কৃষকরা যেন লোকসানের মুখে না পড়ে

 

একটি দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে রফতানি আয়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্গত কারণেই রপ্তানি আয় বৃদ্ধির সামগ্রিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা জরুরি। বলার অপেক্ষা রাখে না, পাট যেমন পরিবেশবান্ধব, তেমনি পাট চাষও কৃষি জমিবান্ধব। কেননা যে জমিতে পাট চাষ করা হয় সেই জমির উর্বরতাও বৃদ্ধি পায়। উল্লেখ্য, পাটের কারণেই একসময় বাংলাদেশকে অভিহিত করা হতো সোনালি আঁশের দেশ হিসেবে। পাট ছিলো আমাদের প্রধান রফতানি পণ্য। সম্প্রতি যখন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেলো, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ মেয়াদে কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানিতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে ৭৩ কোটি ১০ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার বা প্রায় ৫ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা। তখন তা অত্যন্ত ইতিবাচক হবে। এই আয় এ সময়ের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের তুলনায় এ খাতের পণ্য রফতানি আয় ১৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেড়েছে।

যখন পাট রফতানি আয় লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ বেশি অর্জিত হয়েছে তখন তা স্বাভাবিকভাবেই সুখকর, ফলে বিষয়টিকে আমলে নিয়ে আয়ের ধারা যেন আরও গতিশীল হয় সেই বিবেচনায় সংশ্লিষ্টদের সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে হবে। সীমাবদ্ধতা বা সংকট চিহ্নিত করে সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবতায়নের মধ্যদিয়ে পাটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হতে পারে। ভুলে যাওয়া যাবে না, একটা সময় দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হতো আমাদের পাট। কৃষকরা পাট চাষে বেশি লাভবানও হতেন। পাট চাষের সাথে বাংলাদেশের কৃষকদের একটা গভীর সম্পর্কও আছে। ফলে পাট রফতানি আয় বৃদ্ধিতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ আবশ্যক। এছাড়া পাটজাত পণ্য এবং পাট মিলগুলোসহ সামগ্রিক বিষয়গুলোকে পর্যবেক্ষণ করেও পদক্ষেপ নিতে হবে, যেন কৃষকরা লোকসানের মুখে না পড়ে, পাট চাষে যেন অনাগ্রহী হয়ে না ওঠে এবং দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি বৃদ্ধি পায় সেই প্রচেষ্টাও অব্যাহত রাখতে হবে। সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করার পাশাপাশি ব্যাপক পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সংকট চিহ্নিত করা এবং তা সমাধানে উদ্যোগী হলে রফতানি আয়ের ধারা আরও গতিশীল হবে। বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে কাঁচা পাট রফতানিতে আয় হয়েছে ১৪ কোটি ২৪ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার; পাটের সুতা ও কুণ্ডলি রফতানিতে আয় হয়েছে ৪৪ কোটি ১৯ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার এবং পাটের বস্তা ও ব্যাগ রপ্তানিতে আয় হয়েছে ১১ কোটি ৮ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। যেখানে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানিতে আয় হয়েছিলো ৯১ কোটি ৯৫ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার।

আর যখন তথ্যমতে জানা যায়, চলতি অর্থবছরে এই খাতের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৬ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার  ফলে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে এই লক্ষ্যমাত্র অর্জন হবে এমনটি কাম্য। পাটজাত মোড়কের ব্যবহার তেমন নেই এরকম অভিযোগ আছে। ফলে এই বিষয়টিও আমলে নিতে হবে। সামগ্রিক বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে এমন উদ্যোগ নিশ্চিত হোক, যেন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি পাটের সুদিন উজ্জ্বলভাবে ফিরে আসে।