চুয়াডাঙ্গা উজলপুরের দিনমুজুর ইসলামুল পেয়েছে গোল্ডেন এ প্লাস : ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে কি?

 

নজরুল ইসলাম: যখন পরীক্ষার ফল পেতে চারি দিকে ছুটছুটি পরীক্ষার্থীদের। তখনও মাঠে পিতার সাথে কামলা খাটছে ইসলামুল হক। লেখা পড়ার ফাঁকে নয়, বরং ইসলামুল হক দিনমুজুরের কাজের ফাঁকে ফাঁকে পড়ালেখা করেই কাঙ্ক্ষিত সাফল্য ছিনিয়ে এনেছে। দরিদ্র মা-বাবার অভাবের সংসারে বেড়ে ওঠা ইসলামুল জয় করেছে তিনবেলা পেটপুরে না খাওয়ার কষ্ট। ইসলামুল পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে টেলেন্টপুলে বৃত্তি এবং এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে গোল্ডেণ জিপিএ-৫ পেয়ে দরিদ্র পিতা-মাতার মুখে বাঁধভাঙা হাসি ফুটিয়েছে। তার সাফল্যে উচ্ছ্বসিত হাসি হতদরিদ্র মা শাবানা বেগমের মুখে। দর্শনা কেরুজ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ইসলামুল হক এ সাফল্য অর্জন করেছে। এ জন্য সে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিকট চিরঋণী।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের উজলপুর গ্রামের মজিবর রহমান দিনমুজুর। তিনকাঠা ভিটা জমির ওপর ছোট একটি মাটির দেয়ালে টিনের চাল দেয়া ঘরে বসবাস। মাঠে আছে সামান্য একটুকরা জমি। স্ত্রী ও তিন ছেলে নিয়ে ৫ জনের সংসার তার। দারিদ্র্যতার কারণে নিজে লেখা পড়া করতে পারেননি। তাই সন্তানদের লেখাপড়া শেখানোর প্রবল ইচ্ছা তার। একদিকে পরিবারের পাঁচ সদস্যের দুবেলা দুমুঠো ভাতের ব্যবস্থা করা, আর অন্যদিকে তিন ছেলের লেখাপড়া চালানো নিয়ে হাঁফিয়ে ওঠেছে মজিবর রহমান। কথনও ভালো খাবার কিংবা পোশাক পরার সৌভাগ্য হয়নি তার। তবে থেমে যায়নি কখনো সে। সংসারের অন্ন জোগাতে নিজে  বিদ্যার্জনের সুযোগ না পাওয়ায় সন্তানদের লেখা পড়া শিখিয়ে মানুষের মত মানুষ করতে দিনমুজুরের কাজ করছেন নিরন্তন। হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পয়সায় বড় ছেলে ফারুক হোসেন চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজের বিএ ক্লাসে লেখা পড়া করছে। মেজ ছেলে ইসলামুল হক কেরুজ উচ্চবিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে গোল্ডেণ জিপিএ-৫ পেয়েছে। ছোট ছেলে ছাদিক হোসেন দক্ষিণচাঁদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র।

ইসলামুলের সাথে কথা বলে জানা গেলো, পিতার কাজের সহযোগিতা কিংবা নিজে দিনমুজুর খাটা সবটায় করতে হয়ছে তাকে। এরি মাঝে বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকদের সহযোগিতায় আর চেনাজানা বন্ধুদের বইয়ের ধার করে লেখা পড়া করেছে।

ইসলামুল বলে, পড়াশোনা করে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখি আমি। এ জন্য সব ত্যাগ স্বীকার করতে রাজি আছি। আমার সংগ্রামী মা-বাবা যে আমাকে সব সময় লেখাপড়ায় উৎসাহ জুগিয়েছে, আমি তাদের মলিন মুখে হাসি ফোটানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। স্কুলের শিক্ষকরা আমাকে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। শত অভাব-অনটনের মধ্যেও তারা আমাদের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার উৎসাহ যুগিয়েছেন। অনাহারে-অর্ধাহারেই কখনও কখনও স্কুলে যেতে হয়েছে আমাকে। আমাকে এখনও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। কি করে পাড়ি দেবো তাই ভাবছি। ডাক্তার হয়ে গ্রামে ফিরে এসে মানুষের সেবা করতে চাই। প্রতিবেশি বেগমপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসলাম উদ্দীন বলেন, এ প্রতিভা বিকশিত করতে আমাদের সকলের এগিয়া আসা উচিত। ইসলামুলকে ডাক্তার বানাতে পারলে আমাদের গ্রামেরই গৌরব।

এদিকে প্রবল ইচ্ছে শক্তির কারণে দারিদ্রতাকে জয় করেছে ইসলামুল হক। অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে  মেধাবী ইসলামুলের উচ্চশিক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অদম্য ইচ্ছে শক্তি, নিরলস অধ্যবস্যায় ও আত্বপ্রত্যয়ী মনোভাব থাকলেও অর্থাভাবে ইসলামুল কি তার লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারবে? ডাক্তার হয়ে দেশ ও জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে পারবে। না কি স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়াবে দারিদ্র্যতার অভিশাপ। তার উচ্চশিক্ষার ব্যয়ভার কি ভাবে চলবে তা নিয়ে দিনমুজুর বাবা মজিবর রহমান ও গৃহিনী মা শাবানা বেগমের দু’চোখে ঘোর অন্ধকার। সন্তানদের ভবিষ্যৎ শিক্ষা জীবন নিয়ে তারা শংকিত। কে যোগাবে তাদের শিক্ষার খরচ ?