বিভিন্ন অনিয়ম ও কার্যকরী কমিটির মেয়াদ ৪ বছর উত্তীর্ণ হওয়ায় ক্ষোভ : ব্যর্থ কমিটির ১১ জনকে রেখেই নতুন কমিটি গঠন!

বছর পর চুয়াডাঙ্গা রোগী কল্যাণ সমিতির সাধারণসভা অনুষ্ঠিত

 

স্টাফ রিপোর্টার: দীর্ঘ সাত বছর পর চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সাধারণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাজসেবা অধিদফতরের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত সমিতির কমিটির মেয়াদ চার বছর উত্তীর্ণ এবং বিভিন্ন অনিয়ম অব্যবস্থাপনার কারণে বিগত কমিটির ওপর সাধারণ সদস্যরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আবার সেই ব্যর্থ কমিটির ১১ জনকে রেখেই নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এমনকি একজন সভায় উপস্থিত না থাকলেও তাকে কমিটিতে রাখায় নানামুখি গুঞ্জন শোনা গেছে। গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় সদর হাসপাতাল সম্মেলন কক্ষে কমিটির সভাপতি সিভিল সার্জন ডা. রওশন আরা বেগমের সভাপতিত্বে এ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মহ. শামসুজ্জোহা ও বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের সেক্রেটারী ফজলুর রহমানসহ রোগী কল্যাণ সমিতির আজীবন সদস্যরা এসময় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনায় ছিলেন সদর উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা ও রোগী কল্যাণ সমিতির অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা আবব্দুল্লাহ আল সামী।

সভায় আগের ব্যর্থ কমিটির ১১ জনের জনের সাথে ৭ জনকে যুক্ত করে কার্যকরি কমিটি ১৭ সদস্য থেকে বাড়িয়ে ২১ সদস্য বিশিষ্ট ত্রি-বার্ষিক (২০১৭-২০) কার্যকরি কমিটি মনোনিত করে নাম ঘোষনা করা হয়েছে। ত্রি-বার্ষিক কার্যকরি কমিটিতে সরকারি কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাসদ (ইনু), জাসদ (রব) , সাম্যবাদী দল, গণফ্রন্ট,আইনজীবী, কলেজের শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, চিকিৎসক, ঠিকাদার ও চাকরীজীবীরা মনোনিত হয়েছেন।  ২১ সদস্যের নতুন কমিটিতে আগের ব্যর্থ কমিটির ১১ জন রয়েছেন ,এবার যোগ হয়েছে ৭ জন নতুন মুখ এবং পদাধিকার বলে তিনজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আগের কমিটির সহসভাপতি হুমায়ুন কবির মালিককে এবার সদস্য পদে রাখা হলেও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তছিরুল আলম মালিক ডিউক বর্তমান কমিটিতেও একই পদে রয়েছেন। আগের কমিটির তিন সদস্য এবার বাদ পড়েছেন। এরা হলেন, ডা. আলী মোর্তুজা খান কচি, ডা. এমএইচ রশিদ পলাশ ও আরমান আলী শেখ। পদাধিকার বলে সভাপতি পদে সিভিল সার্জন ডা. রওশান আরা বেগম, সাধারণ সম্পাদক হাসপাতাল সমাজ সেবা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল সামী ও কোষাধ্যক্ষ পদে সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রাজিবুল ইসলাম। অন্য পদে সহসভাপতি অ্যাড. সেলিম উদ্দিন খান, সহ-সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. তছিরুল আলম মালিক ডিউক, নির্বাহী সদস্য হুমায়ুন কবির মালিক, অ্যাড. ওয়াহেদুজ্জান বুলা, মাহাবুল আলম সেলিম, শহিদুল ইসলাম সাহান, মফিজুর রহমান মনা, এমএম আরাউদ্দিন, সিরাজুল ইসলাম মনি, ইছাহাক আলী বিশ্বাস ও নুঝাত পারভীন। এই ১১ জনের  সকলেই আগের কমিটিতে ছিলেন। কার্যকরী কমিটিতে নতুন যোগ হয়েছেন ৭ জন। তারা হলেন, নির্বাহী সদস্য পদে অ্যাড. মহা. শামসুজ্জোহা, অ্যাড. আকসিজুল ইসলাম রতন, ডা. ফকির মোহাম্মদ, শাহার আলী, আলাউদ্দিন ওমর, অ্যাড. তছলিম উদ্দিন ফিরোজ ও লিটু বিশ্বাস।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই কোরআন তেলওয়াত করেন অ্যাড. হাজী সেলিম উদ্দিন খান। এসময় বিগত সময়ে মৃত্যুবরণকারী সদস্যদের স্মরণে ১মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। সর্বশেষ ২০১০ সালের ২৯ মে সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় একটি কার্যকরি কমিটি গঠন করা হলেও তাঁরা দায়িত্ব পালনের সময়ে কোন সাধারণ সভা অনুষ্ঠান করতে পারেনি। অবশেষে দীর্ঘ ৭ বছর পর সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হলো । সাধারণ সভায় জানানো হয় রোগী কল্যাণ সমিতিতে ২ লাখ ৪৩ হাজার ২৯২ টাকা ব্যাংকে জমা রয়েছে। রোগী কল্যাণ সমিতির আজীবন সদস্য সংখ্যা ২১০ জন হলেও চিঠি দেয়া হয়েছে ১৪০ জন সদস্যকে। ফলে ৭০ জন সদস্যকে কোন চিঠি দেয়া হয়নি। আগের কমিটির মেয়াদ ২০১৩ সালের ৮ আগস্ট মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও দীর্ঘদিন ধরে নতুন কমিটি তৈরির উদ্যোগ না নেয়ায় কমিটির ব্যর্থতা বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই। আবার নতুন করে তাদের হাতে দায়িত্ব যাওয়ায় আবার কতো বছর পর সাধারণ সভা হবে এ নিয়েও শঙ্কিত সদস্যরা। সদর হাসপাতাল চত্বরে পৌরসভা কর্তৃক নবনির্মিত গণশৌচাগার রোগী কল্যাণ সমিতি অর্থের বিনিময়ে পরিচালনা করবে এবং রোগী কল্যাণ সমিতির আজীবন সদস্যের ফি ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার টাকা করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে। নতুন কমিটির নাম ঘোষনার পর জেলার সিভিল সার্জন ও কমিটির সভাপতি ডা. রওশন আরা বেগম বলেন, নতুন কার্যকরি কমিটির কাছে প্রত্যাশা করবো রোগীদের আরামের ব্যবস্থা করবেন। হাসপাতালের বারান্দায় বসার জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। হাসপাতালের উন্নয়নে আলোচনার মাধ্যমে সকলেই সহযোগিতা করবেন।