ধরা যখন পড়েছে তখন উপযুক্ত শাস্তিই কাম্য

 

অজ্ঞানপার্টির চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহ অঞ্চলের সদস্যদের তো পুলিশ ধরতেই পারে না, এবার যখন চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা জয়রামপুর কাঁঠালতলা এলাকার জনগণ তিনজনকে ধরে দিয়েছে তখন নিশ্চয় পুলিশ তাদের ওস্তাদসহ অন্য সহযোগীদের ধরতে সক্ষম হবে। এ অশা করা অমূলক না হলেও অজ্ঞান পার্টিসহ ছদ্মবেশে ঘোরা হরেক রকমের প্রতারক ও মোটরসাইকেল ধরার বিষয়ে পুলিশের প্রতি প্রত্যাশা যেন অবান্তর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গতপরশু চুয়াডাঙ্গা স্টেশন এলাকা থেকে দামুড়হুদার জয়রামপুর গুড়ের হাটের উদ্দেশে ইজিবাইকযোগে রওনা হয়ে দু গুড় ব্যবসায়ী অজ্ঞানপার্টির খপ্পড়ে পড়েন। বিস্কুট খাইয়ে নগদ দেড় লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালানোর সময় জয়রামপুর কাঁঠালতলা এলাকার জনগণ অজ্ঞানপার্টির তিন সদস্যকে ধরে পিটুনির পর পুলিশে দেয়। অবাক হলেও সত্য যে, হাতেনাতে ধরা পড়া তিন প্রতারকের বাড়ি চুয়াডাঙ্গার বহুদূরে। তিনজনের বাড়ি তিন জেলায় বলে পরিচয় দিয়ে নাটোর, রংপুর ও টাঙ্গাইলের কথা বলেছে।

বোরকা পরা ক্রেতা সেজে শাড়িকাপড়সহ জুয়েলারি দোকানে চুরি করা মহিলা চোরের উপদ্রব কিছুদিন হ্রাস পেলেও মোটরসাইকেল চুরির যেন হিড়িক পড়েছে। চোখের পলকে মোটরসাইকেল চুরি করে সটকে পড়ছে চোরচক্র। ওদের টিকেও ছুঁতে পারছে না পুলিশ। একইভাবে মোবাইলফোনে নানাভাবে প্রতারণা করা প্রতারকও থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। আর অজ্ঞানপার্টির অপতৎপরতা? লেগেই রয়েছে। হাতেনাতে ধরাপড়া তিনজন যাতে সহজে ছাড়া না পায় সেদিকে বিশেষ নজর রাখার পাশাপাশি ওদের সহযোগীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে নিশ্চয় অবশ্যই অপতৎপরতা হ্রাস পাবে। শুধু সরলসোজা মানুষগুলোকে সচেতন করার তাগিদ দিয়ে প্রতারণা বন্ধ হবে না, প্রতারকদেরও উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের দায়িত্বশীলদের দক্ষতা মেলে ধরতে হবে। সমন্বয়হীনতা দূর করে আন্তঃজেলা আন্তঃবিভাগীয় প্রতারকচক্রের যোগসূত্র খুঁজে বের করতে না পারলে আন্তঃজেলা অপরাধীর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।

অজ্ঞানপার্টি একদিনে সারাদেশে ব্যাপকতা পায়নি। ধীরে ধীরে ছড়িয়েছে। শুরুতেই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের বাড়তি নজরদারি থাকলে চেতনানাশক প্রয়োগে মানুষকে অজ্ঞান করে অর্থসহ মূল্যবান মালামার হাতিয়ে নেয়া এই চক্রের অপতৎপরতা এতোটা অসহনীয় হতো না। অবশ্যই অজ্ঞানপার্টির সদস্যদের ধরে আইনে সোপর্দ করার মধ্যে কিছুটা হলেও গাফিলতি রয়েছে। ওই গাফিলতিই ওদের বিস্তার লাভের সুযোগ করে দিয়েছে।

হাতেনাতে ধরা পড়া অজ্ঞানপার্টির তিনজনই বহিরাগত বলে ধরে নেয়ার কোনো কারণ নেই যে, ওদের স্থানীয় সহযোগী নেই। কোনো অপরাধীই এলাকার সহযোগী ছাড়া অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড অতোটা সহজে করতে পারে না যতোটা সহজে দুজন গুড় ব্যবসায়ীকে ওরা অজ্ঞান করে টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালানোর সুযোগ খুঁজছিলো। হাতেনাতে ধরা পড়া তিন অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি ওদের সহযোগীদের আইনের আওতায় নিতে পারলে অবশ্যই অপরাধ প্রবণতা হ্রাস পাবে।