জটিল রোগে আক্রান্ত চুয়াডাঙ্গার ডিহি গ্রামের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী সজিফা : জন্ম থেকে আজ অবদি পরতে পারেনি শুকনো কোনো পোশাক

বেগমপুর প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা সদর ডিহি গ্রামের মানিকতলাপাড়ার ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী সজিফা অজানা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। সার্বক্ষণিক ফোটায় ফোটায় প্রসাব পড়ায় আজ অবদি পরতে পারেনি কোনো শুকনো পৌশাক। সজিবা দিনদিন বেড়ে ওঠায় তার ভবিষ্যত ভবিষ্যত নিয়ে দুঃচিন্তায় পড়েছে হতদরিদ্র দিনমজুর পিতা। অজানা রোগের চিকিৎসা না পেয়ে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ফিরতে হয়েছে শূন্যহাতে। অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসাও দিতে পারছেন না দিনমুজুর পিতা শফিকুল ইসলাম।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের ডিহি মানিকতলাপাড়ার দিনমজুর শফিকুল ইসলাম ঘরে স্ত্রী শিউলী বেগম, তিন সন্তান সজিফা (১৪), সজিব (১২) ও সাব্বির (৪) নিয়ে তাদের গরিবের সংসার। দিনমজুর শফিকুল প্রতিদিনের শারীরিক পরিশ্রমের আয় দিয়েই চলে তার সংসার। অভাব অনটনের মধ্যেই এই দূরমূল্যের বাজারে সংসার চলে তার। জন্ম থেকেই বড় মেয়ে সজিফা খাতুন অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। সংসার চালানোর পাশাপাশি বড় মেয়ে সজিফার লেখাপড়া ও চিকিৎসা চালিয়ে আসছেন তিনি। সাধ্যমত অনেক জায়গায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেছেন সজিফাকে। সর্বশেষ গত মাসে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নিয়ে যান তাকে। সেখানকার ডাক্তাররা কয়েক দিন রেখে শফিকুলকে জানিয়ে দেয় এমন রোগী চিকিৎসকরা জীবনেও দেখেননি। হতাশা নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। সেই থেকে অর্থাভাবে মেয়ের চিকিৎসা দিতে না পেরে বাড়িতেই মেয়ের বেড়ে ওঠা এবং ভবিষ্যত  জীবন নিয়ে দুঃচিন্তায় দিন কাটছে তার। বিনা চিকিৎসায় মেয়ে জীবনের সব স্বপ্ন থেকে বঞ্চিত হবে এমনটা ভাবতেই পারছেন না শফিকুল।

গতকাল সরেজমিনে সজিফার পিতা শফিকুল ইসলামের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, আড়াই কাঠা জমির ওপর জীর্ণ ঘরে স্ত্রী তিন সন্তান নিয়ে তার বসবাস। সম্পদ বলতে ভিটে জমিটুকুই। প্রতিবেশিরা জানালেন, শফিকুল দিনমুজুর খেটে খাওয়া মানুষ। তার ওপর বড় মেয়ে সজিফা জন্মলগ্ন থেকেই অজানা রোগে আক্রান্ত। কারো প্রথম সন্তান রোগাক্রান্ত হলে সে পরিবারের মানুষের মানসিক অবস্থা কেমন থাকে তা সহজেই অনুমেয়। কী রোগে আক্রান্ত জানতে চাইলে প্রতিবেশিরা বলেন, জন্ম থেকেই সজিবার প্রসাবের থলী পেটের বাহিরে। যা বর্ণনা করার মতো না। যেখান থেকে সবসময় খেজুর গাছের রস পড়ার মতো ফোটায় ফোটায় প্রসাব পড়তে থাকে। যার কারণে কোনো পোশাক পরলেই তা কিছুক্ষণের মধ্যে ভিজে যায়। শরীরের ভেজা পোশাক থাকলে তা দুর্গন্ধ ছড়ায়। দুর্গন্ধের কারণে রাজশাহীতে নিয়ে গেলেও চিকিৎসকেরা ঠিকমত তার দেখভাল করেনি। সজিফার পিতার এমন কিছু নেই যে, তা বিক্রি করে মেয়ের চিকিৎসা করাবে। তার বয়স এখন ১৪ বছর হলেও সে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী। সহপাঠিরা তার কাছে বসতে অনীহা করে। তাতে তার মনে কষ্ট থাকলেও তা প্রকাশ করতে পারে না সজিফা।

সজিফার মা শিউলী বেগম কাপা কাপা কণ্ঠে মেয়েকে নিয়ে কষ্টের কথা শোনালেন। দরিদ্র হওয়ার কারণে সঠিক চিকিৎসা করাতে পারছে না তার মেয়েকে। বসতভিটা ছাড়া আর কিছুই নেই তার। বর্তমান দূরমূল্যের বাজারে দুবেলা খাবার জোটানোই যেখানে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে মেয়ের চিকিৎসা করানোর কথা ভাবতেই পারছেন না তিনি। আর অন্যের কাছে সাহায্যের হাত পেতে চলাটাও আত্মসম্মানে বাধে তাদের।

অপর দিকে মেয়ের অজানা রোগ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন হলেও অর্থাভাবে সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে আর দশটা সাধারণ মানুষের মতো সজিফারও স্বপ্ন আরো অনেকটা পথ পাড়ি দেয়ার। কিন্তু নিয়তি কি অপেক্ষা করছে তার জন্য? একটু চিকিৎসা সহায়তা? নাকি ধিরে ধিরে নিশ্চিত মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা? তা কেবল সময়ই বলে দিতে পারে। তাই করুণা নয়, সমাজের দানশীল ব্যক্তিদের একটু সহানুভূতি পারে কেবল সজিফার বেঁচে থাকার রসদ। এ অসহায় জীবন থেকে মুক্তি পেতে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান সজিফার পরিবারসহ প্রতিবেশিদের।