ঝিনাইদহে এক রাতেই ৪ জনকে তুলে নেয়ার অভিযোগ : পুলিশের অস্বীকার

 

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহে পুলিশ পরিচয়ে শাদা পোশাকের লোকজন চারজনকে তুলে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। তারা এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। এছাড়া আরো একজনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, তারা এ বিষয়ে কিছু জানে না। নিখোঁজ ব্যক্তিরা হচ্ছেন- ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কাশিমনগর গ্রামের নুরু গাজীর ছেলে ইব্রাহিম গাজী, মৃত ছানারুদ্দিনের ছেলে রেজাউল ইসলাম, কোটচাঁদপুর উপজেলার জালালপুর গ্রামের মর্তেজ বিশ্বাসের ছেলে ইমরুল হোসেন ও বলাবাড়িয়া গ্রামের মোবারক বিশ্বাসের ছেলে আলম। এছাড়া গত বুধবার সকালে কোটচাঁদপুর পৌর কলেজের অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবিরকে শাদা পোশাকধারীরা তুলে নিয়ে যায় অভিযোগ করেছে পরিবার। পরে গত শনিবার গভীর রাতে তাকে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ের সামনে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ জানান, গতকাল সোমবার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে বলেন, এ ধরনের খবর তারাও শুনেছেন। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে কাউকে তুলে আনার কথাটি ঠিক নয়। পুলিশের পক্ষ থেকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের খোঁজ করা হচ্ছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

নিখোঁজ ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কাশিমনগর গ্রামের রেজাউল ইসলামের ছেলে রিপন হোসেন গতকাল জানান, গত ২২ মার্চ রাত দেড়টার দিকে আট-নয়জনের একটি দল তাদের বাড়িতে যায়। তারা পুলিশ পরিচয়ে শাদা পোশাকে তার পিতাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে গেছে। এ সময় আগন্তুকরা পরিবারের সদস্যদের জানান, এক আসামির বাড়ি চেনানোর জন্য রেজাউলকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর তাকে বাসায় দিয়ে যাওয়া হবে। সেই থেকে রেজাউলের সন্ধান পাওয়া যায়নি বলে জানান ছেলে রিপন। তিনি আরও জানান, কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে রাখা হয় তার বাবাকে। স্বাধীনতা দিবসেও রেজাউলকে সেখানে দেখতে পেয়েছেন। এখন আর কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।

রিপন আরো বলেন, পরে তারা শুনেছেন একই রাতে তাদের গ্রামের ইব্রাহিম গাজীকেও তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। নিখোঁজ ইমরুল হোসেনের স্ত্রী চম্পা খাতুন জানান, ২২ মার্চ রাত ১২টার পর পুলিশ পরিচয়ে শাদা পোশাকে কয়েকজন ব্যক্তি বাড়ির দরজা খুলতে বলেন। দরজা খোলার পর ইমরুলকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর থেকে তার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। কোটচাঁদপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে পুলিশ নেয়নি বলে অভিযোগ করেন চম্পা খাতুন। এছাড়াও কোটচাঁদপুরের বলাবাড়িয়া গ্রামের আলম খানকে নিজ বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বলাবাড়িয়া গ্রামের ইউপি সদস্য মশিয়ার রহমান বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি এবং পরিবারের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে। আলম খান এখনো নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানান তিনি।

নিখোঁজ আলম খানের ছেলে জুবায়ের খান বলেন, তার বাবাকে গত ২৮ মার্চ (মঙ্গলবার) রাত ২টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ পরিচয় দেয়া ৮-১০ জন। এরপর থেকে তার বাবার কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। কোটচাঁদপুর পৌর কলেজের শিক্ষক তাজুল ইসলাম তাজ জানান, গত বুধবার (২৯ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একটি সাদা মাইক্রোবাস কলেজের পাশে এসে দাঁড়ায়। বাস থেকে নামেন শাদা পোশাকধারী অস্ত্রধারী কয়েক ব্যক্তি। তারা অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবিরকে ডাকেন। অধ্যক্ষ মাইক্রোবাসের কাছে যাওয়ার সাথে সাথেই তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরের দিন গভীর রাতে ঝিনাইদহ ডিবি পুলিশ কার্যালয়ের কাছে অধ্যক্ষকে ছেড়ে দেয়া হয় বলে জানান তার চাচাতো ভাই মোফাজ্জেল হোসেন। গতকাল দুপুরে তিনি সাংবাদিকদের আরো জানান, তার ভাইকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। তিনি শারীরিকভাবে বেশ অসুস্থ। এখনও তিনি ঘুমাচ্ছেন। কথা বলতে পারছেন না। এছাড়া গত ২৪ মার্চ (শুক্রবার) রাতে কোটচাঁদপুর উপজেলা চাঁদপাড়া গ্রামের আনারুল ইসলাম মুকুলকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া বলে অভিযোগ করেন তার চাচা সিরাজুল ইসলাম। তিনি আরো জানান, পরে ৩০ মার্চ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি মামলায় তাকে আটক দেখানো হয়।