আলমডাঙ্গার মুক্তিযোদ্ধা কাজী কামালের ২য় মৃত্যুবাষির্কী পালিত

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: বৃহত্তর কুষ্টিয়ার মুক্তিযোদ্ধা, আলমডাঙ্গা থানা মুজিব বাহিনীর কমান্ডার কাজী কামালের গতকাল ৮ এপ্রিল ছিলো ২য় মৃত্যুবার্ষিকী। এবারে বেশ আয়োজনের মধ্যদিয়ে অতিবাহিত হলো খ্যাতিমান এ মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুবার্ষিকী। গতকাল এ মহান মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছিলো মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠানের। তিনি ৭২ বছর বয়সে ২০১৫ সালে ৮ এপ্রিল ঢাকা ল্যাব এইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ওই দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অর্থোপেডিক সার্জন ডা. ড মাহবুব হোসেন মেহেদী, মরহুমের ছোট ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী রবিউল হক, মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী, মুক্তিযোদ্ধা সোয়েব উদ্দিন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী খালেদুর রহমান অরুণ, মুক্তিযোদ্ধা মারফত আলী, অ্যাড. নাসির উদ্দিন মঞ্জু, হাজি মজিবার রহমান, হাজি মোজাম্মেল হক, মীর আব্দুর হাই টেনি চৌধুরী, সহকারী প্রধান শিক্ষক ইলিয়াস হোসেন, গিয়াস উদ্দিন মাস্টার, মীর উজ্জ্বল হোসেন, হাজি আব্দুর রশীদ মিয়া, সাবেক ব্যংক কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন খান, আলমডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি যথাক্রমে শাহ আলম মন্টু ও হামিদুল ইসলাম আজম। দোয়া পরিচালনা করেন হাফেজ মওলানা আব্দুল মোতালেব।

উল্লেখ্য, বৃহত্তর কুষ্টিয়ায় মুক্তিযোদ্ধার কথা মনে হলে সর্বাগ্রে যার নাম স্মরণ করে মানুষ, তিনি কাজী কামাল। আলমডাঙ্গা উপজেলার পার্শ্ববর্তী মিরপুর উপজেলার সুতাইল গ্রামের মৃত কাজী সিরাজুল ইসলামের ছেলে কাজী কামাল। তিনি যেন বাঙালির সহজ সোজা দামাল ছেলের চিরন্তন প্রতীক ছিলেন। ৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তিনি। তিনি আলমডাঙ্গা থানা মুজিব বাহিনীর কমান্ডারের গুরু দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ‘৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন একজন খাঁটি দেশ প্রেমিক হিসেবে। ‘৬৬ সালের গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ‘৭০ সালে নিজ উদ্যোগে এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করে গড়ে তোলেন বিশাল বাহিনী। আব্দুল হান্নান, আশু, মজিবর রহমান, মঈনুদ্দীনসহ প্রথিতযশা বহু ছাত্রনেতা তার নেতৃত্বে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলো। তার শিষ্য বলে নিজের পরিচয় দিতে ভালোবাসেন এমন একাধিক মুক্তিযোদ্ধা বলেন- আলমডাঙ্গা রেলস্টেশন থেকে পুলিশের রাইফেল কেড়ে নিয়েছিলেন তিনি। নিজ বাড়িতে রাইফেল ট্রেনিং দিতেন। এ সব যুদ্ধের প্রারম্ভের কথা। তারপর যখন যুদ্ধের ডামাডোল বেজে উঠলো তখন তৎকালীন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শাফায়েত-উল ইসলাম, ডা. শাহাবুদ্দিনসহ অনেককেই সাথে নিয়ে আলমডাঙ্গা কলেজে কন্ট্রোল রুম তৈরি করেছিলেন। তার অমিত বীরত্বপূর্ণ নেতৃত্বে আলমডাঙ্গা থানার সমস্ত রাইফেল লুট করে স্বেচ্ছাসেবকদের মাঝে বিলিয়ে দেয়া হয়। এ সময় কামাল বাহিনীর শক্তি ও সাহস এতো বেশি হয়ে পড়ে যে তারা মেজর আবু ওসমান চৌধুরী ও ইপিআর বাহিনীসহ কুষ্টিয়াকে পাকহানাদার মুক্ত করতে মরণপণ যুদ্ধ করেন। আরও ভালো প্রশিক্ষণের জন্য তিনি ভারতে চলে গেলেন সদলবলে। সেখানে ট্রেনিং শেষে দেরাদুনে যান উচ্চ প্রশিক্ষণে। পাহাড়ি অঞ্চলে জীবনবাজি রেখে উচ্চ প্রশিক্ষণ শেষ করেন। পরে দেশে ফিরে যে সকল মুক্তিযোদ্ধা যারা ভারতে যেতে সক্ষম হয়নি, তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে অনুপ্রাণিত করতেন। বিস্ময়কর কাকিলাদহ’র ভয়াবহ যুদ্ধে তিনি কমান্ডিঙের দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় তিনি পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। ব্যক্তি জীবনে তিনি অত্যন্ত সহজ সরল জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে তার ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক ছিলো। বঙ্গবন্ধু কাজী কামালকে তৎকালীন থানা গভর্ণর করেছিলেন। স্বাধীনতার পর কুমারী ইউনিয়নের প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি।