গাংনীর ৫ ইটভাটায় সন্ত্রাসীদের হুমকি : শ্রমিকদের মারধর

‘জোনো যুদ্ধা’ পরিচয় দিয়ে ইটভাটা মালিকদের যোগাযোগের জন্য চিরকুটে মোবাইল নম্বর

 

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলায় সন্ত্রাসীদের হুমকির মুখে ৫ ইটভাটায় ইট পোড়ানো কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। চাঁদার দাবিতে মঙ্গলবার দিনগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে সন্ত্রাসীরা ওই ইটভাটাগুলোতে হামলা চালায়। এসময় কয়েকজন শ্রমিক আহত হন। দাবিকৃত চাঁদা না দেয়া পর্যন্ত ইট পোড়ানো বন্ধে শ্রমিকদের প্রাণনাশের হুমকি দেয় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। আহত শ্রমিকদের মধ্যে এসএবি ইটভাটার জিয়াউর রহমান (৩৭) ও বাকের আলীকে (৪৬) গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

আহত শ্রমিক ও ইটভাটা মালিকসূত্রে জানা গেছে, রাত ৩টার দিকে গাংনী থানা-ধানখোলা সড়কের ধারে অবস্থিত পান্না ব্রিক্সের দুটি, দোয়েল, আস্থা ও হাড়িয়াদহ সড়কে অবস্থিত এসএবি বিক্সসে হানা দেয় সন্ত্রাসীরা। এসময় পোড়াই শ্রমিকদের বেধড়ক মারপিঠ করে তাদের ব্যবহৃত ১২টি মোবাইলফোন কেড়ে নেয়। যাওয়ার আগে দোয়েল বিক্সসের শ্রমিক তরিকুল ইসলামকে তুলে নিয়ে যায়। পরে অবশ্য তাকে ছেড়ে দেয় সন্ত্রাসীরা। খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশ।

ওই রাতে পুলিশের টহল দল নেতা জানান, ঘটনার কিছু সময় আগে শানঘাট এলাকার একটি ইটভাটায় যায় পুলিশের দলটি। এ সুযোগে সন্ত্রাসীরা ৫ ইটভাটায় প্রবেশ করে। কিন্তু শ্রমিকদের মোবাইলফোন কেড়ে নেয়ায় তারা সংবাদ পাঠাতে পারেনি। তবে পুলিশ পৌঁছুনোর কিছু সময় আগে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেছে। তাদের ধরতে রাত থেকেই অভিযান অব্যহত রয়েছে।

শ্রমিকরা জানান, সন্ত্রাসীরা হাতে লেখা একটি চিরকুট দিয়ে যায়। চিরকুটে ইংরেজিতে ‘এমএএল’ বাংলায় ‘জোনো যুদ্ধা’ এবং এর নিচে একটি মোবাইল নম্বর লেখা রয়েছে। এ মোবাইল নম্বরে বুধবার সকাল ১০টার পরে ইটভাটা মালিকদের যোগাযোগ করতে শ্রমিকদের বলে যায় সন্ত্রাসীরা। মালিকদের সাথে সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত কোনো অবস্থায় ইট ভাটায় খড়ি দেয়া যাবে না। কোনো শ্রমিক যদি ইট পোড়াই তাহলে তার কঠিন মূল্য দিতে হবে বলে হুমিক দেয় অজ্ঞাত ওই সন্ত্রাসীরা।

এদিকে ঘটনার পর থেকেই ভীত শ্রমিকরা মালিকদের অবগত করেন। তারা ইট পোড়ানো বন্ধ করে দেন। গতকাল বুধবার সকালে ইটভাটাগুলোতে গিয়ে দেখা যায় শ্রমিকদের চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ। ইটভাটা ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারলে স্বস্তি ফিরে আসবে বলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন কয়েকজন শ্রমিক।

মারধরের শিকার কয়েকজন শ্রমিক জানান, মালিকরা যদি চাঁদা পরিশোধ না করে তাহলে ইটভাটাগুলো ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয় সন্ত্রাসীরা। সন্ত্রাসীদের সাথে আপস ছাড়া কোনো শ্রমিক যদি ইট পোড়াই তাহলে তাকে ভাটার আগুনে পুড়িয়ে হত্যারও হুমকি দেয়া হয়েছে। একারণে শ্রমিকরা চরম আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

এদিকে গতকাল সকালে ৫ ইটভাটার শ্রমিকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত শ্রমিকদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। বিষয়টি প্রশাসনকে অবহিত করেন তারা। ইটভাটা চালাবেন কি-না তা নিয়েও দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন মালিক পক্ষ। তবে শেষ পর্যন্ত সন্ত্রাসীদের ইটভাটা মালিকদের সাথে যোগাযোগ করেছেন কি-না? এবং মালিকরা কি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা জানা যায়নি।

চিরকুটে উল্লেখ করা সন্ত্রাসী দলের কোনো অস্তিত্ব নেই উল্লেখ করে গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, ওই দলের নাম দিয়ে আতঙ্ক ছড়ানোর অপচেষ্টা করা হচ্ছে। ইটভাটার কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের যা যা করণীয় তাই করা হচ্ছে। বর্তমানে ওই ইটভাটাগুলোর কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। মালিকদের ডেকে আশ্বস্থ করা হয়েছে। যেকোনো মূল্যে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করার আশা প্রকাশ করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, প্রতি বছরই ইটভাটা গুলোতে সন্ত্রাসীরা চাঁদাবাজি করে। চলতি ইট পোড়ানো মরসুমে পুরাতন মটমুড়ার একটি ইটভাটায় চাঁদা আনতে গিয়ে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে ৩ সন্দেহভাজন চাঁদাবাজ নিহত হয়। এরপর থেকেই ইটভাটাগুলোতে সন্ত্রাসীদের আধিপত্য ছিলো না। বুধবার রাতের হামলার ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ইটভাটা মালিক ও রাতে কাজ করা শ্রমিকরা।