বুলবুল ও গউছের বরখাস্তের আদেশও স্থগিত হাইকোর্টে

 

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে দ্বিতীয় এবং হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জি কে গউছকে তৃতীয় দফায় সাময়িক বরখাস্তের আদেশ হাইকোর্ট স্থগিত করে দিয়েছেন। বুলবুল ও গউছের দুটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি আতাউর রহমান খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেয়। তাদের সাময়িক বরখাস্তের ওই আদেশ কেন ‘আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত হবে না’- তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছেন আদালত। স্থানীয় সরকার সচিব, উপসচিব; রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনার ও পুলিশ সুপার; রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসককে এই রুলের জবাব দিতে হবে। হাইকোর্টের একই বেঞ্চ আগের দিন সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বরখাস্তের আদেশও স্থগিত করেছিলেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় একটি নোট দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।

রাজশাহী নগর বিএনপি সভাপতি বুলবুল বিএনপির কেন্দ্রীয় সমবায়বিষয়ক সম্পাদক জিকে গউছও মঙ্গলবার শুনানির সময় হাইকোর্টে উপস্থিত ছিলেন। তাদের পক্ষে শুনানি করেন যথাক্রমে আমিনুল হক হেলাল ও খন্দকার মাহবুব হোসেন। আদেশের পর দুই আইনজীবী বলেন, তাদের মক্কেলদের মেয়র পদে দায়িত্ব পালনে আইনগত কোনা বাধা নেই। বিএনপি নেতা বুলবুল উচ্চ আদালতের ছাড়পত্র নিয়ে রোববার মেয়রের দায়িত্বে ফেরার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তাকে ফের বরখাস্ত করে সরকার। হবিগঞ্জের গউছকেও একই দিনে বরখাস্ত করা হয়। তিনি আদালতের রায় পক্ষে পেয়ে দুই সপ্তাহ আগে মেয়রের দায়িত্বে ফিরেছিলেন।

বরখাস্তের আদেশে বলা হয়, ফৌজদারি মামলার অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হওয়ায় স্থানীয় সরকার (সিটি কপোরেশন) আইন অনুযায়ী তাদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় বুলবুলের বিরুদ্ধে নাশকতার ওই মামলা দায়ের হয়েছিল ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে পুলিশ অভিযোগপত্র দেয়ার পর রাজশাহীর মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল তা আমলে নেয়। আর সুনামগঞ্জে ২০০৪ সালের ২১ জুন আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভায় বোমা হামলার ঘটনায় করা এক মামলায় গত বছর হবিগঞ্জের গউছকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে ওই মামলায় পুলিশ সম্পূরক অভিযোগপত্র দিলে তাতে গউছের নাম যোগ করা হয়। গত ২২ মার্চ সুনামগঞ্জের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ওই অভিযোগপত্র গৃহীত হয়।

বিএনপি নেতা বুলবুল ২০১৩ সালের নির্বাচনে রাজশাহীর মেয়র নির্বাচিত হন। নাশকতার চার মামলায় অভিযোগপত্রে নাম এলে ২০১৫ সালের ৭ মে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। গত বছর ১০ মার্চ উচ্চ আদালত তার বরখাস্ত আদেশ অবৈধ ঘোষণা করে। এরপর বুলবুল রোববার সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে গিয়ে দায়িত্ব বুঝে নেন। তিনি অফিসে থাকতেই নতুন করে বরখাস্তের আদেশ নগরভবনে পৌঁছায়।

এদিকে শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায় ২০১৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর হবিগঞ্জের একটি আদালত পৌর মেয়র জি কে গউছকে কারাগারে পাঠায়। এরপর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। কারাগারে থেকেই ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর পৌর নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হন গউছ। ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি প্যারোলে মুক্ত হয়ে তিনি শপথ নেন। ওই বছরের ২০ মার্চ তাকে আবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরপর চলতি বছর ৪ জানুয়ারি জামিনে মুক্ত হয়ে আবার আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেন গউছ। হাইকোর্ট গত ২৩ জানুয়ারি তার বরখাস্তের আদেশ স্থগিত করে; আপিল বিভাগেও তা বহাল থাকে। এরপর ২৩ মার্চ তিনি হবিগঞ্জ পৌরসভায় ফিরে দায়িত্ব বুঝে নিলেও তার ১১ দিনের মাথায় আবারও বরখাস্তের আদেশ আসে।