কোচিংয়ের সাথে জড়িত শিক্ষকদের শাস্তির আইন হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার: যেসব শিক্ষক ক্লাসে না পড়িয়ে শিক্ষার্থীদের ডেকে বাসায় কোচিং করান কিংবা প্রশ্ন ফাঁস করে মেধা ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন তাদের শাস্তির জন্য আলাদা আইন হচ্ছে। প্রশ্ন ফাঁসকারী শিক্ষকদের ‘কুলাঙ্গার ও শিক্ষক নামের কলঙ্ক’ অভিহিত করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, শিক্ষকদের আমরা মাথার মণি মনে করি। তারা সমাজে সর্বোচ্চ শ্রদ্ধার পাত্র। কিন্তু যেসব শিক্ষক ক্লাসে না পড়িয়ে টাকার বিনিময়ে পড়াতে শিক্ষার্থীদের বাসায় ডাকেন, যারা প্রশ্ন ফাঁস করেন এরা শিক্ষক নামের কলঙ্ক, এরা কুলাঙ্গার। এসব শিক্ষকদের ধরে ধরে শাস্তি দিতে আলাদা আইন করা হচ্ছে। গতকাল শনিবার রাজধানীর হোটেল ল্য মেরিডিয়েনে জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, প্রধান শিক্ষক ও মাস্টার ট্রেইনারদের কানেক্টিং ক্লাস রুমস শীর্ষক ওরিয়েন্টেশন কর্মশালায় শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন। ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর এ কর্মশালার আয়োজন করে। কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেনÑ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান এবং ব্রিটিশ কাউন্সিলের ডিরেক্টর বারবারা উইকহ্যাম, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক প্রফেসর শামসুল হুদা, ব্রিটিশ কাউন্সিলের কর্মকর্তা মাসুদা খাতুন প্রমুখ। ব্রিটিশ কাউন্সিল ও ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ডিএফআইডি) যৌথ অর্থায়নে গত ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশে ‘কানেক্টিং ক্লাসরুমস’ নামক গ্লোবাল প্রোগ্রামটি আয়োজিত হয়ে আসছে। এ প্রোগ্রামের মাধ্যমে দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় যাতে তারা পাঠদান কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় মৌলিক দক্ষতাগুলো সমন্বয় করতে পারেন। প্রোগ্রামটির সাফল্যের ধারাবাহিকতায়, সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর এবং ব্রিটিশ কাউন্সিলের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে, যাতে প্রোগ্রামটি দেশব্যাপী আরও কার্যকর উপায়ে বাস্তবায়ন করা যায়।

শিক্ষামন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন, শিক্ষকদের মানোন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। দেশে-বিদেশে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি শিক্ষকদের উন্নত নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন আদর্শ শিক্ষক হতে হবে। যাতে ছাত্রছাত্রীরা তাদের অনুসরণ করতে পারে। শিক্ষকদের মান উন্নয়নে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিজেদের মানোন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে তাদের নিবেদিতপ্রাণ হয়ে দেশের জন্য কাজ করতে হবে। সততা, নিষ্ঠা ও দেশের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে আদর্শ মানুষ তৈরি করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে আধুনিক বাংলাদেশের নির্মাতা করে গড়ে তুলতে হবে। তিনি আরও বলেন, কিছু শিক্ষক ক্লাসরুমে না পড়িয়ে বাড়িতে টাকার বিনিময়ে পড়ান। কেউ কেউ কোচিং বাণিজ্যে জড়িত। এরা শিক্ষক নামের কলঙ্ক। এদের চিহ্নিত করতে হবে। অসৎ লোকদের শিক্ষকতা পেশায় বরদাশত করা হবে না। দেশে সব শিক্ষক ভাল নয়। ভাল, মানবিক ও বিবেকবানদের মাঝেও কিছু কুলাঙ্গার রয়েছে যারা প্রশ্ন ফাঁস করছে। সারা বছর অনেক কষ্টে প্রশ্ন পাহারা দিচ্ছি। বিজি প্রেসে কঠোরভাবে প্রশ্ন পাহারা দেয়া হয়, প্রেসে যারা কাজ করে তাদের ভেতরে ঢুকতে হয় নির্দিষ্ট ড্রেস পরে। বের হতে হয়ে একইভাবে। রযেছে কঠোর নজরদারি। কিন্তু পরীক্ষার দিন সকালে প্রশ্ন হাতে পেয়েই তা ফাঁস করে দিচ্ছে ওইসব শিক্ষক। তাহলে কীভাবে এ প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাবো?

অভিভাবকদেরও সমালোচনা করেন শিক্ষামন্ত্রী। বলেন, শিক্ষকদের সঙ্গে অভিভাবকরাও প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত। তারা অতি উৎসাহী হয়ে সন্তানের জন্য পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন খুঁজে বেড়ান। এমন অনেকে আছেন যারা সন্তানকে বলেন, বাবা আর একটু কষ্ট কর, শুনেছি তোমার স্যার প্রশ্ন পেয়েছে, আমি আনতে যাচ্ছি। এমন অভিভাবক যদি দেশে থাকে তাহলে কীভাবে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি হবে? এক সময় ওই সন্তানই তার অভিভাবক ও শিক্ষককে ঘৃণা করে বলবে, ওরাই আমার জীবনটা নষ্ট করেছে। কর্মশালার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ব্রিটিশ কাউন্সিলের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে এ উদ্যোগ শিক্ষার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং আমাদের শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে। ব্রিটিশ কাউন্সিল দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে সহায়তা করে আসছে। এটা অব্যাহত থাকবে এবং ভবিষ্যতে আরও সম্প্রসারিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। বারবারা উইকহ্যাম বলেন, শিক্ষার্থীদের ২১ শতকের জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করানো আমাদের লক্ষ্য, আর লক্ষ্য অর্জনে আমরা শিক্ষকগণকে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করে যাচ্ছি। এতে করে তারা শিক্ষার্থীদের মাঝে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারবেন।

উল্লেখ্য, ২০০৯ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ২৫০টি স্কুলের প্রায় চার হাজার শিক্ষককে এ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। নতুন পর্বে আরও তিন হাজার প্রধান শিক্ষক এবং ৩ হাজার সহকারী শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেবে ব্রিটিশ কাউন্সিল।