এ গড্ডালিকা থেকে সত্যিই বের হওয়া দরকার

একটি শহরে পা দিয়েই বিচক্ষণ বুঝতে পারেন, শহরের মানুষগুলো কতোটা সচেতন, দায়িত্বশীলেরা কতোটা দূরদৃষ্টির। কীভাবে? প্রধানত সড়ক দেখে। যে শহরের সড়ক অলি-গলি প্রশস্ত, পাড়া মহল্লা পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা, সেই শহরের মানুষ যে সচেতন তা বুঝতে কি বিবেকবানদের বাকি থাকে? অথচ বিবেকবানদের অনেকেই নিজেদের বেলায় সেই সচেতনতার, সেই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেন না। কেন? ‘কেউ ছাড়ে না, আমি ছাড়বো কেন?’ ক্ষতিকর এই রেওয়াজ মূলত আইন প্রয়োগে অনিয়ম, অসচ্ছতার কারণেই। নগর উন্নয়নে জনগণের অর্পিত দায়িত্ব পাওয়া নেতার ভোট হারানোর ভয়ে আইন প্রয়োগে নমনীয়তাও কম দায়ী নয়। এ গড্ডালিকা থেকে সত্যিই বের হওয়া দরকার।
পার্শ্ববর্তী কয়েকটি জেলা শহরের তুলনায় চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরটি কেমন? কারো কারো দৃষ্টিতে প্রায় একই রকম বলে মনে হলেও পরিকল্পনায় যে বহু পিছিয়ে তা কয়েকটি চিত্র তুলে ধরলে বুঝতে বোকারও কষ্ট হওয়ার কথা নয়। এখন পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের বাইপাস সড়ক নির্মাণ সম্ভব হয়নি। বাসটার্মিনাল থাকলেও ট্রাক টার্মিনাল না থাকার কারণে জেলা শহরের প্রধান সড়কজুড়েই চলে তা ধোয়া মোছার কাজ। বিসিক নেই। জেলা শহরের ঘিঞ্জি এলাকায় এখনও রয়েছে দূরপাল্লার কোচ থামিয়ে যাত্রী ওঠা- নামানোর পুরোনো অভ্যাস। কাউন্টারের সামনে কোচ না থামলেই যেন নয়। অথচ এক দু মিনিট কোচ থামানোর কারণে শহরের চিত্রটা ভয়ানক হয়ে ওঠে। বিপণী বিতানগুলোর একটিতেও নেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সমবায় ব্যাংকের সহায়তায় গড়ে ওঠা নিউ মার্কেটটি কতোটা নিরাপত্তাহীন তা গতপরশু বৈদ্যুতিক শটসার্কিট হয়ে পাখির বাসায় আগুন লাগার মধ্যদিয়েই স্পষ্ট হয়েছে। সিভিল ডিফেন্সের লাল গাড়িতে সংরক্ষিত পানিতে না কুলালে কেঁদে কেটেও কুল থাকতো না। আর পৌর এলাকার পাড়া-মহল্লা? এতোটাই অপরিকল্পিত ঘিঞ্জি যে, বহু বাড়িতে রোগী নেয়ার অ্যাম্বুলেন্স দূরের কথা মারা গেলে খাটিয়া ঢোকানোর অবস্থা নেই। আর আগুন লাগলে? স্বয়ং সৃষ্টি কর্তাই যেন ভরসা।
আবাসন গড়ে তুললেই হয় না, বসবাসের উপযোগী হওয়া বাধ্যতামূলক। বিশেষ করে পৌর এলাকায় পৌরসভার দায়িত্বশীলদের এ বিষয়ে বিধি সম্মত পদক্ষেপ নেয়ার কথা। অনুমতি ছাড়া একটি ইট গাঁথারও সুযোগ নেই। তাহলে ফায়ার স্টেশন ও সিভিল ডিফেন্সের গাড়ি দূরের কথা অ্যাম্বুলেন্স রিকশাও বহু গলিতে নেয়া যাবে না। তাহলে সেখানে আবাসন গড়ে উঠলো কীভাবে? নিশ্চয় অলৌকিকভাবে রাতারাতি কোনো মহল্লা গড়ে ওঠেনি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দুর্নীতি। বিধি মানতে বাধ্য করলে না জানি ভোটটাই হাতছাড়া হয়, এই শঙ্কা বহুলাংশেই সর্বনাশের কারণ হয়েছে, হচ্ছে। আর জেলা শহরের বড় বড় বিপণী বিতানগুলোও নিশ্চয় পৌরসভার অনুমোদিত নকশার বাইরে নির্মাণ করা হয়নি। তাহলে নকশায় কেন জরুরি প্রয়োজনে পানি জোগানের ব্যবস্থা নেই। কেনই বা জরুরি প্রয়োজনে বিশাল মার্কেটের রাস্তায় গাড়ি প্রবেশের মতো ব্যবস্থা রাখা হয়নি? নাকি নকশায় থাকলেও বাস্তবে সেগুলোর হদিস নেই? অনুমোদিত নকশা মতোই তো স্থাপনা নির্মাণ করতে হয়। অন্যথায় ভেঙে নতুন করে নির্মাণের মতো কড়া নির্দেশ দেয়ারও বিধান রয়েছে। এসব হয় না কেন? নাকি অনুমোদিত নকশায় সেরকম কিছুই নেই? না থাকলে কোন প্রকৌশলী সেই নকশা অনুমোদন করলেন?
বহু প্রশ্ন আছে, আছে দায় এড়ানোর বহু অজুহাতও। তাতে দিন চলে গেলেও ভবিষ্যত প্রজন্মের কাঠগড়ায় যে বর্তমানকে এক সময় দাঁড়াতেই হবে তা দায়িত্বশীলদের বোঝা উচিত। ক্ষতির পর নয়, ক্ষতির আগেই ক্ষতি এড়ানোর মতো পদক্ষেপ নেয়াটাই দায়িত্বশীলদের দূরদর্শিতা। যেটা হয়ে গেছে সেটা নিয়ে এখন আর কি করার আছে? না, এটা বলে দায় এড়ানো নয়, শহরকে পরিকল্পিতভাবেই গড়তে হবে, করতে হবে নিরাপদ। অলিগলি সম্প্রসারিত করা বিলাসিতা নয়, জীবনের জন্যই প্রয়োজন। পুরোনো সড়ক এখন যতোটা সম্ভব প্রশস্ত করতে হবে। নতুন সড়ক নির্মাণে কার্পণ্যতা কাম্য নয়। শুধু বিপণী বিতানই নয়, সকল স্থাপনার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।