চুয়াডাঙ্গার কালুপোল রাজার ভিটা পরিদর্শনকালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালক — জমি পেলেই শুরু করা হবে জাদুঘর তৈরির কাজ

 

নজরুল ইসলাম: চুয়াডাঙ্গা সদরের কালুপোল রাজার ভিটায় আবিষ্কৃত পুরাকীর্তি দেখার জন্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালক আলতাফ হোসেন। গতকাল বুধবার দুপুর ১টার দিকে আকস্মিক রাজার ভিটা পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, বাংলাদেশ অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ঐতিহ্যের অধিকারী। আড়াই হাজার বছরের অধিক সময়ে এদেশে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী, শাসক শ্রেণি গড়ে তোলেন অসংখ্য ইমারত, নগর, প্রাসাদ, দুর্গ, মন্দির, মসজিদ, বিহার ও সমাধি সৌধ। এসব ঐতিহ্যের অধিকাংশই কালের গর্ভে বিলীন হলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সংস্কৃতি চিহ্ন এদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আজও টিকে আছে। যা প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন হিসেবে সমধিক পরিচিত। এসব প্রত্ননিদর্শনের অনুসন্ধান, খনন, সংরক্ষণ, প্রদর্শন এবং গবেষণার মাধ্যমে ইতিহাস পুনরুদ্ধারে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর কাজ করে যাচ্ছে। আর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হচ্ছে পুরানো বা প্রাচীন স্থাপত্য ও শিল্পকর্ম, মূর্তি বা ভাস্কর্য, অলঙ্কার, প্রাচীন আমলের মুদ্রা, পুরোনো মূল্যবান আসবাবপত্র। যা প্রাচীনকালের মানুষের সামাজিক, সাংস্কৃতিক অবস্থা, জীবনযাত্রা, সংস্কার, রুচি বা দৃষ্টি ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা লাভ করাই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। আর এ সব মহামূল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কারে বিভিন্ন সময় জরিপের কাজ করা হলেও জরিপ থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলা বাদ পড়ে গেছে। যার কারণে এ জেলাটির প্রাচীন ইতিহাস সঠিকভাবে জানা সম্ভব হয়নি। দেরিতে হলে সে কাজটি শুরু করা সম্ভব হয়েছে। শুরুতেই চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কালুপোল গন্ধর্প রায় রাজার (রাজার ভিটা) প্রাসাদে প্রাথমিক খননকাজ করতে গিয়ে বেশকিছু প্রাচীন নিদর্শনের নমুনা আবিষ্কার হয়েছে। স্থানটিকে সংরক্ষণ পুরাকীর্তি স্থান ঘোষণা করতে পারলেই মূলকাজ শুরু হবে। আর এ ভিটা থেকে যে সমস্ত নিদর্শন পাওয়া যাবে তা সংরক্ষণ করে রাখার জন্য প্রয়োজন হবে জাদুঘরের। এলাকার মানুষ জমির ব্যবস্থা করে দিলেই আমি দ্রুত কালুপোলে জাদুঘর করার কাজ শুরু করতে পারবো। এখানে জাদুঘর স্থাপন হলে এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি জেলার প্রাচীন ইতিহাস হবে সমৃদ্ধশালী। আলোচনা শেষে মহাপরিচালক রাজার ভিটা খননের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখেন এবং আবিষ্কার হওয়া নমুনাগুলো সম্পর্কে এলাকাবাসীকে ধারণা দেন। সেই সাথে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য কালুপোল গ্রামবাসীকে ধন্যবান জানান।

এ সময় মহাপরিচালক আলতাফ হোসেনর সাথে ছিলেন, খুলনা প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদফতরের আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা, সহকারী পরিচালক একেএম সাইফুর রহমান, কাস্টোডিয়ান মহিদুল ইসলাম, কাস্টোডিয়ান গোলাম ফেরদৌস, সিনিয়র ড্রাফটসম্যান জাহানদার আলী, বিভাগিয় ফর্টোগ্রাফার আব্দুস সামাদ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- মেহেরপুর পল্লীবিদ্যুত সমিতির সভাপতি (চুয়াডাঙ্গা জোন) আকরামুল হক বিশ্বাস খোকন, তিতুদহ ইউপি চেয়ারম্যান আকতার হোসেন, ইউপি সদস্য জাকির হোসেন, মজিবার রহমান, বরকত আলী, রবিউল ইসলাম রুনু, আবদার হোসেন, রহিম, মিনাজ উদ্দীন, আলী হোসেন, আসাদুল হক, মাইনদ্দীন, নজরুল ইসলাম, মেহের আলী, ছমির উদ্দীন, আ.রাজ্জাক, বাবলু ফকির, মান্নাল প্রমুখ।

উল্লেখ্য, ইতিহাস সমৃদ্ধ চুয়াডাঙ্গা জেলায় ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে প্রত্নতত্ত্ব ও ঐতিহাসিক নিদর্শন আবিষ্কারে জরিপ শুরু হয়। এ জরিপে চুয়াডাঙ্গা জেলার ২২৫টি গ্রামের ১০৪টি জায়গায় অনুসন্ধান চালানো হয়। এর মধ্যে পুরাকীর্তি ‌১৬টি, আবাসিক ২১টি, মসজিদ ১৯টি, মাজার বা পাবলিক সমাধি ১৯টি, নীলকুঠি ৬টি, মন্দির ৫টি, প্রাচীন জলাশয় ৪টি, অফিস ৪টি, রেলস্টেশন ৪টি, স্কুল ৩টি, প্রত্নতত্ত্ব ঢিবি ৩টি, তফসিল অফিস ২টি, রেলসেতু ২টি, প্রাচীন কবর ২টি, গির্জা ১টি, পার্ক ১টি, শিল্প স্থাপনা ১টি, বিশ্রামাগার ১টি ও তোরণ ১টি। আর এসব স্থাপনা চুয়াডাঙ্গা সদরে রয়েছে- ৫৯টি, জীবননগর উপজেলায় ১৫টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ২১টি ও দামুড়হুদা উপজেলায় ৯টি। এর মধ্যে ২টি স্থানকে চিহ্নিত করে খননের কাজ চলছে। তার মধ্যে রয়েছে- দামুড়হুদার চারুলিয়া মেহমান শাহর মাজার সংলগ্ন ঢিবি এবং চুয়াডাঙ্গা সদরের কালুপোল গন্ধর্প রায়ের রাজার ভিটা। এর মধ্যে রাজার ভিটা এবং চারুরিয়া ঢিবি খনন করে বেশকিছু প্রাচীন পুরাকীর্তি পাওয়া গেছে। তার মধ্যে আছে- ধুপচি, লোহার তৈরি বল্মম, মাটির হাড়ি, সারা, কড়ি, পশুর হাড়, হরিণের শিং, মাটির তৈরি পুতুল, প্রদীপ, সানকিসহ নতুন নতুন অনেক কিছু।