সমাজের ওপর দায় চাপানোর প্রবণতা রুখতে হবে

 

ধরেই নেয়া হলো, মোবাইলফোনে কোনো নারী প্রবাসীর স্ত্রী সেজে ভাবী হয়ে যুবককে ডাকেননি, যুবক এক যুবতীকে নিয়ে লিচু বাগানে খুব ঘনিষ্ঠভাবে বসে অথবা আরও কাছাকাছি ছিলো। তাই বলে যুবক-যুবতীকে ধরতে হবে, মারতে হবে? অন্যের স্বাধীনতা খর্বের অধিকার তোমার কে দিয়েছে? অন্যের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ অবশ্যই গুরুতর অন্যায়। আইনত দণ্ডনীয়ও।

সংবাদপত্রে শিরোনাম হওয়ার পর অভিযুক্তদের তরফে ঘটনাকে গণপিটুনি বলে দাবি করা অস্বাভাবিক নয়। তাই বলে ঘটনাকে খাটো করে দেখা উচিত হবে না। কেননা, গত সোমবার চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকা তালতলা পশুহাটপাড়ার একটি বাড়িতে বহিরাগত এক যুবককে আটকে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, চাওয়া হয়েছে টাকা, তা স্থানীয়দের দেয়া বর্ণনা মতে রোমহর্ষক। অবশ্যই স্বপ্রণোদিত হয়ে পুলিশের আইনানুগগ ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এলাকার আতঙ্কিত জনগণ তেমনটিই আশা করছে। যদিও আমজনতার কোন আশা কতোটুকু পূরণ হয় তা খতিয়ে দেখলে আশা করাই ছেড়ে দিতো শান্তিপ্রিয় স্বস্তিকামী মানুষ।

মোবাইলফোনেই হোক আর রাস্তাঘাটে চোখা-চোখিতেই হোক হুট করে মজলে বিপদের শঙ্কাই এখন বেশি। সে নারীই হোক আর পুরুষই হোক। মোবাইলফোনে নানা ছলনায় ডেকে নিয়ে বন্দি করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা নতুন নয়। মাঝে মাঝেই সংবাদপত্রের শিরোনামও হয়। নারী টোপই শুধু নয়, ফেসবুকে এখন উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত ভালো বেতনের সম্মানজনক চাকরিজীবী অবিবাহিত সেজেও হরহামেশাই প্রতারণা করা হচ্ছে। ফলে বাড়তি সতর্কতার বিকল্প নেই। তাই বলে ফাঁদ পাতা চক্রের মুখোশ খোলার পরও, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না? অপরাধ দেখেও না দেখা মানে অপরাধীর উৎসাহিত করা।

রাস্তার পাশে, নদ-নদীর ধারে, পুকুরপাড়ে বা বাগানে বসে যুবক যুবতী জুটি তারা স্বামী-স্ত্রীই হোক, সহপাঠী কিংবা প্রেমিক-প্রেমিকাই হোক, বসে গল্প করলেই কি সেটা অসামাজিক হয়ে যায়? যে সমাজে চিত্তবিনোদনের নিরাপদ সুন্দর পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি, সেই সমাজের প্রজন্ম কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? যা সহজাত তা কি অসামাজিক বলে কোনো সমাজ বন্ধ করতে পেরেছে? পারেনি। অথচ দীর্ঘদিন ধরে চুয়াডাঙ্গায় এক শ্রেণির বখাটে অর্থলিপ্সুরা একটু নিরিবিলিতে কোনো জুটি পেলেই অমনি আপত্তিকর অভিযোগ তুলে হাতিয়ে নিচ্ছে কাড়ি কাড়ি টাকা। নির্যাতনের উদাহরণও দিন দিন বাড়ছে।

আপত্তিকর অবস্থায় কোনো জুটি ধরার পরও নির্যাতনের অধিকার দেশের প্রচলিত আইন দেয়নি। ধরাটাও সর্বক্ষেত্রে আইন সমর্থন করে কি? তেমন কেউ ঘুরে দাঁড়ায় না বলেই সমাজের ওপর দায় চাপানোর প্রবণতায় পার পেয়ে যায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্ররোচিত উৎসুক ও উশৃঙ্খলের দল। তা না হলে কি একজনকে একটি বাড়িতে বন্দি করে নির্যাতনের পর বলতে পারে, আপত্তিকর অবস্থায় ধরে জনগণ পিটিয়েছে?