লাইসেন্স ও প্রয়োজনীয় ডাক্তার ছাড়াই চলছে বামন্দীর নিউ সনো হাসপাতাল : স্বাস্থ্য বিভাগ নীরব দর্শক

 

মাজেদুল হক মানিক: মেহেরপুর গাংনীর বামন্দী নিউ সনো হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ও ফিজিওথেরাপি সেন্টার স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো সনদপত্র ছাড়াই চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় ডাক্তার ও প্রশিক্ষিত জনবল না থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম চলছে প্রকাশ্যে। এরপরেও স্বাস্থ্য বিভাগের নজরে নেই হাসপাতালটি। এখানে প্রতিনিয়ত চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি চিকিৎসা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বামন্দী বাজারের সততা মার্কেটের দোতলায় ভাড়া ভবনে চলছে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম। বাইরে সাইনবোর্ড নেই। ভেতরে ঢুকতে সিঁড়ির পাশের দেয়ালে বড় করে লেখা রয়েছে নাম। মঞ্জুরুল ইসলাম, কামাল হোসেন ও জিন্নাহ নামের তিন ব্যক্তি এই প্রতিষ্ঠানটির মালিক বলে জানালেন মঞ্জুরুল ইসলাম। প্রতিষ্ঠানটির সনদপত্র ও চিকিৎসকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রতিনিধিরা এখনো প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করেননি। সনদপত্র ছাড়া কিভাবে হাসপাতাল চলছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকেই এভাবে চালাচ্ছে। আমরাও তাই চালাচ্ছি। কোনো সমস্যাতো হচ্ছে না।

চিকিৎসকের বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে সার্বক্ষণিক কোনো মেডিকেল অফিসার (এমবিবিএস) নেই। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সদ্য পাস করা মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট মজিবুর রহমান সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও সেবিকা (নার্স), আয়া ও প্যাথলজিস্ট হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করছেন তাদের দুয়েকজন বাদে সকলেই সদ্য পাস করা নয়তো সনদপত্রবিহীন স্থানীয় কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে কাজ শিখেছেন। হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে পুরুষ বেডে একজন অর্শ্ব-পাইল অস্ত্রোপচার (অপারেশন) হওয়া রোগী। তিনি তেমন কথা বলতে পারছেন না। অস্ত্রোপচারজনিত কারণে তিনি ব্যাথায় ভুগছেন। এর ঠিক উল্টো দিকে রয়েছে কয়েকটি কেবিন। গ্লাস দিয়ে ঘেরা কেবিন বেডে কয়েকজন সিজারিয়ান রোগী ভর্তি রয়েছেন। তারা জানান, অস্ত্রোপচারের পর থেকে এমবিবিএস ডাক্তারদের তেমন দেখা মেলেনি। এখানে যারা থাকেন তারা চিকিৎসা দেন।

এ প্রসঙ্গে হাসপাতাল মালিক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, অ্যানেসথেসিয়া ও গাইনি চিকিৎসক রয়েছেন। তারা নির্ধারিত সময়ে অপারেশন করেন। প্রতিদিন তারা চিকিৎসা দেন বলেও দাবি করেন তিনি। হাসপালটিতে ঘুরে দেখা গেছে, মেডিকেল বর্জ্য ফেলার নির্ধারিত কোনো স্থান নেই। নেই কোনো অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা। যারা সেখানে ভর্তি থাকেন তারা এক প্রকার জীবন ঝুঁকি নিয়েই সময় পার করতে হয়।

স্থানীয়রা জানান, বামন্দী এলাকায় মাঝে-মধ্যে ক্লিনিক হাসপাতালসহ বিভিন্ন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ব্যাঙের ছাতার মতো গজায়। অপচিকিৎসার কারণে জনরোষে পড়ে অনেকগুলো ইতোমধ্যে বন্ধ হয়েছে। কিন্তু এরপরেও স্বাস্থ্য বিভাগের কেন টনক নড়ে না? তাহলে তারা কি মাসিক মাসোয়ারা নিয়ে থাকেন? এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকদের দম্ভোক্তি তা-ই প্রমাণ করে। আর যদি মাসোয়ারা না নিয়ে থাকে তাহলে প্রশাসনের নাকের ডোগায় এমন প্রতিষ্ঠান কিভাবে কার্যক্রম চালায়? স্থানীয়রা জানান, উপজেলা ও জেলা শহর থেকে দূরে অবস্থান হওয়ায় বামন্দীসহ আশেপাশের ইউনিয়নের রোগীরা বামন্দীর বিভিন্ন ক্লিনিকে ভিড় করেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাই পরীক্ষা-নিরিক্ষা ও চিকিৎসায় অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হয়। এরপরেও চিকিৎসা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে এখনই প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি স্থানীয় ও ভুক্তভোগীদের। হাসপাতালটির বিষয়ে জানতে চাইলে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। তবে দ্রুত খোঁজ নেয়া হবে।

অপরদিকে সিভিল সার্জন অন্যত্র বদলিজনিত কারণে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ডা. অলোক কুমার দাস বলেন, এভাবে কোনো চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। দুয়েক দিনের মধ্যে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।