আলমডাঙ্গা কৃষিব্যাংকের প্রতারকচক্রের মুখোশ খসে পড়েছে : ঋণ না নিয়েও সার্টিফিকেট মামলার আসামি হতে চলেছেন চরশ্রীরামপুরের কৃষক আয়ূব আলী

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গা কৃষিব্যাংকের প্রতারকচক্রের মুখোশ খসে পড়েছে। ঋণ না নিয়েও সার্টিফিকেট মামলার আসামি হতে চলেছেন আলমডাঙ্গার চরশ্রীরামপুর গ্রামের কৃষক আয়ূব আলী। শস্য ঋণ গ্রহণ বাবদ সুদে-আসলে প্রায় ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা পাওনা দেখিয়ে কৃষিব্যাংক আলমডাঙ্গা শাখার ব্যবস্থাপক গত ৯ মার্চ কৃষক আয়ূব আলীকে তার বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা দায়েরের এ চরমপত্র প্রদান করেছেন।

আয়ূব আলীর পারিবারিকসূত্রে জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার কালিদাসপুর ইউনিয়নের চরশ্রীরামপুরের মৃত নায়েব আলীর ছেলে কৃষক আয়ূব আলী ২০১১ সালে শস্য ঋণ গ্রহণের জন্য কৃষিব্যাংক আলমডাঙ্গা শাখার পরিদর্শক আব্দুল হান্নানের নিকট যান। আব্দুল হান্নান আলমডাঙ্গার বণ্ডবিল গ্রামের লাল্টু নামের এক ব্যক্তির সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দেন। বলেন, এই লাল্টুর সাথে যোগাযোগ করবেন, তিনি সব ঠিক করে দেবেন। ব্যাংক পরিদর্শক আব্দুল হান্নানের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে কৃষক আয়ূব আলী ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা লোন গ্রহণের যাবতীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করেন। ঋণ উত্তোলনের আগে দালাল লাল্টু কৃষক আয়ূব আলীকে বলেন, ১ লাখ ৭০ হাজার ঋণ নিতে হলে ৪০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হবে পরিদর্শক, ব্যাংকের ব্যবস্থাপকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা তুলে ৪০ হাজার টাকা কেটে রেখে তোমাকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দেয়া হবে। এমন প্রস্তাবে রাজি হয়নি আয়ূব আলী। তিনি এই ব্যাংক থেকে ঋণ নেবেন না জানিয়ে ঋণের জন্য প্রস্তুত করা ফাইল ফেরত চান। পরে ফেরত দেয়া হবে জানিয়ে দালাল লাল্টু ও ব্যাংক পরিদর্শক আব্দুল হান্নান তাকে ফাইল ফেরত দেননি।

ব্যাংক সংশ্লিষ্ট একাধিকসূত্র জানায়, কৃষিব্যাংক আলমডাঙ্গা শাখার তৎকালীন ব্যবস্থাপক বিমল কুমারের সাথে পরামর্শ করে পরিদর্শক আব্দুল হান্নান ২০১১ সালে আয়ূব আলীর অগোচরে তার নামে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা শস্য ঋণ উত্তোলন করে ভাগাভাগি করেন। পরবর্তীকালে ২০১৩ সালে সেই ঋণ পরিশোধ করে আবারও নতুন করে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ঋণ উত্তোলন করে ভাগাভাগি করেন।

এদিকে, দীর্ঘ ৫-৬ বছরেও এত বড় প্রতারণার কিছুই জানতে পারেননি হতভাগ্য কৃষক আয়ূব আলী। সম্প্রতি হঠাৎ করেই তিনি কৃষিব্যাংক আলমডাঙ্গা শাখার ব্যবস্থাপক স্বাক্ষরিত ঋণ পরিশোধের শেষ বারের মতো একটি চরমপত্র পান। হস্তগত পত্রের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন গত ২০১৩ সালের ২১ মার্চ তিনি কৃষিব্যাংক থেকে যে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন। তা এখন সুদাসলে প্রায় ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা হয়েছে। ঋণ পরিশোধের নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হলেও সে ঋণ পরিশোধ করা হয়নি। এমনকি বার বার তাগাদা সত্ত্বেও না। এমতাবস্থায় ব্যাংকব্যবস্থাপনা তার বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এই চরমপত্র পাওয়ার পর কৃষক আয়ূব আলীর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। তিনি আত্মীয়-পরিজন সাথে নিয়ে গতকাল রোববার ছুটে যান ব্যাংক ব্যবস্থাপক শামীম উদ্দীনের নিকট। ব্যাংকব্যবস্থাপক শামীম উদ্দীন আগামী ২১ মার্চ এ বিষয়ে আলোচনার জন্য আয়ূব আলীকে ব্যাংকে উপস্থিত থাকতে বলেছেন। এরই মধ্যে বিষয়টি ২১ মার্চের আগেই গোপনে মিটিয়ে ফেলতে অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এজন্য সিবিএ নেতাদের ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। কৃষিব্যাংক আলমডাঙ্গা শাখার পরিদর্শক নাটের গুরু আব্দুল হান্নানসহ অনেকেই ফেঁসে যাবেন এমন ভয়েই বিষয়টি সিবিএ নেতাদের সহযোগিতায় মীমাংসার উদ্যোগ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। কৃষিব্যাংক আলমডাঙ্গা শাখার পরিদর্শক আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ এটাই নতুন নয়। এমন অসংখ্য অভিযোগ প্রতি বছর উত্থাপিত হয় তার বিরুদ্ধে।

সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও এলাকাসূত্রে জানা যায়, আলমডাঙ্গার বাদেমাজু, ডাউকী ও বিনোদপুর গ্রামের অনেক কৃষকের নামে তিনি কয়েকজন দালালের সহযোগিতায় ঋণ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সকল প্রতারিত কৃষকদের কয়েকজন গত বছরের শেষের দিকে তার নামে মামলার প্রস্তুতি নিলে তিনি লোকজন ধরে তাদের সাথে এক প্রকার মীমাংসা করে নিয়েছেন। বিষয়টি কৃষিব্যাংক আলমডাঙ্গা শাখার সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী কম-বেশি জানেন বলেও সূত্রের দাবি।