নিজেরই খাবলে গিলে খাচ্ছি নিজেদের ভবিষ্যত

প্রকৃতির তো কোনো দোষই নেই, যতো দোষ মানুষের। মানুষই তো প্রকৃতিকে বিগড়ে দিয়ে নিজেদের বহুপ্রকার সর্বনাশ ডেকে, এনেছে আনছে। এর একটি- সামান্য বৃষ্টিতেই ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। মানুষের কল্যাণেই পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য খাল-বিল, নদ-নদী, হাওড়-বাঁওড়, মূলত প্রাকৃতিকভাবেই পাওয়া। সেটা যদি নিজেরাই কারো কারো ব্যক্তি স্বার্থে বিলিন করি তাহলে তার খেসারত তো সমাজকে দিতেই হবে। দিতে হচ্ছেও।
‘বাঙালি দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বোঝে না’ এটা অপবাদ নাকি প্রবাদ? যেটাই হোক, এর প্রমাণ যে ঘুরি ফিরেই সামনে উঠে আসে তা বলাই বাহুল্য। এরপরও কেন যে আমরা, আমাদের শিক্ষিতরা ওই বোকামি দূর করতে এখনও অক্ষম, তাও উপলব্ধিতে আসে না। বর্ষায় পানি প্রবাহের স্থানগুলো কোনোভাবেই কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া উচিত নয়। অথচ আমাদের সমাজের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অধিকাংশকেই এসব রক্ষায় উদাসীন থাকতে দেখা যায়। শুধু কি তাই? কোথাও কোথাও লিজ দেয়ারও নজির রয়েছে। লিজ নিয়ে নদীর বুকে পুকুর, লিজ নিয়ে মরাগাঙে আবাদ করে কেউ কেউ আঙুল ফুলে কলা হলেও, বিরূপ প্রভাব পুরো সমাজজুড়ে। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকার কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই বিঘার পর বিঘা জমির আবাদ পানিগর্ভে বিলিন হচ্ছে। এ ধরনের ফসলহানির দায় কি প্রকৃতির? দায় এড়ানোর অজুহাত আহামুখি ছাড়া কিছু নয়। আমাদের আমলাদের নিশ্চয় অশিক্ষিত বলা চলে না, আমলাদের যারা পরিচালনা করেন সেই রাজনৈতিকরাও অদূরদর্শী নয় নিশ্চয়। তাহলে কেন আমাদের এই দশা?
আমাদের দেশ ষড়ঋতুর। প্রকৃতির বৈচিত্রতাই স্বাভাবিক। গ্রীষ্মে কেন আষাঢ়ে বৃষ্টি? এ ধরনের বোকার মতো প্রশ্ন করার চেয়ে কেন গ্রামবাংলায় আমরা বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের নালাগুলো রুদ্ধ করেছি? জনসংখ্যা বিস্ফোরণের কারণে রান্নাঘরকেও রাতের শোবার ঘরে রূপান্তর করতে হলেও তো পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থাটা রাখতে হয়! আমরা দিন দিন এতোটাই সর্বগ্রাসী হয়ে উঠেছি যে, নিজেরই খাবলে গিলে খাচ্ছি নিজেদের ভবিষ্যত।