আত্মহত্যার অনুমতি চাওয়া তোফাজ্জলের সপরিবারে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

 

স্টাফ রিপোর্টার: মেহেরপুরে দুই পুত্র ও নাতির আত্মহননের অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদনকারী তোফাজ্জল হোসেন নতুন জীবনের স্বপ্ন নিয়ে চিকিৎসা করাতে সপরিবারে ভারতে যাচ্ছেন। চীন, বাংলাদেশ ও ভারতের শুভাকাঙ্ক্ষীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগামী ২ এপ্রিল পরিবারের ছয় সদস্য নিয়ে তিনি চিকিৎসা করাতে মুম্বাই যাচ্ছেন। নতুন আশা জাগানো এই প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়ে তোফাজ্জল বলেন, আমি না পেরে এই আবেদন করেছিলাম। নিজের জীবন কেই-বা শেষ করে দিতে চায়। আত্মহত্যার অনুমতি চাওয়াটা ছিলো আমার অভিমানের বহিঃপ্রকাশ। এখন শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতায় ভালোয় ভালোয় চিকিৎসা শেষ করে ফিরতে চাই।

তোফাজ্জলের দুই সন্তান ও এক নাতি ডুশিনি মাসকুলার ডিসট্রফি নামে এক দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। রোগটির লক্ষণ সম্পর্কে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এসএম আলমগীর বলেন, এ রোগে আক্রান্তদের মাংসপেশি গ্রো করে না। যে কারণে একেক সময় শরীরের একেকটা অঙ্গ দুর্বল হতে শুরু করে। মাংসপেশি ডিসট্রফি হয়। পায়ে হলে হাঁটতে পারে না, শক্ত হয়ে যায়, হাতে হলে কিছু ধরতে পারে না।’ পরিবারে স্ত্রীও নানা রোগে আক্রান্ত বলে তোফাজ্জল জানান, ‘তাদের চিকিৎসায় স্থাবর- অস্থাবর সম্পত্তি হারিয়ে নিঃস্ব আমি। আমিতো মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের কাছে লেখা চিঠিতে স্বজনদের চিকিৎসার ভার গ্রহণ, অথবা তাদের মৃত্যুর অনুমতি চেয়েছিলাম। সেটা অন্যদের নজরে আসায় এখন আমি আমার দোকান ছাড়িয়ে নিতে পেরেছি। কিভাবে সম্ভব হলো পুরো বিষয়টা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আত্মহত্যার অনুমতি চাওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর আমাকে বিভিন্নজনে সহায়তা করার কথা বলেছেন। তেমনই বিদেশি পত্রিকায় প্রকাশিত হলে চীনা চিকিৎসকরা আগ্রহী হয়ে চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করেন। তিনি বলেন, বিদেশি পত্রিকায় প্রকাশের কারণে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নূর খান এর সাথে সম্পৃক্ত হন এবং এরপর থেকে একে একে সব ব্যবস্থা হয়ে যায়। তারা কেউ নগদ টাকা, কেউ প্লেনের টিকিটের ব্যবস্থা, কেউবা ভিসার ব্যবস্থা করে দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক নূর খান বলেন, ডিসির কাছে আত্মহননের অনুমতি চেয়ে আবেদন করার পর গণমাধ্যমের অনেকেই আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, মানবাধিকারকর্মী হিসেবে আমি বিষয়টি কিভাবে ব্যাখ্যা করবো। এরপর আমার একটি মন্তব্যসহ এএফপি পরিবেশিত একটি প্রতিবেদন গার্ডিয়ানে প্রকাশিত হয়। সেই নিউজের সূত্র ধরে চীনা একটি গ্রুপ ও মুম্বাইয়ের একদল ডাক্তার আমার সাথে যোগাযোগ করেন এবং ফ্রি চিকিৎসা দেয়ার সব দায়িত্ব গ্রহণে তাদের আগ্রহের কথা জানান। কারা কী ধরনের সহায়তা দিলো প্রশ্নে তিনি বলেন, চীনারা ইতোমধ্যে নগদ টাকা পাঠিয়েছে। ইন্ডিয়া এয়ার লাইন্স পরিবারের ছয় জনকেই আসা-যাওয়ার ফ্রি টিকিট দিচ্ছে। ইতোমধ্যে ভিসাও হয়েছে। আগামী ২ এপ্রিল তারা ভারত যাচ্ছে। সুস্থ হয়ে ফিরে আসুক এখন কেবল সেই চাওয়া। নূর খান বলেন, তাদের যাতায়াতের কিছু ডোমেস্টিক খরচ আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ব্যবস্থা করে দিয়েছি।