রগচটা দাদার লাঠিঘাতে নাতি নিহত এবং

সম্পাদকীয়
‘রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন’ উক্তিটি জেনেও ক’জনই তা মনে রাখেন? এ জন্যই বলা হয়, বহুবলে কাউকে পরাস্ত করার চেয়ে রাগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারাটাই বাহাদুরি। যদিও স্থান-কাল-পাত্র ভেদে কেউ কেউ রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে ঘটিয়ে ফেলেন বড় ধরনের অঘটন। জীবনভর খেসারত দিয়েও স্বস্তি মেলে না। জীবননগর গঙ্গাদাসপুরে যে দাদা লাঠি দিয়ে মেরে আদরের নাতিকে হত্যা করেছেন, তার জীবদ্দশায় কোনোভাবেই কি সান্ত¦না খুঁজে পাবেন? অথচ হত্যাকা-টি রাগের বসবর্তির কুফল হলেও গুরুতর দ-নীয় অপরাধ। অবশ্য শিশু হত্যাকা-টি ধামাচাপা দেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা চলেছে। সেই চেষ্টায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপতালের দায়িত্বশীলেরও অপ্রত্যাশিত সহযোগিতার ছোঁয়া রয়েছে। তা না হলে মারা যাওয়ার পর রেফার কেন?
রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারাটা মানুষের বড় গুণ। তার চেয়ে ভালোগুণ হলো, ত্যাগের মহিমায় নিজেকে মহৎ করতে পারা। যে পিতা তার সন্তানের সাথে নিজেদের জমিতে আবাদ করা ধানের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বিরোধে জড়িয়েছেন সেই পিতাকে আর যাই হোক শান্ত মেজাজের মানুষ বলা চলে না। রগচটা উগ্র মেজাজের না হলে কি কেউ লাঠি দিয়ে পুত্রবধূকে মারতে ছোটেন? পুত্রবধূকে মারতে না পেরে কোলে থাকা ৪ মাস বয়সী নাতির মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করা কতোটা উগ্রতা, কতোটা পশুত্বতার প্রকাশ তা বোদ্ধাদের বুঝতে নিশ্চয় বাকি থাকার কথা নয়। ঘটনাটি ঘটে গতপরশু সন্ধ্যায়। দাদার লাঠিঘাতে আহত শিশু আল মিরাজকে নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। চিকিৎসার কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যায়। কান্নাকাটিও শুরু হয়। এরপর রেফার করিয়ে নিয়ে শ্যালোইঞ্জিন চালিত আলমসাধুযোগে নিথর দেহ নেয়া হয় নিজ গ্রাম গঙ্গাদাসপুরে। এরপর আইন উপেক্ষা করে লাশ দাফনের নানামুখি তৎপরতা শুরু হয়। দরকষাকষিও চলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত পুলিশ সন্ধ্যায় শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে নিয়েছে। শিশুর পিতা বাদি হয়ে তার পিতার বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। লাশ উদ্ধারে দীর্ঘ গড়িমসি করলেও আসামি ধরে আইনে সোপর্দ করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে পুলিশ নিশ্চয় উদাসীন হবে না। তাছাড়া আঘাতপ্রাপ্ত এক শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ার পর পুলিশকে না জানিয়ে রেফার করা হয়েছে বলে অভিযোগ, এ অভিযোগেরও যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে বিভাগীয় তদন্ত করা উচিৎ। কেনো না, এ ধরনের অভিযোগ আমলে না নিলে দু একজনের জন্য গোটা চিকিৎসা বিভাগটাই চরম আস্থাহীনতার মধ্যে পড়বে।
নিজের সন্তানকে হত্যা দুরাস্ত, সন্তানকে মারপিট করাও অপরাধ। এরপর সন্তানের সন্তানকে হত্যা করা? আইনের দৃষ্টিতে সেটাও দৃষ্টান্তমূলক দ-নীয় অপাধ। কেউ বাদী হয়ে মামলা করলো কী করলো না, সেটার জন্য পুলিশের অপেক্ষার সুযোগ নেই। পুলিশকেই বাদী হয়ে মামলা করার আইনগত নির্দেশ স্পষ্ট। তারপরও কোনো কোনো ক্ষেত্রে অভিযোগকারী নেই অজুহাতে বড় ধরনের অপরাধমূলক ঘাটানও বেমালুম এড়িয়ে যান পুলিশের কোনো কোনো কর্তা। যার খেসারত সমাজকে দিতে হয়। সমাজে অপরাধ প্রবণতা রোধের জন্যই আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ পদ্ধতির প্রচলন। এতে গড়িমসি মানেই অন্যায়কে সমর্থন করা। একজন অন্যায় করে পার পেলে সমাজে অন্যায়ের মাত্রাই শুধু বাড়ে না, অন্যায়কারীর সংখ্যাও চক্রবৃদ্ধি আকারে ছড়ায়।
পুনশ্চ: রাগির রাগ নিবারণের মহাওষুধের নাম আইন, ওমেগা-৩ সহায়ক।