চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন মাঠের বোরো ধানে ব্লাস্ট : সুযোগ কাজে লাগিয়ে সিনজেনটার মেয়াদোত্তীর্ণ ফিলিয়া ওষুধ সরবরাহ

ফলোআপ: চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন মাঠের বোরো ধানে ব্লাস্ট : সুযোগ কাজে লাগিয়ে সিনজেনটার মেয়াদোত্তীর্ণ ফিলিয়া ওষুধ সরবরাহ

বেগমপুর প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গায় বোরো ধানে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত চাষিরা দিশেহারা। সমাধানের জন্য ছুটছেন দিগ্বিদিক। কোনো উপায়ান্তর খুঁজে না পেয়ে কৃষককূল যখন বিপর্যস্ত ঠিক তখনই চুয়াডাঙ্গার দায়িত্বরত সিনজেনটা কোম্পানির কর্মকর্তারা সুযোগ বুঝে মেয়াদোত্তীর্ণ ফিলিয়া নামক ওষুধ সরবরাহ করছেন। এ যেন ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের মরার ওপর খাড়ার ঘায়ে পরিণত হয়েছে। সহজ-সরল চাষিকূল ওষুধ ব্যবহারের পর জানতে পারছেন সিনজেনটার ওই ওষুধ ছিলো মেয়াদোত্তীর্ণ।

চুয়াডাঙ্গা জেলা  কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৩৩ হাজার ৩৯৫ হেক্টর জমি। আর ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছিলো হেক্টর প্রতি ৩.৮ মেট্রিক টন। সে হিসাবে ১ লাখ ২৬ হাজার ৯০৩ মেট্রিক টন। কিন্তু চাষ হয়েছে ৩৩ হাজার ৫৪৮ হেক্টর জমি। লক্ষ্যমাত্রার চাইতে ১৫৩ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ বেশি হয়েছে। গত বছর জেলায় ধানচাষ হয়েছিলো ২৬ হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমি। গত বছরের তুলনায় এ বছর বোরো ধানের চাষ বেশি হয়েছে ৭ হাজার ৮৩ হেক্টর জমি। গমের আবাদ মার খাওয়ায় বোরো ধানের চাষ লক্ষ্যমাত্রার চাইতে অনেক বেশি হয়েছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৫ হাজার ৩৯০ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১২ হাজার ৪২৫ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ৮ হাজার ৫৩৩ হেক্টর, জীবননগর উপজেলায় ৭ হাজার ২শ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। হঠাৎ করে আবহাওয়াজনিত কারণে নেক ব্লাস্ট রোগ ৬৮ হেক্টর জমিদে আক্রান্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট দফতর জানিয়েছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৪০ হেক্টর আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১৪ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ১০ হেক্টর, জীবননগর উপজেলায় ৪ হেক্টর বোরো ধানের জমিতে ব্লাস্ট আক্রান্ত হয়েছে।  ব্লাস্ট আক্রান্ত জমির পরিমাণ ৬৮ হেক্টর জমি নিরুপণ করা হলেও এর পরিমাণ অনেক বেশি হবে বলে চাষিরা মনে করছে।

এদিকে জমির ধান নষ্ট হওয়ায় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। আগাম ব্যবস্থা নেয়া হলে ক্ষতির পরিমাণ কম হতো। কিন্তু কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মকর্তারা এটি নেননি এবং যথাসময়ে মাঠেও নামেননি বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে চাষিদের। তবে চাষিদের সকল অভিযোগ সঠিক না বলেও দাবি করেছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। এ নিয়ে দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে নড়েচড়ে বসে কৃষি অধিদফতরের কর্মকর্তারা। উচ্চপর্যায় থেকে মাঠপর্যায়ের কৃষি অফিসাররা ছত্রাকজনিত নেক ব্লাস্ট সংক্রামণ থেকে বোরো ধান রক্ষা করার জন্য নাটিভো, ফিলিয়া, ট্রোপার, প্রভিফেন জাতীয় ছত্রাকনাশক ওষুধ দেয়ার পরামর্শ দেয়। ফলে আক্রান্ত এলাকায় ওই সমস্ত ওষুধের সংকট দেখা দেয়।

হিজলগাড়ি বাজারপাড়ার কৃষক আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে রায়হান বলেন, যখন ধানে কোনো রোগ দেখা দেয়নি আমি তখন থেকে সিনজেনটা কোম্পানির নাটিভো ব্যবহার করছি। এ বছর ৪ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের বোরো ধান এমনকি কৃষিবিভাগের প্রদর্শনী প্লটে ২৯ জাতের ধান লাগিয়ে নিয়মিত নাটিভো ওষুধ ব্যবহার করেও তা রক্ষা করতে পারেনি। আমার সব শেষ। কুন্দিপুর গ্রামের চাষি ঝন্টু, আলিহীম, ডাক্তার সুদেব, ডিহি গ্রামের হামিদুল্লাহ, কৃষ্ণপুর গ্রামের জাহিদুল ইসলাম একই সুরে বললেন, সিনজেনটা কোম্পানির সরবরাহকৃত ওষুধ ফিলিয়া ব্যবহার করেও শেষ রক্ষা হয়নি। ওই ওষুধ ব্যবহারের পর জানতে পারলাম ৩ মাস আগেই মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ওষুধের বোতলের গায়ে এমনভাবে মেয়াদোর্ত্তীণ সময় লেখা আছে সহজে বোঝা সম্ভব না। ২০১৭ সাল দেখেই কিনে ব্যবহার করেছি। খেয়াল করিনি। কারণ ধানের অবস্থা দেখে মাথায় ঠিক ছিলো না। পরে জানতে পারি মেয়াদোত্তীর্ণ ওই ওষুধ অন্য জেলা থেকে কোম্পানির লোকজন এনে আমাদের এখানে সরবরাহ করেছেন। যার মেয়াদ গত জানুয়ারি মাসে শেষ হয়ে গেছে। এখন জেনেই বা কি করার আছে। এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি অফিসার তালহা জুবায়ের মাসরুর বলেন, আমি বিষয়টি জানার পরপরই চুয়াডাঙ্গায় দায়িত্বরত সিনজেনটার লোকজনকে ওই ওষুধ বাজার থেকে সরিয়ে ফেলতে বলেছি।

এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গার দায়িত্বরপ্রাপ্ত সিনজেনটা কোম্পানির সেলস প্রমোশন অফিসার মাসুদ রানা ও মার্কেটিং অফিসার হারন অর রশিদ বলেন, চুয়াডাঙ্গায় ফিলিয়া ওষুধের ক্রাইসেস ছিলো বলে অন্য জেলা থেকে আনা হয়েছিলো। কয়েক কাটুন মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ভুল করে এসেছে এবং কয়েকজন চাষি তা ব্যবহার করেও ফেলেছে বলে জানতে পেরেছি। জানার পরপরই বাকি ওষুধগুলো বাজার থেকে তুলে নিয়েছি।