মুক্তা খাতুন হত্যা মামলটি আত্মহত্যা মামলায় রূপান্তরের পথে

স্বামীর পরকীয়ায় আসক্তি সংসারে আনে অশান্তি : স্ত্রীকে ঠেলে দেয় মৃত্যুর দিকে

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার তালতলা পশুহাটপাড়ার মুক্তা খাতুনকে হত্যা করে নয়, তাকে আত্মহত্যার মুখে ঠেলে দিয়ে সটকে পড়ে পরকীয়ায় আসক্ত স্বামী রুবেল হোসেন টুটুল। পালানোর আগে সে তার শ্বশুরবাড়ি পাত পেড়ে খায়। নিরাপদ দূরুত্বে গিয়ে সে তার স্ত্রীর আত্মহত্যা করেছে কি-না তা নিশ্চিত হয়। পুলিশি তদন্তে এখন এসবই বেরিয়ে আসছে। ফলে মুক্তা খাতুনের পিতা চুয়াডাঙ্গা ইসলামপাড়ার আজিজুল হকের দায়ের করা হত্যা মামলাটি আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলায় রূপান্তর হতে পারে।

সূত্র বলেছে, ঘটনার ৬ মাসের মাথায় মামলার বাদীকে চুয়াডাঙ্গার এক জুয়েলারি ও ঠিকাদারি ব্যবসায়ী আপসের প্রস্তাব দিয়েছেন। সেই প্রস্তাবের আলোকে খুব শিগগিরিই আপস মীমাংশ হতে পারে। তা হলে আর আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলায় হাজরাহাটির সেই কলেজছাত্রীকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে না। ওই কলেজছাত্রীর প্রেমে পড়েই রুবেল হোসেন টুটুল তার সংসারে অশান্তির আগুন জ্বালে। একইভাবে চুয়াডাঙ্গা ইসলামপাড়ার মেয়ে মুক্তা খাতুন কুষ্টিয়ার পিয়ারাতলা এলাকায় থাকাকালে ওই রুবেল হোসেন টুটুলের ছলনায় পড়ে। টুটুল তার প্রথম স্ত্রীকে কুষ্টিয়া দৌলতপুরের মথুরাপুরে রেখে চুয়াডাঙ্গায় মুক্তার সাথে সংসার পাতে। মুক্তার পিতা পক্ষ শুধু মোটরসাইকেল নয়, চুয়াডাঙ্গা শ্মশানপাড়া তথা তালতলা পশুহাটাপাড়ায় কিছু জমি দিয়ে বাড়ি করে দেয়। বাড়ির পাশে রুবেল হোসেন টুটুলের হোমিও চেম্বারও খুলে দেয়া হয়। ওই চেম্বারে বসেই হাজরাহাটি কলেজছাত্রীর দিকে পড়ে কুনজর। এক পর্যায়ে সেই নজর গড়ায় পরকীয়া সম্পর্কে। বিষয়টি জানতে পেরে হাজরাহাটির মুক্তা খাতুনের ওপর থেকে স্ত্রী মুক্তার দিকে চোখ ফেরানোর চেষ্টায় নামে। তাতে লাভ হয়নি। বরঞ্চ উল্টোটাই হয়েছে মুক্তা খাতুনের জীবনে। স্বামীর নানা অপকর্ম আর অসৌজন্যমূলক আচরণসহ মাঝে মাঝেই শারীরিক নির্মম নির্যাতন মুক্তা খাতুনকে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দিয়েছে। যদিও গত ১৭ ডিসেম্বর নিজ ঘরের আড়া থেকে লাশ উদ্ধারের পর তার ভাইসহ নিকজনদের মন্তব্য ছিলো, মুক্তাকে নির্মমভাবে নির্যাতনের পর শ্বাস রোধে হত্যা করে লাশ ঘরের আড়ার সাথে ঝুলিয়ে রেখে শ্বশুরবাড়ি পাত পেড়ে খেয়ে পালিয়েছে রুবেল হোসেন টুটুল।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চুয়াডাঙ্গা শহর ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই ওহিদুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, মুক্তা খাতুনের মৃতদেহ উদ্ধারের পরদিন ১৮ ডিসেম্বর ময়নাতদন্ত করা হয়। আজিজুল হক বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ময়নাতদন্তে মৃত্যুর কারণ হিসেবে গলায় ফাঁসকেই চিহ্নিত করেছে। ফলে হত্যা মামলাটি আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলার দিকেই মোড় নিচ্ছে। তাছাড়া রুবেল হোসেন টুটুল তার স্ত্রী মুক্তা খাতুনের ওপর নির্যাতন করতো বলেও তথ্য পাওয়া গেছে। হাজরাহাটির এক কলেজছাত্রীর কারণে সংসারে অশান্তি শুরু হয় বলেও তথ্য রয়েছে।

প্রসঙ্গত, রুবেল হোসেন টুটুল কুষ্টিয়া দৌলতপুরের মথুরাপুর গ্রামের সিদ্দিক মণ্ডলের ছেলে। সে তার নিজ গ্রামের প্রথম স্ত্রী ও সন্তান রেখে কুষ্টিয়ায় থাকাকালে চুয়াডাঙ্গা ইসলামপাড়ার আজিজুল হকের মেয়ে মুক্তা খাতুনের সাথে প্রেম সম্পর্ক গড়ে তোলে। বিয়ে করে। মুক্তা যখন জানতে পারে তার প্রথম স্ত্রী রয়েছে তখন অশান্তি শুরু করলেও সে তার পিতার বাড়ি ফেরে। টুটুল ঘরজামাই হিসেবে বসবাস শুরু করে। তালতলা পশুহাটপাড়ায় বাড়ি করে দেয়া হয়। বিয়ের আনুমানিক ৫ বছরের মাথায় গত ১৭ ডিসেম্বর মুক্তাখাতুনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। তার রয়েছে এক মাত্র কন্যা সন্তান। মুক্তা খাতুনের মৃত্যুর সময় বয়স ছিলো আড়াই বছর। বর্তমানে ৩। মুক্তা খাতুনের মেয়ে রুবাইয়া ইসলাম রুহীকে মুক্তা খাতুনের ছোট বোনকেই দেখা শোনা করতে হয়। ওতোটুকু শিশুর দিকে তাকিয়ে মুক্তার ছোট বোন রাবেয়া খাতুন পড়াশোনাটাও বিসর্জন দিয়েছেন। গতপরশু রুহী কেমন আছে দেখতে গেলেই সে কান্না শুরু করে। রাবেয়া খাতুন তার বোনের রেখে যাওয়া শিশু সন্তান রুহী সম্পর্কে জানাতে গিয়ে বলেন, এখনও অনেক মানুষ দেখলেই রুহী কান্না কাটি করতে থাকে। কেউ ক্যামেরা সামনে ধরলেই ভয় পায়। প্রথম প্রথম ওর মাকে খুঁজলেও আদর যত্মে কমতি না থাকায় সেটা বোধ হয় ভুলেই গেছে। বড় হয়ে সে যখন জানবে তার পিতার পরকীয়া আসক্তির বলি হয়েছে মা মুক্তা, তখন হয়তো পিতাকেও ঘৃণা করবে। মনে মনে হয়তো বলবে, যতোকিছুই হোক, অতোটুকু বয়সে কোনো মাকে কি ওইভাবে চলে যাওয়া উচি?