চুয়াডাঙ্গার বাবু খানসহ একাধিক পদ ছাড়তে ১৯ নেতাকে চিঠি

 

স্টাফ রিপোর্টার: একাধিক পদধারীদের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড। শেষ সুযোগ হিসেবে একাধিক পদধারী ১৯ নেতাকে চিঠি দেয়া হয়েছে। তাদের যেকোনো একটি পদ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সাথে বাকি পদ থেকে পদত্যাগ করে দলের কেন্দ্রীয় দফতরে চিঠি পাঠাতে বলা হয়েছে। এজন্য ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। যারা এ সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে নতুন করে জেলা বা মহানগর কমিটিতে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যারা দায়িত্ব পেয়েছেন তাদের কেন্দ্রীয় পদ শূণ্য ঘোষণা করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, একাধিক পদধারীদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার পরই নির্বাহী কমিটির শূন্যপদ পূরণ করা হবে। এ প্রক্রিয়ায় প্রায় অর্ধ-শত পদ ফাঁকা হবে। এসব পদে ছাত্রদল এবং যুবদলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সাবেক গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের স্থান দিতে দলের চেয়ারপারসন নির্দেশ দিয়েছেন। সে লক্ষ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কাজ করে যাচ্ছেন। চেয়ারপারসনের নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা একটি তালিকা প্রস্তুত করছেন বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে বিএনপির তৃণমূল পুনর্গঠনের প্রধান সমন্বয়ক মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, দ্রুতই নির্বাহী কমিটির শূন্যপদে নিয়োগ দেয়া হবে। যারা দলের একাধিক পদে রয়েছেন তাদের চিঠি দেয়া হয়েছে। ওইসব নেতার সিদ্ধান্ত জানার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। একই সাথে যারা জেলা বা মহানগর কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে তাদের পদে নতুনদের দায়িত্ব দেয়া হবে। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটি ও জেলা বা মহানগর কমিটিতে ৬১ নেতা একাধিক পদে ছিলেন। একাধিক পদ ছাড়তে গত বছরের ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত মৌখিকভাবে নেতাদের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছিল। সর্বশেষ ৪২ নেতা একটি রেখে বাকি পদ ছেড়ে দেন। কিন্তু ১৯ নেতা তাদের কোনো মতামত কেন্দ্রকে জানাননি।

দফতর সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী মঙ্গলবার দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত একটি চিঠি সংশ্লিষ্ট নেতাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। যাদের চিঠি দেয়া হয়েছে তারা হলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও পটুয়াখালী জেলা সভাপতি এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ফরিদপুর জেলার সভাপতি শাহাজাদা মিয়া, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও লক্ষ্মীপুর জেলার সভাপতি আবুল খায়ের ভূঁইয়া, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নাছিরনগর উপজেলার সভাপতি কাজী আকরামুজ্জামান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঘাটাইল উপজেলা সভাপতি লুৎফর রহমান আজাদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও হালুয়াঘাট উপজেলার সভাপতি আফজাল এইচ খান, যুগ্ম-মহাসচিব ও বরিশাল মহানগর সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ার, যুগ্ম মহাসচিব ও নরসিংদী জেলার সভাপতি খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলার সভাপতি ফজলুল হক মিলন, সাংগঠনিক সম্পাদক ও লালমনিরহাট জেলার সভাপতি আসাদুল হাবিব দুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক ও নাটোর জেলার সভাপতি রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহ-কর্মসংস্থান সম্পাদক ও খাগড়াছড়ি জেলার সভাপতি ওয়াদুদ ভূঁইয়া, সমবায় সম্পাদক ও হবিগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক জিকে গউস, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক ও কলাপাড়া উপজেলা সভাপতি এবিএম মোশাররফ হোসেন, পল্লী উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক ও নাগরপুর উপজেলার সভাপতি গৌতম চক্রবর্তী, শিশুবিষয়ক সম্পাদক ও মির্জাপুর উপজেলার সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, সহ-জলবায়ুবিষয়ক সম্পাদক ও মেলান্দাহ উপজেলার সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান। উপ-কোষাধ্যক্ষ ও চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রথম যুগ্ম-আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান বাবু।

দলীয়সূত্রে জানা যায়, দলের হাইকমান্ড মনে করে, সামনে দলের জন্য কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। এ অবস্থায় একাধিক পদ আঁকড়ে থাকার সুযোগ নেই। যারা ৫ এপ্রিলের মধ্যে এক পদ রেখে বাকি পদ থেকে পদত্যাগ না করবেন তাদের ব্যাপারে সাংগঠনিক রীতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত দেয়া হবে। সিন্ডিকেট ভেঙে নতুন নেতৃত্ব তৈরির সুযোগ করে দিতে গত কাউন্সিলে ‘এক নেতার এক পদ’ বিধান রেখে বিএনপির গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন আনা হয়। দলের এ সিদ্ধান্তকে প্রায় সব নেতাকর্মীই স্বাগত জানান। কিন্তু ‘রাজত্ব হারানো’র শংকায় পড়েন দীর্ঘকাল বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বজায় রাখা কিছু নেতা। তারা প্রত্যাশা করেছিলেন শেষ পর্যন্ত বিশেষ বিবেচনায় কেন্দ্রে ও তৃণমূলে তাদের ‘রাজত্ব’ ধরে রাখতে পারবেন। এজন্য একাধিক পদ ছাড়তে প্রথম থেকেই গড়িমসি শুরু করেন তারা। জানতে চাইলে মজিবর রহমান সরোয়ার যুগান্তরকে বলেন, আমি কেন্দ্র এবং মহানগর দুই জায়গাতেই থাকতে চাই। দলের হাইকমান্ড যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটা আমি মেনে নেব।