দর্শনা ডিএস মাদরাসার অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাও. ইউসুফ আলীর ইন্তেকাল 

সকলকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে শায়িত হলেন চিরনিদ্রায় : জানাজায় মানুষের ঢল

 

দর্শনা অফিস: ঐতিহ্যবাহী দর্শনা ডিএস সিনিয়র ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাও. ইউসুফ আলী আর নেই (ইন্নালিল্লাহে………….রাজেউন)। সকলের প্রিয় মুখ অসংখ্য মানুষের শ্রদ্ধেয়জন চুয়াডাঙ্গা জেলার বিশিষ্ট আলেম হাজি মাও. ইউসুফ আলীর ইন্তেকালে দর্শনায় শোকের ছায়া নেমে আসে। তার অসংখ্য ছাত্র, শুভাকাঙ্ক্ষীসহ অসংখ্য মানুষ জানাজায় অংশ নেন।  দীর্ঘদিন ধরে মাও. ইউসুফ আলী ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন। তিনি দর্শনা ইসলাম বাজারস্থ নিজ বাড়িতেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। অসুস্থতার পর থেকেই প্রতিদিন অসংখ্য ছাত্র তাকে দেখতে গেছেন। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মাও. ইউসুফ আলী (৬৪) মারা যান। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে গোটা এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। শেষবারের মতো একনজর দেখতে শুধু চুয়াডাঙ্গাসহ আশপাশ জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তার প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্ররা ভিড় জমায়। পরিবার-পরিজনই নয়, সকলেই ভেঙে পড়েন কান্নায়। মৃত্যুকালে স্ত্রী, ৩ ছেলে ও ৩ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন মাও. ইউসুফ আলী। গতকালই জোহর বাদ দর্শনা কেরুজ বাজার মাঠে তার জানাজায় শোকহত মানুষের ঢল নামে।

 

জানাজা শেষে দর্শনা মোবারকপাড়া কেন্দ্রীয় গোরস্তানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। জানাজা ও দাফনকালে উপস্থিত ছিলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদুল ইসলাম আজাদ, চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মঞ্জু, দর্শনা পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান, জেলা জামায়াতের আমির আনোয়ারুল হক মালিক, নায়েবে আমির ও উপজেলা চেয়ারম্যান মাও. আজিজুর রহমান, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি রুহুল আমিন, আ.লীগ নেতা আলী মুনসুর বাবু, দর্শনা ডিএস ফাজিল মাদরাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি গোলাম ফারুক আরিফ, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আরিফুল ইসলাম, কেরুজ সেলস অফিসার শেখ শাহবুদ্দিন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল কাদের, দর্শনা রেলবাজার জামে মসজিদের পেশ ইমাম হাজি মাও. মুফতি গোলাম কিবরিয়া, দর্শনা পুরাতন বাজার জামে মসজিদের পেশ ইমাম হাজি মাও. নুরুল ইসলাম, কেরুজ জামে মসজিদের পেশ ইমাম হাজি মাও. আব্দুল খালেক, প্রাক্তন ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন- দৈনিক মাথাভাঙ্গার বার্তা সম্পাদক ছড়াসম্রাট আহাদ আলী মোল্লা, মিকাইল হোসেন, শমসের আলী, এফএ আলমগীর, রাজা, হারুন রাজু প্রমুখ।

হাজি মাও. ইউসুফ আলী ১৯৪২ সালে পিরোজপুর জেলা সদরের বাদোখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কামিল শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে ১৯৭২ সালে দর্শনা আলিয়া মাদরাসায় শিক্ষকতায় যোগদান করেন। নিজের মেধা ও শ্রম দিয়ে তিল তিল করে গড়ে তোলেন মাদরাসাটি। দীর্ঘ ৪২ বছর তিনি নিষ্ঠা, সততা, আন্তরিকতা ও কর্মদক্ষতার সাথে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে মাদরাসাটিকে দাখিল থেকে ফাজিল শ্রেণিতে উন্নীতকরণ তারই অবদান। ২০১৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন তিনি। এ অঞ্চলে ধর্মীয় শিক্ষার অন্যতম মাধ্যম দর্শনা ডিএস ফাজিল মাদরাসার জন্য নিবেদিত প্রাণ মাও. ইউসুফ আলীর লাশ জানাজার আগে তার প্রিয় প্রতিষ্ঠান মাদরাসা আঙিনায় আনা হয়। সেখানে অসংখ্য মানুষ তাকে শেষবারের মতো একনজর দেখেন। পরে কেরুজ মাঠে তার জানাজায় ইমামতি করেন তার বড় ছেলে বাকী বিল্লাহ। মাও. ইউসুফ আলীর মৃত্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীরা শোক প্রকাশ করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।