আলমডাঙ্গার খাসকররায় জিন তাড়ানোর নামে কবিরাজের নির্যাতন : গৃহবধুর মৃত্যু

 

স্টাফ রিপোর্টার: আলমডাঙ্গার খাসকররা গ্রামে জিন তাড়ানোর নামে কবিরাজের নির্যাতনে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে পার্শ্ববর্তী নিশ্চিন্দীপুর গ্রামের কথিত কবিরাজ স্বপন ওই গৃহবধূর ওপর আধাঘণ্টা ধরে নির্যাতন করেন। গৃহবধূ বেহুঁশ হয়ে পড়লে কবিরাজ গাঢাকা দেন। গৃহবধূকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় এলাকাবাসী ওই কবিরাজ স্বপনের ওপর ফুঁসে উঠেছেন। তারা নির্যাতনকারী কবিরাজের বিচার দাবি করেছেন।

এলাকাসূত্রে জানা গেছে, খাসকররা গ্রামের পশ্চিমপাড়ার ছাত্তার আলীর স্ত্রী তিন সন্তানের জননী জোছনা বেগম মাস ছয়েক আগে জন্ডিসে আক্রান্ত হন। ওই সময় এন্টিবায়োটিক সেবনের ফলে তার মাথার চুল উঠে যায়। এরপর থেকেই স্বামীসহ তার পরিবারের লোকজন জোছনা বেগমকে মানসিকভাবে নির্যাতন চালিয়ে আসছিলো। গত বৃহস্পতিবার জোছনা বেগম সামান্য অসুস্থ হন। তার গায়ে জিন ভর করেছে বলে প্রচার করতে থাকে স্বামী ছাত্তারসহ পরিবারের লোকজন। ওই দিন রাত ৯টার দিকে পার্শ্ববর্তী নিশ্চিন্দীপুরের হুদা আলীর ছেলে কথিত কবিরাজ যুবক স্বপনকে ডেকে আনা হয়। সে জিন তাড়ানোর নামে জোছনা বেগমের ওপর নির্যাতন চালাতে থাকে। প্রতিবেশীরা জানান, কবিরাজ স্বপন এসে গামছা দিয়ে জোছনার মুখ বাঁধেন। এরপর চড় থাপ্পড় মারেন তিনি। পরে কাঁচা কঞ্চি দিয়ে বেদম পিটিয়ে আহত করেন তিনি। পরে ঝালের গুঁড়ো গুলিয়ে গৃহবধূর নাকে মুখে ঢালতে থাকেন। গৃহবধূর চিৎকার চেঁচামেচি আর্তনাদ শুনেও কেউ আমল দেয়নি। স্বামীসহ পরিবারের লোকজনের সামনে এভাবে আধাঘণ্টা ধরে নির্যাতন চলে জোছনার ওপর। এরপর পানিভর্তি একটি ঘড়া দাঁতে করে নিয়ে বিদায় নেয়ার জন্য জোছনাকে বলে। জোছনা তা না করলে ঘড়ার ওপর মুখ খুশে ধরেন তিনি। এতে জোছনা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। সংজ্ঞা  হারিয়ে পড়ে যান জোছনা। অবস্থা বেগতিক বুঝে কবিরাজ স্বপন সটকে পড়েন। যাওয়ার সময় তিনি বলে যান জোছনাকে প্যাঁচট জিনে ধরেছে। সহজে যাবে না। পরবর্তীতে মুমূর্ষু অবস্থায় জোছনাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা শংকটাপন্ন দেখে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সন্ধ্যায় জোছনা বেগম মারা যান।গ্রামবাসী নির্যাতনের বিষয়ে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআ ই হাসানুর রহমানকে জানান।