রাজশাহীতে পুলিশ কর্মকর্তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) অফিসার্স মেস থেকে সহকারী কমিশনার (এসি) সাব্বির আহম্মেদ সরফরাজ প্রীতমের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকালে নগরীর শ্রীরামপুর এলাকার অফিসার্স মেসের (কেন্দ্রীয় কারাগারের দক্ষিণপূর্ব কোণে) নিচতলার একটি কক্ষের দরজা ভেঙে লাশটি উদ্ধার করা হয়। লাশ উদ্ধারের পুরো সময় তার বাবা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মো. ওবাইদুল্লাহ এবং আরএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তবে গতকাল দিনভর ওই পুলিশ অফিসার্স মেস চত্বরে বা ভেতরে কোনো সাংবাদিককে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ঘটনাস্থল থেকে বের হয়ে এসে সাব্বিরের বাবা ওবাইদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘মৃত্যু কিভাবে হয়েছে সে বিষয়ে এখন কিছুই বলতে পারব না। পুলিশ ঘটনা তদন্ত করছে। আগে লাশের ময়নাতদন্ত হোক। দেখা যাক সেখানে কী আসে।

পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ অফিসার্স মেসের কর্মচারীরা সাব্বিরের কক্ষের জানালা দিয়ে বাইরে থেকে ভেতরে তার লাশটি সোফায় বসা অবস্থায় দেখতে পান। জানালার গ্রিলের সঙ্গে বাঁধা নাইলনের রশিতে তার গলায় ফাঁস লাগানো ছিল। এ সময় তারা ঘটনাটি অফিসার্স মেস কর্তৃপক্ষকে জানান। দ্রুত আরএমপির কমিশনার মো. সফিকুল ইসলাম এবং পুলিশের ক্রাইম সিনের সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। কিন্তু সাব্বিরের বাবা পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি ও আরএমপির সাবেক কমিশনার মো. ওবাইদুল্লাহর জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। সে সময় তিনি ঢাকায় থাকায় তাত্ক্ষণিকভাবে লাশটি উদ্ধার করা হয়নি। বিকাল চারটায় ঢাকা থেকে বিমানে করে ওবাইদুল্লাহ রাজশাহী পৌঁছালে তার উপস্থিতিতে কক্ষের দরজা ভেঙে লাশ উদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। বিকাল সাড়ে পাঁচটার পর লাশ নামানো ও আলামত সংগ্রহ শেষে বেরিয়ে যাবার সময় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আলামত দেখে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে তিনি (এসি সাব্বির) আত্মহত্যা করেছেন। তাঁর মানিব্যাগ থেকে রক্ত দিয়ে লেখা ‘লাভ ইউ’ চিরকুট উদ্ধার করেছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের সদস্যরা। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য অ্যাম্বুলেন্সে করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

এর আগে দুপুরে ঘটনাস্থল ঘুরে গিয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের (রামেক) ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এনামুল হক সাংবাদিকদের জানান, ‘এসি সাব্বিরের গলায় নাইলনের দড়ির ফাঁস লাগানো ও লাশটি সোফায় বসা অবস্থায় রয়েছে। দড়ির অপর প্রান্ত জানালার গ্রিলে বাঁধা রয়েছে। সোফায় কোনোভাবে পা ফসকে গলায় ফাঁস লেগে তিনি মারা গেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ঘরের দরজা ভেতর থেকে ছিটকিনি দিয়ে বন্ধ করা ছিল। ওই কক্ষে ঢোকার আর কোনো ব্যবস্থা না থাকলে এবং শরীরে যদি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া না যায় তাহলে এটাকে আত্মহত্যা বলা যাবে।

পুলিশ ও পারিবারিকসূত্রে জানা গেছে, এসি সাব্বির বিবাহিত। তার স্ত্রী পেশায় একজন চিকিত্সক। তিনি রাজশাহীতেই কর্মরত। এই দম্পতির তিন বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তিনি নগরীর উপ-শহরের পৈতৃক বাড়িতে বসবাস করতেন। এছাড়া আরএমপি সদর দপ্তরের উল্টো দিকে তার শ্বশুরের বাসা। শ্বশুরও পেশায় চিকিত্সক। আরএমপির সদর দপ্তরের সামনে শ্বশুরের বাসা এবং উপ-শহরে পৈতৃক বাসা থাকা সত্ত্বেও তিনি পুলিশ অফিসার্স মেসে নিজ নামে কক্ষ বরাদ্দ নিয়েছিলেন। সেখানে তিনি নিয়মিত বিশ্রাম নিতেন। গত শুক্রবার নৈশকালীন ডিউটির পর শেষ রাতের দিকে অফিসার্স মেসে যান। পরে সকালে কর্মচারীরা জানালা দিয়ে তাকে ফাঁস লাগানো অবস্থায় দেখে।

আরএমপির মুখপাত্র ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) ইফতে খায়ের আলম জানান, ‘ঘরের দরজা যেহেতু ভেতর থেকে বন্ধ ছিল, তাই প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তিনি (সাব্বির) আত্মহত্যা করেছেন। তারপরেও বিষয়টি পুলিশের বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয়ে সূক্ষ্মভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। জানা যায়, সাব্বির ৩১তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। সর্বশেষ তিনি আরএমপির রাজপাড়া জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাদের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা ইউনিয়নের বাবুপুরে। চিকিত্সক স্ত্রীর সঙ্গে সাব্বিরের কোনো সমস্যা ছিল কি-না সে ব্যাপারে কেউ মুখ খোলেনি। সাব্বিরের স্ত্রীর পরিবারের সদস্যরা সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।