স্কুল ছেড়ে মাঠে নামছেন প্রাথমিকের শিক্ষকরা

স্টাফ রিপোর্টার: দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি বন্ধ থাকা ও বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সরকারি শিক্ষকরা পদোন্নতি, বেতনবৃদ্ধি, দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন এবং বেসরকারি বিদ্যালয় জাতীয়করণ, শিক্ষকদের চাকরি সরকারিকরণ ও জাতীয় বাজেটে অর্থ বরাদ্দের দাবিতে আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে তাদের পদোন্নতি অনির্দিষ্ট কারণে বন্ধ রয়েছে। তাই প্রধান শিক্ষকরা অবসরে গেলেও সিনিয়র সহকারী শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষক হতে পারছেন না। এছাড়া ২০১৪ সালে প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা দেয়া হলেও সে অনুযায়ী তাদের বেতনভাতা দেয়া হচ্ছে না। আর তাদের উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার হিসেবে পদোন্নতিও বন্ধ রয়েছে। তাই এ সকল জটিলতা নিরসনে তারা মাঠে নামতে চান।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম বলেন, ২০০৯ সাল থেকে সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতি বন্ধ থাকায় বর্তমানে ২১ হাজার বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই, ভারপ্রাপ্ত দিয়ে কার্যক্রম চলছে। এছাড়া প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। এমতাবস্থায় অনেক সিনিয়র শিক্ষক পদোন্নতি না পেয়েই আক্ষেপের সঙ্গে অবসরে যাচ্ছেন। পাশাপাশি প্রধান শিক্ষককে দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার নিয়ম হলেও সহকারী শিক্ষকদের তৃতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা হচ্ছে না। ফলে সহকারী শিক্ষকরা বেতন-ভাতাসহ সব রকমের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

তিনি বলেন, তাদের এখন দাবি হচ্ছে সহকারী শিক্ষকদের ৫২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে বেতন ৬৪০০ টাকা এবং প্রধান শিক্ষকদের বেতন ৬৪০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮ হাজার টাকা করা হোক। তাই এ সমস্যা সমাধানের জন্য তারা আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে শিক্ষা কার্যক্রমে যাতে কোনো প্রকার বাধা সৃষ্টি না হয় তাই সরকারি ছুটিতে তারা আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি বাংলাদেশের সমন্বয়কারী মৃগেন্দ্র মোহন সাহা বলেন, বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষকরা সব দিক থেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী ২৬,১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণের ঘোষণার পরও শর্ত পূরণ করা ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান নানা জটিলতায় জাতীয়করণ হয়নি। তাই তারা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সরকারিকরণ ও বাজেটে অর্থ বরাদ্দের দাবিতে আন্দোলন করবে না।

সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ৯ মার্চ জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাথমিক শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড মর্যাদা দেয়ার ঘোষণা দেন। সে অনুযায়ী অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজনীয় অনুমোদন ও পরামর্শ নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল ৬৪০০ টাকায় (সপ্তম পে-স্কেলের হিসেবে) উন্নীত করে। কিন্তু এটি দ্বিতীয় শ্রেণির নন-গেজেটেড কর্মকর্তার বেতন গ্রেড। মন্ত্রণালয়ের এমন পদক্ষেপে নানা জটিলতা তৈরি হয়। বিশেষ করে পুরনো প্রধান শিক্ষকদের বেতন সীমার অবনমন হয়ে যায়। শিক্ষক নেতাদের দাবি, মন্ত্রণালয়ের এ পদক্ষেপ তাদের দাবি এবং প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বহির্ভূত। তাদের দাবি ছিলো, গেজেটেড’ এবং দ্বিতীয় শ্রেণি। কিন্তু গেজেটেড মর্যাদা দেয়া হয়নি।

উল্লেখ্য, প্রধান শিক্ষকদের বিষয়ে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর ওই বছরই ২৭ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয় প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছিলো, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার পদ দেয়ার আইনগত সুযোগ নেই। পরবর্তীকালে অবশ্য তাদের নন গেজেটেড দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তার পদ দেয়ার ব্যাপারে সায় মেলে।