বাজার অস্থির করতে সিন্ডিকেটের পাঁয়তারা

 

রমজানের আগেই বাজার অস্থির করে তোলার পাঁয়তারা শুরু করে সিন্ডিকেট। এবারো এর ব্যত্যয় ঘটছে না। রমজানকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির করে তুলছে সিন্ডিকেট। গত এক মাসের ব্যবধানে চাল, সয়াবিন তেল, পেঁয়াজ, রসুনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় আরো পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অ্যাংকর ডাল ও চিনি গত এক বছরের ব্যবধানে যথাক্রমে ২২ দশমিক ১২ শতাংশ ও ২৭ দশমিক ৯১ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবেই মূল্যবৃদ্ধির এ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমলেও উল্টো দেশের বাজারে বেড়েছে।

অসাধু ব্যবসায়ী চক্র নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির কৌশল পাল্টিয়েছে। রমজানের সময় দাম বাড়ালে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় বিধায় তাই তারা আগেভাগেই এই অপকর্ম সেরে নিচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যের মূল্য ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেলে সাধারণ ও স্বল্প আয়ের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে যে বিরূপ প্রভাব পড়ে এর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ নতুন করে নিষ্প্রয়োজন। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর তরফেও বাজার নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে নানারকম আশ্বাস প্রতিশ্রুতি অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে বটে; কিন্তু এর সুফল দেখা যাচ্ছে না। সরকারের তরফে বাজার পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে কখনো কখনো অদূরদর্শিতার পরিচয় মিলেছে। ক্রেতা কিংবা ভোক্তারা শুধুই আশ্বাস প্রতিশ্রুতির বানে ভেসেছেন এমন নজির আমাদের সামনে অনেক আছে। চাল অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি পণ্য এবং এর প্রয়োজন সর্বাগ্রে। অন্যান্য পণ্যের চেয়ে চালের মূল্য বৃদ্ধি সাধারণ মানুষ খুব বেশি স্পর্শ করে। চালের বাজার দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আছে অশুভ চক্রের মুঠোবন্দি। এক্ষেত্রে আড়তদার, মজুদদার, পাইকারি ও অসাধু চাতাল মালিক মিলে যে চক্র গড়ে উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নিয়ে যতো কথাই বলা হোক না কেন এর সুফল মেলা ভার। এবার এই মরসুমে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কারণ ভাটি বাংলার ফসল তলিয়ে গেছে বানের পানিতে। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই আগাম সব ব্যবস্থা নিতে হবে। চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে দৃশ্যত সরকারের উদ্যোগ আয়োজন কম না হলেও এসব উদ্যোগ-আয়োজন যে ত্রুটিমুক্ত নয়, বিদ্যমান পরিস্থিতি সেই কথাই যেন বলে দেয়।

বাজারের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করার পাশাপাশি টিসিবিকে শক্তিশালী করে এর কার্যক্রম বিস্তৃত করা জরুরি। এককালে উজ্জ্বল চিত্র ধারণকারী টিসিবি এখন গণ্ডিবদ্ধ হয়ে পড়েছে। বাজারে আবার যে উত্তাপ সৃষ্টির পাঁয়তারা অশুভ চক্র চালাচ্ছে এর বিরুদ্ধে কঠোর কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়নসহ বাজারে সরকারের কঠোর নজরদারি রাখতে হবে সার্বক্ষণিক। বাজারকে নিয়ন্ত্রণে কিংবা সাধারণ মানুষের আয়ের মধ্যে রাখতে হলে কমিটমেন্ট প্রয়োজন। এবার রমজানে বাজারে সার্বক্ষণিক মনিটরিং টিম যাতে কাজ করে সেই পরিকল্পনা এখনই নিতে হবে। সরকারের কিছু পদক্ষেপ বাজারে ইতিবাচক ফল দিলেও বাজার এখনো রয়ে গেছে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধির অপক্রিয়া ঠেকাতে সাঁড়াশি অভিযান চালানো জরুরি। এখানে পণ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সবসময় আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দেয়া হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য কমে যাওয়ার কোনো ইতিবাচক প্রভাব দেশের বাজারে পড়তে দেখা যায় না। যেমনটি ঘটেছে ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে। কোনো পণ্যের মূল্য একবার বেড়ে গেলে সহজে তা আর কমে না। এরও কঠোর প্রতিকার জরুরি।