জাতীয় স্বার্থে কবি নজরুলের স্মৃতিগুলো সংরক্ষণ করা প্রয়োজন

চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গায় কবি নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত আটচালা ঘর পরিদর্শনকালে নাতনি খিলখিল কাজী

 

জহির রায়হান সোহাগ: চুয়াডাঙ্গা জেলা শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা মিশনপাড়ায় অবস্থিত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি বিজড়িত আটচালা ঘর। এখানে দীর্ঘদিন ধরে সপরিবারে বসবাস করে গেছেন কবি।

জানা গেছে, কোলকাতার আর্মহাস্ট স্ট্রিটে বসবাসকালে কবি নজরুলের সাথে একই এলাকার বাসিন্দা বৈদ্যনাথ বাবু, হর্ষপ্রিয় বিশ্বাস ও মহিম বাবুর সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো। সেই সুবাদে তাদের আমন্ত্রণে ১৯২৬ ও ১৯২৭ সালে পর পর দু’বার নদীপথে কবি নজরুল সপরিবারে কার্পাসডাঙ্গায় এসেছিলেন। সাথে আসা স্ত্রী প্রমিলা, দু পুত্র সব্যসাচী ও বুলবুল এবং শাশুড়ি গিরিবালাকে নিয়ে কবি উঠেছিলেন বর্তমান কার্পাসডাঙ্গার মিশনপাড়ার হর্ষপ্রিয় বিশ্বাসের বাগান বাড়ির একটি আটচালা খড়ের ঘরে। ওই ঘরটি এখনও বিদ্যমান।

কবির কার্পাসডাঙ্গায় আসার মূল কারণ ছিলো স্বদেশী আন্দোলন। সে সময় তিনি কার্পাসডাঙ্গায় স্বদেশি আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত গোপনে বৈঠক করতেন। দিনের বেলা কবি ঝাউ গাছের নিচে বসে গান শেখাতেন স্বদেশি আন্দোলনের নেতা মহিম সরকারের দু কন্যা আভারানী সরকার ও শিউলীরানী সরকারকে। তারা ছিলেন কবির গানের ছাত্রী। অবসরে বর্তমান খ্রিস্টান মিশনারী চার্চের পেছনে ভৈরব নদের পাড়ে সান বাঁধানো ঘাটের সিঁড়িতে বসে নিমগাছের ছায়াতলে তিনি এ অঞ্চলের হিন্দু-মুসলমানদের তৎকালীন সময়ের চরম দারিদ্র্যের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে ‘মৃত্যুধা’ রচনা করেন।

এ সময় অনতিদূরে ঝাউ গাছের খোঁড়লে একটি গোখরো সাপ টিয়া পাখির বাচ্চা খেতে গাছে উঠলে পাড়ার ছেলেরা সাপটিকে পিটিয়ে মারে। এতে কবি ছেলেদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওখানে বসেই রচনা করেন ‘পদ্মগোখরো’ কবিতা। এছাড়া উল্লেখযোগ্য কবির ‘লিচু চোর’ কবিতার অংশবিশেষও এই কার্পাসডাঙ্গার বাবুদের তাল ও লিচু বাগানকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছিলো বলে জানা গেছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় কবির স্মৃতি বিজড়িত আটচালা ঘর ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখেন কবির নাতনি খিলখিল কাজী, দেশবরেণ্য নজরুল সঙ্গীতশিল্পী এমএ মান্নান ও রাহাত আরা গীতিসহ নজরুল গবেষকরা। এই প্রথম কবির বংশধরের একজন আটচালা ঘর দেখতে গেলেন। খিলখিল কাজীসহ অন্যরা আটচালা ঘরে থাকা কবির ব্যবহৃত খাট, আলমারীসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র দেখেন। এছাড়া ভৈরব নদের পাড়ে সান বাঁধানো ঘাট ঘুরে দেখেন তারা। পরিদর্শন শেষে অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে খিলখিল কাজী বলেন, কবি নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত আটচালা ঘরসহ দেশের যেসব স্থানে তার স্মৃতি চিহ্ন রয়েছে জাতীয় স্বার্থে সেগুলো দেখভাল করার জন্য সরকারের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিশ্ব সাহিত্যে বিস্ময় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সাহসিকতার সাথে যে দর্শন রেখে গেছেন তা মেলে ধরতে পারলে সম্প্রীতির শান্তিপূর্ণ সমাজ পাবে প্রজন্ম। এটা করা এখন আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে এসে মনে হচ্ছে দাদু যেন আমার আশপাশেই আছেন। শুধু কবির বংশধরের নয়, ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে জাতীয় কবির গৌরবান্বিত স্মৃতিগুলোকে উজ্জলভাবে ধরে রাখতে কার্পাসডাঙ্গায় নজরুল নগর স্থাপন করে কবির স্মৃতিময় স্থানগুলোকে যথাযথভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করার দাবি এলাকাবাসীর।

উল্লেখ্য, জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম তার জীবদ্দশায় কার্পাসডাঙ্গার আটচালা ঘরে বসে বেশ কিছু কবিতা ও গানের রচনা করেন। যা পরে জাতীয় স্বীকৃতি পেয়েছে।