমার কোনো কথাই শুনলো না। মাঠের আমার আড়াই বিঘা জমির ধানেই শুধু এ রোগ লাগেনি, আমার ডানে বামে ওদেরও লেগেছে। ওরাও প্রতিকার না পেয়ে চরম মনকষ্টে ভুগছে।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতপরশু বেলগাছি বিলমাঠে সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, বিশাল এলাকাজুড়ে শুধুই ধানের আবাদ। সবুজে ভরা। মনভরে যাওয়ার মতো ধানের আবাদের কিছু অংশ দূর থেকে মনে হচ্ছে পেকে গেছে। কাছে গিয়ে দেখলেই বিষন্বতায় ভর করবে মন। আহারে, ধানগাছগুলো এভাবে মরে যাচ্ছে! অভিযোগের প্রেক্ষিতে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি অফিসারের সাথে অফিসে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করে না পেয়ে শেষ র্পন্ত সেলফোন তথা মোবাইলফোনে কথা হয়। তিন বলেন, শুনেছি বেলগাছি মাঠে পাতাপোড়া রোগ লেগেছে। আমি সেখানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

মাঠে যার কৃষকদের সাথেই কাজ করার কথা, তিনি উপসহকারী কৃষি কর্মকতা। প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় একজন করে দায়িত্ব পালন করছেন। বেলগাছি এলাকার কৃষকদের অনেকেরই অভিযোগ, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার কখনই মাঠে দেখা মেলে না। এ বিষয়ে পৌর এলাকার দায়িত্বে নিয়োজিত মোস্তাক আহম্মেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বেলগাছি আর হাজরাহাটি এলাকায় হেন দিন নেই যে যাইনি। অথচ এ ধরনের অভিযোগ উত্থাপন হয়েছে শুনে অবাক হচ্ছি। তাছাড়া যে এলাকার যে মাঠের ধানের আবাদে পাতাপোড়া রোগ হয়েছে সে এলাকায় ধানচাষিদের বিঘাপ্রতি ৬০ লিটার পানির সাথে ১২০ গ্রাম সানজিট পাওডার দশদিন পর পর স্প্রে করতে বলা হয়েছে। ইউরিয়া দেয়া বারন। তবে পটাশ দেয়া যাবে। যেহেতু এটা বেকটেরিয়া জাতীয় রোগ। সেহেতু ধানের আবাদের জমি ৫ থেকে ১০ দিন শুকাতে হবে।