চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা সড়কে সন্ধ্যারাতে গাছ ফেলে ডাকাতদলের তাণ্ডব : রয়েল চালকসহ আহত ৬

 

ঘোড়ামারা ব্রিজের অদূরে পুলিশ থাকতেও কয়েকটি গাড়িতে মেরে-ধরে গণহারে ৫ লাখ টাকা ডাকাতি!

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা সড়কের বহুল আলোচিত ঘোড়ামারা ব্রিজ-চন্দ্রাবতী ইদারার অদূরে গাছ ফেলে একদল ডাকাত তাণ্ডব চালিয়েছে। গতরাত সাড়ে ৯টার দিকে ডাকাতদলের কবলে পড়ে চুয়াডাঙ্গা থেকে কুষ্টিয়ার উদ্দেশে রওনা হওয়া একটি ওষুধ কোম্পানির ওষুধ বহনকারী ক্যাভার্ড ভ্যান ও আলমডাঙ্গা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়া তিনটি নৈশকোচ। কোচ ও ওষুধ কোম্পানির পিকআপ থেকে প্রায় ৫ লাখ টাকা ডাকাতি করেছে ডাকাতদল। এ সময় ডাকাতদলের ধারালো অস্ত্রের কোপে ও লাঠির আঘাতে আহত হয়েছেন রয়েল এক্সপ্রেসের চালক, সুপারভাইজার ও হেলপারসহ ৬ জন।

চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা সড়কের ঘোড়ামারা ব্রিজের অদূরে দীর্ঘদিন ধরেই ছিনতাই রাহাজানি ও গাছ ফেলে ডাকাতি হয়। এ কারণে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর পুলিশও মোতায়েন থাকে ওই সড়কে। গতকালও ছিলো। তারপরও সড়কের ধারের গাছ কেটে ডাকাতি হলো কিভাবে? গতরাতে কর্তব্যরত এএসআই হাফিজুর রহমান অবশ্য এ প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলেছেন, সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাব দিতে আমি বাধ্য নই। যা বলার সব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকেই বলবো। অপরদিকে ডাকাতির শিকার এক কোচযাত্রী অভিযোগ করে বলেন, বাঁশি বাজিয়ে পুলিশ দল আসছে বুঝেও ধীরে-সুস্থে ডাকাতদল ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছুলে যখন বলা হয়, ওই তো ডাকাত দেখা যাচ্ছে। তখনও পুলিশ ছিলো নির্বিকার।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা সড়কের চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সীমান্তের পাশেই হাজরাহাটি-বোয়ালমারী মাঠে চন্দ্রবতী ইদারা। এর অদূরেই হাজরাহাটি মোড় ও বহুল আলোচিত ঘোড়ামারা ব্রিজ। চন্দ্রাবতী ইদারার অদূরে গাছ কেটে সড়কে ফেলার পর চুয়াডাঙ্গা থেকে কুষ্টিয়ার উদ্দেশে রওনা হওয়া এসিআই ফার্মাসিটিক্যালসের একটি ক্যাভার্ডভ্যান পৌঁছায় সেখানে। এ তথ্য জানিয়ে ওষুধ কোম্পানির ডেলিভারিম্যান মনিরুল ইসলাম জানান, চালক ও সহকারীসহ আমরা তিনজন ক্যাভার্ড ভ্যানযোগে রওনা হয়ে দূর থেকেই দেখতে পাই সড়কে গাছ ফেলা। পাশে কয়েকজনের অবস্থান। দৃশ্য দেখে চালক দ্রুত কাভার্ডভ্যান পিছিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। ডাকাতদল ছুটে আসে। আমাদের জিম্মি করে গাড়িতে ও আমাদের পকেটে থাকা নগদ প্রায় ৪ লাখ টাকা ডাকাতি করে। ডাকাতির দৃশ্য দেখে চালক জান আলী নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পেরে পালানোর চেষ্টা করেন। সর্বশেষ চুয়াডাঙ্গার জনতা ফার্মেসি থেকে পাওয়া নগদ ২৬ হাজার টাকা ছিলো পকেটে। ওই টাকাও ডাকাতদল মেরেধরে কেড়ে নেয়। অপরদিকে আলমডাঙ্গা থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা রয়েল এক্সপ্রেস, চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স ও পূর্বাশার তিনটি কোচ ডাকাতদলের ফেলা গাছে আটকে পড়ে। রয়েল এক্সপ্রেসের চালক কার্পাসডাঙ্গার শামীম দ্রুত প্রতিরোধের চেষ্টা করলে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। তিনি রক্তাক্ত জখম হন। একই সাথে ডাকাতদলের অস্ত্রাঘাতে আহত হন হেলপার দৌলাতদিয়াড়ের চকলেট এবং সুপারভাইজার সুমন। রয়েল এক্সপ্রেসে যাত্রীর সংখ্যা ছিলো ১০-১২ জন। প্রত্যেকের কাছ থেকেই নগদ টাকা ডাকাতি করে ডাকাতদলের সদস্যরা। এ কোচের যাত্রী আলমডাঙ্গা পাঁচলিয়ার শরিফ বলেছেন, পিতা হারানোর শোক নিয়ে কর্মস্থল ঢাকার উদ্দেশের রওনা হয়ে ডাকাতির কবলে পড়লাম। ডাকাতদল যাত্রীদের নিকট যা পেয়েছে তাই ছিনিয়ে নিয়েছে। ডাকাতির এক পর্যায়ে যখন পুলিশ বাঁশি বাজিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় তখন ডাকাতদল সরে পড়ে। পুলিশকে বিষয়টি জানানোর পরও কোনো প্রতিকার মেলেনি। পূর্বাশা পরিবহনের নৈশকোচ চালক হরিণাকুণ্ডুর মিরু বলেছেন, আমরা আলমডাঙ্গা থেকে ফিরছিলাম। আমাদের কোচে কোনো যাত্রী ছিলো না। তবে আমাদের কাছে যা পেয়েছে তা ছিনিয়ে নেয় ডাকাতরা। চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সে কতোজন যাত্রী ছিলেন তা অবশ্য নিশ্চিত করে জানা সম্ভব হয়নি। একই সাথে ডাকাতদলে কতোজন ছিলো তাও নিশ্চিত করে জানা যায়নি। তবে ডাকাতির শিকার কোচযাত্রীদের ধারণা ডাকাতরা ১৮-২০ জন ছিলো। এদের অধিকাংশের হাতেই ছিলো ধারালো অস্ত্র।

ডাকাতদলের হামলায় আহতদের মধ্যে ঝিনাইদহ শিকারপুরের মোস্তফা আলীর ছেলে আব্দুল হামিদের মাথায় বেশ ক’টা সেলাই দিতে হয়েছে। তিনি কোচের যাত্রী নাকি চালক তা নিশ্চিত করে জানা সম্ভব হয়নি। রয়েল এক্সপ্রেসের যাত্রী আলমডাঙ্গা গড়চাপাড়ার ছাত্তার আলী বলেছেন, চিকিৎসার জন্য খুব কষ্ট করে জোগাড় করা আড়াই হাজার টাকা ডাকাতদল ছিনিয়ে নিয়ে গেলো। এখন চিকিৎসা করাবো কিভাবে?  অপর যাত্রী বলেছেন, ডাকাতদল বেশ ক’টা গাড়িতে গণহারে ডাকাতি করেছে।

সড়কে গাছ ফেলে ডাকাতি ও ডাকাতদলের হামলায় বেশ ক’জন আহত হওয়ার খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) তরিকুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। আহতদের সাথে কথা বলেন। তিনি দ্রুত ডাকাতদল ধরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেন। অপরদিকে ওই সড়কে কর্তব্যরত এএসআই হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।