খুনের ২ দিনের মাথায় গ্রেফতার মুনতাজ : আদালতে স্বীকারোক্তি

এক বছর আগেই আলমডাঙ্গার কৃষক শওকত আলীকে হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো ঘাতক

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার রেলজগন্নাথপুরের বিএনপি নেতা বয়স্ক কৃষককে মাথায় কোদাল দিয়ে আঘাত করে হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ১ নং আসামি মুনতাজ পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে অকোপটে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। গতকাল ২৬ এপ্রিল আদালতে ১৬৪ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট হত্যাকাণ্ডে নিজেকে জড়িয়ে স্বীকারোক্তিমূলক  জবানবন্দি প্রদান করেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। খুনের ঘটনার মাত্র ২ দিন অতিবাহীত হতে না হতেই  হত্যার  রহস্য উন্মোচন ও হত্যাকারীকে গ্রেফতারে পুলিশের সাফল্যে নিহতের পরিবারসহ এলাকাবাসী কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

জানা গেছে, আলমডাঙ্গার রেলজগন্নাথপুর গ্রামের বিএনপি নেতা বয়স্ক কৃষক শওকত আলী ওরফে শকোকে মাথায় কোদাল দিয়ে বাড়ি মেরে হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ১ নং আসামি মৃত ওয়াজ ফরায়েজীর ছেলে নিহতের আপন চাচাতো ভাই মুনতাজ আলীকে গত মঙ্গলবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই টিপু সুলতান তাকে গ্রেফতার করেন। গোপনসূত্রে  পুলিশ সংবাদ পায় যে রাজবাড়ির কালুখালিতে এক আত্মীয়ের বাড়ি মুনতান আলী অবস্থান করছে। এই সংবাদ পেয়ে পুলিশ কালুখালিতে যায়। পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতারের আগেই মুনতাজ কুষ্টিয়াগামী একটি বাসে উঠে বসে। পুলিশও সেই বাসে উঠে। পুলিশের সংখ্যা কম থাকায় পুলিশ মোক্ষম সময়ের অপেক্ষায় ছিলো। বাসটি কুষ্টিয়ার খোকসাতে পৌঁছুলে এক স্থানে বেশ কয়েকজন পুলিশকে ডিউটিরত অবস্থায় দেখে এসআই টিপু সুলতান বাস ড্রাইভারকে নিজের পরিচয় দিয়ে থামাতে বলেন। বাসটি থামলে এসআই টিপু সুলতান খোকসা পুলিশের নিকট নিজের পরিচয় দিয়ে আসামি গ্রেফতার করতে সহযোগিতা চান। এ সময় খোকসা পুলিশের সহযোগিতায় গ্রেফতার করেন আসামি মুনতাজ আলীকে। গ্রেফতারের পর তাকে পুলিশ বেশ গোপনীয়তার সাথে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পুলিশের অব্যাহত জিজ্ঞাসাবাদে মুনতাজ আলী ধীরে ধীরে মুখ খুলতে শুরু করে। এক পর্যায়ে অকপ্টে আপন চাচাতো ভাইকে হত্যার  ঘটনা বর্ণনা করেন তিনি।

মুনতাজ আলী জানান, এক বছর আগেই তিনি চাচাতো ভাই শওকত আলীকে হত্যার প্লান করেছিলেন। সুযোগ হয়ে উঠছিলো না। এরই মধ্যে গত ২১ এপ্রিল শুক্রবার ঘাতক মুনতাজ  আলী চাচাতো ভাই  শওকত আলীকে হত্যার পরিকল্পনা করে কোদাল নিয়ে মাঠে যান। ওই মাঠের পার্শ্ববর্তী জমিতে শওকত আলীর কাজ করার কথা ছিলো। কিন্তু শওকত আলী ওই দিন মাঠে যাননি। ফলে শুক্রবারে হত্যার পরিকল্পনা মুনতাজ আলীর ভেস্তে যায়। পরদিন  সকালে উঠে আবার সে একই উদ্দেশে মাঠে যায়। অপেক্ষা করতে থাকে শওকত আলীর পৌঁছুনোর। বৃষ্টির পর শওকত মাঠে পৌঁছুলে তিনি ছুটে যান শওকতের নিকট। প্রথমে কোদাল দিয়ে শওকত আলীর তলপেটে আঘাত করে। এ সময় তিনি বসে পড়েন মাথার পেছনে আরেকটা আঘাত করা হয়। এতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন শওকত আলী। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হলে ঘাতক মুনতাজ আলী দ্রুত পালিয়ে যান। প্রথমে পোড়াদহে তার আত্মীয়’র বাড়ি ওঠে। পরে সেখান থেকে রাজবাড়ির কালুখালি আরেক আত্মীয় বাড়িতে।

এ হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে মুনতাজ জানান, গত ইউপি নির্বাচনে ঘাতক মুনতাজ আলী মেম্বার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। সে সময় শওকত আলী তাকে ভোট দেয়নি। তাছাড়া মুনতাজ আলীর গরু চুরির ব্যাপারে শওকত আলীর নেপথ্য হাত থাকার সন্দেহ ছিলো মুনতাজ আলীর মনে। এছাড়া ধান কেটে নেয়া ও শসা গাছ কেটে দেয়া এমন ছোটোখাটো বেশ কিছু ক্ষোভ থেকে মুনতাজ আলী বছর খানেক আগে থেকেই চাচাতো ভাই শওকত আলীকে হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন।

গতকাল বুধবার তাকে সংশ্লিষ্ট মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হলে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে তিনি এ হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

খুনের ঘটনার মাত্র ২ দিন অতিবাহিত হতে না হতেই হত্যার রহস্য উন্মোচন ও হত্যাকারীকে গ্রেফতারে পুলিশের সাফল্যে নিহতের পরিবারসহ এলাকাবাসী কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল বেলা সাড়ে ১১টায় আলমডাঙ্গার রেলজগন্নাথপুরের কৃষক শওকত আলী ফরায়েজীকে নিজ ভুট্টাক্ষেতের আইলের ওপর হত্যা করা হয়। নিহতের চাচাতো ভাই মুনতাজ ও মুনতাজের বন্ধু নাজমুল এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে পারিবারিকভাবে দাবি করা হয়। এদিকে, অভিযোগ উঠতে না উঠতেই অভিযুক্ত মুনতাজ ও নাজমুল ঘরবাড়ি তালাবদ্ধ করে পালায়। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গতকাল রাতেই নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় ৩ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।