চুয়াডাঙ্গার বেগমপুরে পুলিশ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে মাদরাসা ছাত্রীর শ্লীনতাহানির অভিযোগ

বেগমপুর প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা সদরের বেগমপুর ক্যাম্পের এক পুলিশ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে মাদরাসা ছাত্রীকে প্রকাশ্যে শ্লীনতাহানির অভিযোগ উঠেছে। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য শাহবুরকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে পুলিশ লাইনে। মাদরাসায় একের পর এক ঘটনা ঘটে চললেও কর্ণপাত না করায় মাদরাসা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও অভিভাবক মহলে লক্ষ করা গেছে চাঁপাক্ষোভ। গতকাল রোববার ছিলো মহান স্বাধীনতা দিবস। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের বেগমপুর দাখিল মাদরাসায় পালিত হচ্ছিলো মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান।

অভিযোগে উঠেছে, অনুষ্ঠান চলাকালীন বেলা ১১টার দিকে শাদা পোশাকে বেগমপুর ক্যাম্প পুলিশের ইনচার্জ এসআই মাসনুন আলম, এএসআই আ. হাকিম, এএসআই জুপিটার আলী, এপিসি আমিন, কনস্টেবল শাহাবুর রহমানসহ ৬ জন ৩ মোটরসাইকেলে করে মাদরাসা পরিদর্শনে যান। এ সময় মাদরাসার অধ্যক্ষ আরেফ উল্লাহ পুলিশ সদস্যদের অফিস কক্ষে বসার ব্যবস্থা করেন। অফিসাররা অফিসে থাকার সুযোগে কনস্টেবল শাহাবুর রহমান (ক:নং ৮৪৭) মাদরাসার ছাত্রীদের সাথে গায়ে পেতে আলাপ শুরু করেন। দশম শ্রেণির কক্ষে ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে একা পেয়ে কনস্টেবল শাহাবুর রহমান তার নিকট মোবাইল নাম্বার চান। একপর্যায় মাদরাসা ছাত্রীর কানের সাথে মুখলাগিয়ে কথা বলেন। যা অনেকেরই চোখে পড়ে। পুলিশ সদস্য হওয়ায় সে সময় কেউ ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায়নি। পুলিশ সদস্যরা মাদরাসা থেকে চলে গেলে বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কানাঘোষা চলতে থাকে। শিক্ষার্থীরা মোবাইলে তাদের অভিভাবকের বিষয়টি অবহিত করে। মুহূর্তের মধ্যে দল বেঁধে অভিভাবকরা মাদরাসায় এসে ভিড় জমাতে থাকে। এরই মাধ্যে বেগমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলী হোসেন জোয়ার্দ্দার অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে কয়েকজন ইউপি সদস্য সাথে করে মাদরাসায় হাজির হন। চেয়ারম্যান ঘটনা অবহিত হয়ে বেগমপুর ক্যাম্প পুলিশের আইসিকে জানান। এসআই মাসনুন প্রথমবার যাদের সাথে করে মাদরাসায় গিয়েছিলেন তাদেরকে সাথে করে পুনরায় মাদরাসায় আসেন। অভিভাবক, মাদরাসা কর্তৃপক্ষ, জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের উপস্থিতিতে ছাত্রীরা কনস্টেবল শাহাবুর রহমানের আচরণের বর্ণনা দেন। কনেস্টেবল শাহাবুর তার দোষ স্বীকার করে উপস্থিতিদের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেন। বিষয়টি তাৎক্ষণিক পুলিশের জেলা পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালে অভিযুক্ত কনস্টেবল শাহাবুর রহমানকে বেগমপুর ক্যাম্প থেকে প্রত্যাহার করে নেন পুলিশ লাইনে।

এদিকে ঘটনার বিষয়ে জানতে ওই মাদরাসা ছাত্রীদের বাড়িতে গেলে অনেক অভিভাবক অভিযোগের সুরে বলেন, বিষয়টি কর্কৃপক্ষকে অবহিত করা হলেও তিনি কর্ণপাত করেননি। একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে মাদরাসাটিতে। এখানে আমাদের সন্তানেরা নিরাপদ না। তাদের লেখাপড়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদেরকে নতুন করে ভাবতে হবে।

এব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান আলী হোসেন এবং মাদরাসার অধ্যক্ষ আরেফউল্লাহ বলেন, একজন আইনের লোকের সদস্য হয়ে এমনটি করা ঠিক হয়নি। তারপরও বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে। বাকি দায়িত্ব পুলিশ কর্তৃপক্ষের।

এ বিষয়ে বেগমপুর ক্যাম্প পুলিশের ইনচার্জ এসআই মাসনুন বলেন, অভিযুক্ত কনস্টেবল শাহাবুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রতিবেদনসহ চুয়াডাঙ্গায় পাঠিয়ে দিয়েছি।

অভিযুক্ত কনস্টেবল শাহাবুর রহমান জানান, মাইকের শব্দে কথা বোঝাযাচ্ছিলো না তাই আমি কানের কাছে মুখ নিয়ে কথা বলেছি। এছাড়া অন্য কিছু না।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি তোজাম্মেল হোসেন বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অত পরিষ্কার না। তবে ওই কনস্টেবলকে সিসি দিয়ে পুলিশ লাইনে পাঠানো হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, কনস্টেবল শাহাবুর রহমানের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার ছাবদালপুর গ্রামে।