ইন্টারনেটের মূল্য নির্ধারণে কস্ট মডেলিং

 

মুঠোফোনভিত্তিক ইন্টারনেটের মূল্য নির্ধারণে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কস্ট মডেলিঙের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা অভিনন্দনযোগ্য। এতোদিন মোবাইলফোন অপরাটেরদের নির্ধারিত মূল্যেই গ্রাহকরা মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে আসছিলো। কিন্তু সেবাপ্রদানের খরচ, যথাযোগ্য মুনাফা, গ্রাহক সংখ্যা, সেবার মান ইত্যাদি অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণের পদ্ধতি হলো কস্ট মডেলিং। অর্থাৎ গ্রাহক এবং সেবাপ্রদানকারী কোম্পানি উভয়ের জন্যই তা হবে যথাযথ একটি মূল্য। ২০০৮ সালে মুঠোফোনের মাধ্যমে ভয়েস কলের একটি কস্ট মডেলিং বিনামূল্যে করে দিয়েছিলো জাতিসংঘের টেলিযোগাযোগ সংস্থা আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ)। কিন্তু বাংলাদেশ এখন নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ, তাই এই দফার কস্ট মডেলিং সম্পন্ন করতে অর্থব্যয় করতে হবে। সেইসূত্রে বিটিআরসি ইতোমধ্যে আইটিইউ থেকে একজন পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছে।

বিটিআরসির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছয় কোটি ৭২ লাখ। এর মধ্যে মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছয় কোটি ৩১ লাখ। অর্থাৎ শতকরা ৯৪ ভাগ ব্যবহারকারী মুঠোফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে। তাই সর্বাধিক ব্যবহারকারীর অধিকার রক্ষার স্বার্থে কস্ট মডেলিঙের সম্পন্ন করার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। সরকারের এই উদ্যোগকে মুঠোফোন অপারেটর কোম্পানিগুলি স্বাগত জানিয়েছে। তবে তারা এটাও বলেছে, বর্তমানের চাইতে মূল্য হ্রাস করা সম্ভব নয়। সেই অর্থে তাদের বক্তব্য পরস্পরবিরোধী। একদিকে তারা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছে, অন্যদিকে তারা জানাচ্ছে মূল্যহ্রাস সম্ভব নয়। যদি কস্ট মডেলিং অনুসারে তাদের মূল্য হ্রাস করার পরামর্শ আসে, তবে তারা কি তা অগ্রাহ্য করবে? সে রকম হলে সরকারকে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। কারণ কয়েকটি কোম্পানির অপ্রতিরোধ্য মুনাফার চাইতে কোটি গ্রাহকের স্বার্থই সকল কিছুর ঊর্ধ্বে। মুঠোফোন কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। কর ফাঁকি থেকে শুরু করে গ্রাহকের সাথে প্রতারণা, নানা কিছুই তারা করে থাকে। ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর তিনজন গ্রাহকের পৃথক অভিযোগের ভিত্তিতে একটি মুঠোফোনের অপারেটরকে সোমবার চার লাখ টাকা জরিমানা করেছে। একজন অভিযোগকারীর অভিযোগ এইরূপ ছিলো: গত ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি ওই কোম্পানির ৯৮ টাকা রিচার্জে ২৮ দিনের মেয়াদে দেড় জিবি ইন্টারনেট সেবা পাওয়ার অফার গ্রহণ করেন। কিন্তু রিচার্জ করার পর তাকে দেয়া হয় এক জিবি ইন্টারনেট। ওই গ্রাহক কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার না পেয়ে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে অভিযোগ করেন। এরপর শুনানির ভিত্তিতে কোম্পানিটিকে আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। আইন অনুযায়ী জরিমানার ২৫ শতাংশ অভিযোগকারী পাবেন।

মুঠোফোন কোম্পানিগুলোর যথেচ্ছাচার নিয়ে গ্রাহকদের অসন্তোষের বিপরীতে সরকারের নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপগুলো প্রয়োজনীয়। সরকার এতে যেমন রাজস্ব লাভ করছে, তেমনি গ্রাহকদের স্বার্থ কিছুটা রক্ষিত হচ্ছে। বিজ্ঞাপনপ্রাপ্তির সুবাদে প্রথমদিকে এসকল যথেচ্ছাচার নিয়ে গণমাধ্যমগুলো তেমন রিপোর্ট প্রকাশ করতো না। কিন্তু আজকাল পরিস্থিতি কিছুটা বদলিয়েছে। আমাদের জীবনের দৈনন্দিন যোগাযোগ ও নানা কাজে-কর্মে মুঠোফোন ব্যবহার করতে হবে। তার জন্য জনগণ অর্থব্যয় করতেও প্রস্তুত রয়েছেন। কিন্তু তার মধ্যে একটি শৃঙ্খলা থাকা প্রয়োজন। কস্ট মডেলিং মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি শৃঙ্খলা আনয়ন করবে।