ডাকাতি : অজুহাতে দায় এড়ানোর চেয়ে আশু পদক্ষেপ প্রত্যাশী

 

চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের কয়েকটি প্রবেশদ্বারের একটির নাম ঘোড়ামারা ব্রিজ। চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা সড়কেরর নবগঙ্গাখালে কবে কখন কীভাবে ঘোড়া মরার কারণে স্থানটির নাম ঘোড়ামারা হয় তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে না পারলেও জনশ্রুতি রয়েছে, ওই খালের স্রোত এতোটাই তীব্র ছিলো যে, গাড়ি নিয়ে ঘোড়া পার করা প্রায় অসম্ভব হতো। কোনো গাড়োয়ান ঝুঁকি নিলে তাকে ঘোড়াটাই হারাতে হতো বলেই স্থানটির নাম হয় ঘোড়ামারা। পরবর্তীতে সেখানে যখন ব্রিজ নির্মাণ করা হয় তখন তার নাম ঘোড়ামারা ব্রিজ হওয়ায় প্রথাসিদ্ধ। হয়েছেও তাই। ঘোড়ামারা নামের মধ্য যেমন গা ছমছম করা একটা বিষয় লুকিয়ে রয়েছে, তেমনই ওই এলাকাটা দীর্ঘদিন ধরেই অপরাধীদের অভয়ারণ্য হিসেবেও চিহ্নিত হয়ে উঠেছে। ফুটে উঠেছে পুলিশের পুনঃপুনঃ ব্যর্থতাও।

সড়কটির চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের ঘোড়ামারা ব্রিজ ও তার নিকটস্থ এলাকায় ছিনতাই, রাহাজানি, ডাকাতি  যেন লেগেই রয়েছে। ওই সড়কের ঘোড়ামারা ব্রিজ ও তার অদূরবর্তী এলাকায় ডাকাতি করতে গিয়ে পুলিশের প্রতিরোধের মুখে ডাকাত নিহত হওয়ার যেমন উদাহরণ রয়েছে, তেমনই নিকটাত্মীয়র মৃতদেহ দেখে মাঝরাতে ফেরার পথে ডাকাতদলের কবলে পড়া শ্যালোইঞ্জিনচালিত কমিনযাত্রীদের মধ্যে নারীদের নামিয়ে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটির চুয়াডাঙ্গা সদর থানাভ’ক্ত এলাকা নিরাপদ করার লক্ষে সন্ধ্যার পর পরই পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এরপরও মাঝে মাঝেই ঘটে সড়কে ডাকাতদল ওত পতে সুযোগ বুঝে ডাকাত করে। গত রোববার রাত ৯টার পরপরই সড়কের ধারের গাছ কেটে সড়কের ওপর ফেলে একটি ওষুধ কোম্পানির কাভার্ডভ্যান ও তিনটি নৈশকোচে ডাকাতি করে। ডাকাতদল একটি নৈশকোচের চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারসহ কয়েকজনকে ধারালো অস্ত্রদিয়ে কুপিয়ে আহত করে। নগদ প্রায় ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে গেছে। ডাকাতির শিকার কয়েক যাত্রীর অভিযোগ, ডাকাতদল যখন ডাকাতি করছে তখন পুলিশ সেখানে এলো বাঁশি বাজিয়ে। একটু ছদ্মবেশে পুলিশের গাড়ি সেখানে পৌঁছুলে ডাকাতদলের আধিকাংশ সদস্য হাতেনাতেই ধরা সম্ভব হতো। অথচ হলো উল্টো। পুলিশের বাঁশি শুনে ডাকাতদল কি সেখানে আর থাকে? নিরাপদে নির্বিঘ্নেই তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে পেরেছে। ফলে পুলিশকে পড়তে হয়েছে বিরূপ সমালোচনার মধ্যে।

অবশ্যই চুয়াডাঙ্গা জেলা দেশের অবিচ্ছিন্ন অংশ। জেলায় পুলিশ আছে। পুলিশের গোয়েন্দা রয়েছে, রয়েছে বহু গোপন সংবাদদাতা বা সোর্স। এরপরও ডাকাতদল যে ওখানে ডাকাতির ছক আকছে তা ডাকাতির আগে টের পাওয়া গেলো না কেন? নিশ্চয় কর্তব্যরত গোয়েন্দাদের মধ্যে এবং গোপন তথ্যদাতা বা সোর্সের দক্ষতায় ঘাটতি রয়েছে। অপ্রতুলতা? বাস্তবতার আলোকে শক্ত যুক্তি বটে। তারপরও অপরাধমূলক ঘটনার পূর্বেই অপরাধীকে ধরতে পারার শর্তেই তো গোয়েন্দা, গোপন সংবাদদাতা নিয়োগ করা হয়েছে। সে না হয় আগাম সংবাদ নেয়ার মতো লোক না হয় কমই, কিন্তু প্রতিরাতেই যেখনে পুলিশ থাকে সেখানে ডাকাতদল দীর্ঘসময় ধরে তাণ্ডব চালালো কীভাবে, কোন সাহসে? সঙ্গত প্রশ্ন, সরষের মধ্যে ভুত নেই তো? অজুহাতে আড়ালের বদলে জনস্বার্থে খতিয়ে দেখা ভালো।