স্কুলছাত্রী রুবিনা হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি তীব্র থেকে তীব্রতর

রুবিনার মা

হুমায়ুন বাঙালসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার প্রস্তুতি : আজ স্মারকলিপি পেশ
স্টাফ রিপোর্টার: ‘চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের হকপাড়া সংলগ্ন দক্ষিণ গোরস্থানপাড়ার স্কুলছাত্রী রুবিনাকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর তার লাশ তাদেরই বাড়ির ওঠোনের আমগাছে গলায় ওড়না বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এরপর থেকেই প্রতিবেশী হুমায়ুন কবির ওরফে হুমায়ুন বাঙাল আত্মগোপন করে। তার স্ত্রী আরজিনা খাতুন ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য রুবিনার দরিদ্র মা চায়না খাতুনকে নানাভাবে প্রভাবিত করে লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের জন্য চাপ দিতে থাকে।’ স্থানীয়রা এসব তথ্য জানার পর হুমায়ুন বাঙাল ও তার স্ত্রীকে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির লক্ষ্যে পুলিশি তৎপরতা জোরদার করার আহ্বান নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। অভিন্ন দাবি নিয়ে আজ রোববার চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নিকট স্মারকলিপি পেশ করবে এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী বলেছে, হকপাড়া সংলগ্ন দক্ষিণ গোরস্থানপাড়ার বাসিন্দা হুমায়ুন কবির সুদের কারবারি। দীর্ঘদিন ধরেই নানা অভিযোগে অভিযুক্ত। তারই প্রতিবেশী হতদরিদ্র চায়না খাতুন। চায়না খাতুনের স্বামী রবি ঢাকার কুনাবাড়িতে থাকে। সেখানেও তার একটা স্ত্রী রয়েছে। চয়না খাতুনের মেয়ে রুবিনা চুয়াডাঙ্গার প্রভাতী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্রী ছিলো। তার মা চায়না খাতুনকে পরের বাড়ি ঝিয়ের কাজ করতে হয়। বাড়িতে রুবিনাকে একাই থাকতে হতো। সেই সুযোগে প্রতিবেশী হুমায়ুন কবির কিশোরী রুবিনাকে ফুঁসলাতো। হুমায়ুন কবির প্রভাবশালী হওয়ার কারণে রুবিনার মা বিষয়টি জেনেও তেমন প্রতিবাদ করেননি। গত মঙ্গলবার দুপুরে যখন চায়না খাতুন পরের বাড়ি গৃহপরিচারিকার কাজ করতে গেছেন তখনই রুবিনাকে ধর্ষণ করা হয়। অনেকেরই ধারণা, দৃশ্য দেখে ফেলায় ধর্ষক ও তার স্ত্রী মিলে হত্যার পথে হাটে। লাশ আমগাছে ঝুলিয়ে রাখার পর ঘটনাটি খেলতে গিয়ে গলায় ফাঁস লেগে মারা গেছে বলে চালানোর চেষ্টা চলে। লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্ত না করার পক্ষে সন্দেহজনক আচরণ করতে থাকেন চায়না খাতুন। হুমায়ুন কবির গা ঢাকা দিলেও তার পক্ষের কয়েকজন লাশ দ্রুত দাফনে মেতে ওঠে। ঢাকা থেকে ফিরে বলেন, মেয়ে আত্মহত্যা করেনি। এ মৃত্যুর আড়ালে রহস্য রয়েছে। ফলে ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ দাফন করা যাবে না। অবশেষে সন্ধ্যায় লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন বুধবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে ময়না তদন্ত করা হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে এলাকার সাধারণ মানুষ রাস্তায় নামেন। মিছিল ও মানবন্ধন করে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। মানববন্ধনে অশংগ্রহণকারীদের মধ্যে নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, ওই হুমায়ুন বাঙলাই সকুলছাত্রী রুবিনাকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করেছে।
লাশ উদ্ধারের পর মেয়ের মৃতদেহ ময়নাতদন্তে আগ্রহী না হওয়ার কারণ কি? গতকাল এ প্রশ্ন করা হলে রুবিনার মা হতদদ্রি চায়না খাতুন বলেন, মেয়েকে নতুন জামা পরিয়ে কাজে গেলাম। ফিরে শুনি মেয়ে খেলতে গিয়ে গলায় ফাঁস লেগে মারা গেছে। হুমায়ুন বাঙালের স্ত্রী আরজিনা খাতুন বললো, পুলিশ এলে বলবি মেয়ে প্ররই গলায় ফাঁসলাগিয়ে খেলা করতো। স্কুলে সে পলিথিন দিয়ে গলায় ফাঁস লাগাতো। এসব না বললে পুলিশ লাশ নিয়ে যাবে। ময়না করলে মেয়ে কষ্ট পাবে। এসব শুনে কিছু বুঝতে না পেরে তখন ওদের শেখানো কথাই বলেছিলাম। ওই হুমায়ুন বাঙালই আমার মেয়েকে সর্বনাশ করেছে, সর্বনাশ করে হত্যা করেছে। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই। হত্যার সাথে জড়িত ৫ জনকে আসামি করতে হবে।
এদিকে এলাকার সাধারণ মানুষ হুমায়ুনের বিরুদ্ধে ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে। তারা আজ স্মারকলিপি পেশ  করবে। ওপরদিকে আইনগত সহায়তার হাত বাড়িয়েছে চুয়াডাঙ্গা পলাশপাড়ার মানবতা ফাউন্ডেশন।
এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, গতকাল সরেজমিন পরিদর্শন করে রুবিনার মাসহ এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে নেতৃবৃন্দ নিশ্চিত হয়েছেন, রুবিনাকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারী ইতোমধ্যেই আত্মগোপন করেছে। ফলে এ হত্যাকা-ের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়া প্রয়োজন। সরেজমনি পরিদর্শন কালে এ মন্তব্য করেন মানবতা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অ্যাড. মানি খন্দকার। সাথে ছিলেন সমন্বয়কারী রউফুন নাহার রীনা, গণসংযোগ কর্মকর্তা হাফিজ উদ্দীন, শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ সেলেররর সমন্বয়কারী অ্যাড. কাইজার হোসেন জোয়ার্দ্দার, অ্যাড. জিল্লর রহমান জালাল প্রমুখ। রুবিনার মায়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে মানবতা ফাউন্ডেশন মামলা রুজুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। হুমায়ুন বাঙালসহ ৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত বলে জানা গেছে।