শততম টেস্টে স্মরণীয় জয়

 

নিরানব্বইতম টেস্টে অপ্রত্যাশিতভাবে হেরে যাওয়ার পর আমরা এক সম্পাদকীয়তে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলাম যে, বাংলাদেশ তাদের শততম টেস্টে ঘুরে দাঁড়াবে। আমাদের ক্রিকেটারদের মুখেও ছিলো একই কথা। অবশেষে আমাদের দামাল ছেলেরা সেই কথা রেখেছেন। তারা সত্যি সত্যিই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বো টেস্টে জয়লাভ করেছেন ৪ উইকেটের ব্যবধানে। এভাবে শততম ওয়ানডের পর শততম টেস্টেও অবিস্মরণীয় জয়ের দেখা পেলো বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তানের পর ইতিহাসের চতুর্থ দল হিসেবে শততম টেস্ট জিতলো বাংলাদেশ। দেশের বাইরে চতুর্থ এবং সব মিলিয়ে এটা আমাদের নবম টেস্ট জয়। এই জয়ে শ্রীলঙ্কার সাথে দুই টেস্টের সিরিজে সমতা আনলো মুশফিকুর রহিমের দল। স্মরণীয় এই জয়ে আমরা ক্রিকেটার, কোচ, ম্যানেজারসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে জানাই শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

টেস্টের পঞ্চম দিনে জয়ের জন্য বাংলাদেশের টার্গেট ছিলো ১৯১ রান। শ্রীলঙ্কা দুই উইকেট হাতে নিয়েও যেভাবে লড়াই করেছে তা সমীহ জাগানোর মতো। তাছাড়া এর চাইতেও কম রানে ভারত-পাকিস্তানের মতো শক্তিশালী দলকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলার রেকর্ড ছিলো শ্রীলঙ্কার। এখানেই আশঙ্কা ছিলো অনেকের। তবে কয়েকবার চাপে পড়লেও ভারত ও পাকিস্তানের মতো ভেঙে পড়েনি বাংলাদেশ। শততম এই জয়ে সাকিব আল হাসানের অলরাউন্ডিং নৈপুণ্য (সেঞ্চুরি ও ৬ উইকেট), মুস্তাফিজুর রহমান ও মিরাজের দুর্দান্ত বোলিং এবং মোসাদ্দেক, মুশফিক, সৌম্য ও তামিমের গুরুত্বপূর্ণ ফিফটি এই টেস্ট জয়ে পালন করেছে অনন্য ভূমিকা। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং লাইনে চালকের আসনে ছিলেন তামিম ইকবাল। দুই ইনিংসে তার মোট রান ১৩১। অর্থাৎ তাত্পর্যপূর্ণ এই জয়ের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তামিম তার জন্মদিনটিও স্মরণীয় করে রেখেছেন।

সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড ও ভারত সফরে বাংলাদেশ প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে পারেনি। কিন্তু শক্তিশালী দলগুলোর বিরুদ্ধে টেস্টেও যে তারা ভালো খেলার সামর্থ্য রাখেন, কলম্বো টেস্টে আমাদের ক্রিকেটাররা তারই স্বাক্ষর রাখলেন। এর মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাদের মাটিতে প্রথম টেস্ট জয়লাভ করলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অতীত পরিসংখ্যান বলছে, চতুর্থ ইনিংসে দুইশ রানের নিচে রান তাড়া করা টেস্টগুলোতে হয় জয় এসেছে কিংবা সেই ম্যাচ হয়েছে ড্র। তবে এবার জয়ই আমাদের সঙ্গী হয়েছে। শততম টেস্টের এই জয়ে ক্রিকেটপাগল দেশবাসী যারপরনাই আনন্দিত ও উদ্বেলিত। আমরা আশা করি, এই জয়লাভের মাধ্যমে আমাদের ক্রিকেটারদের মনোবল আরও বেড়ে যাবে। তারা অন্তত জিততে জিততে আর হারবেন না। মানসিক চাপ মোকাবেলায় আরও দৃঢ়তার পরিচয় দেবেন। টেস্টে তাদের ফিনিশিংয়েও পরিপক্বতা আসবে। শ্রীলঙ্কার সাথে পরবর্তী ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজেও আমরা তাদের সাফল্য কামনা করি।