গাংনী উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যানের প্রবেশে ছাত্রলীগের নিষেধাজ্ঞা

 

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান মোরাদ আলীর প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিলো ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের বাধার মুখে উপজেলা পরিষদের মাসিক সভাও স্থগিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। মোরাদ আলী গাংনী পৌর বিএনপির সভাপতি। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গাংনী উপজেলা পরিষদের মাসিক সভা চলছিলো উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সভাকক্ষে। সভাপতিত্ব করছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান মোরাদ আলী। সভায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদ মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ-উজ-জামান, গাংনী পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম, গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মতর্কা (ওসি) আনোয়ার হোসেনসহ ইউপি চেয়ারম্যান, সরকারী বিভিন্ন দফতর প্রধানসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ। সভা শুরুর কিছুক্ষণ পরে উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব হোসেনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি বিক্ষোভ মিছিল উপজেলা পরিষদ চত্বরে পৌঁছায়। মিছিল থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান মোরাদ আলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেয়া হয়। উত্তেজিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এ সময় উপজেলা পরিষদের মাসিক সভা স্থগিত করে উপজেলা চেয়ারম্যান মোরাদ আলীকে নিরাপদে সরিয়ে দেয় পুলিশ।

এদিকে বিক্ষোভ মিছিল শেষে উপজেলা পরিষদ চত্বর শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সমাবেশ করে ছাত্রলীগ। গত এক বছর উপজেলা চেয়ারম্যানের কার্যালয় থেকে বাস্তবায়িত উন্নয়ন কাজের তথ্য প্রকাশে দাবি জানান ছাত্রলীগ নেতারা। এছাড়াও সম্প্রতি বিএনপি নেতাকর্মীদের নিয়ে সভা করে সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে সংঘটিত করার অভিযোগ তোলেন বক্তারা। এসব বিষয় সমাধান না হওয়া পর্যন্ত উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান মোরাদ আলীর প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেন ছাত্রলীগ নেতারা। ছাত্রলীদের কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা ছাত্রলীগ সাবেক আহ্বায়ক ইসমাইল হোসেন, জেলা ছাত্রলীগ নেতা আলাল উদ্দীন রিন্টু, উপজেলা ছাত্রলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদ হাসিব, পৌর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাবীব ও কলেজছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুল ইসলাম রতনসহ নেতৃবৃন্দ। উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, মোরাদ আলী চেয়ারম্যানের সরকারি দায়িত্বে থেকে সরকারবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন। মূলত তিনি আওয়ামী বিরোধী লোকজনকে মদদ দিয়ে একত্রিত করতে চাচ্ছেন। এর প্রতিকার না হলে বৃহত্তরা আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

গাংনী উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব হোসেন বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান ভুয়া প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাত করেছেন। প্রকল্প সম্পর্কে জানতে চায় এলাকাবাসী। সম্প্রতি এসব তথ্য প্রকাশের জন্য চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা করছেন। তাই উন্নয়ন কাজের তথ্য প্রকাশ না করা পর্যন্ত তাকে পরিষদে ঢুকতে দেবে না ছাত্রলীগ। তবে অভিযোগ বানোয়াট দাবি করে উপজেলা চেয়ারম্যান মোরাদ আলী বলেন, উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব হোসেন নির্দিষ্ট করে কোনো প্রকল্পের তথ্য চাননি। তিনি আমার সাথে বসতে চেয়েছিলেন। তাদের বাধার মুখে পরিষদের মাসিক সভা পণ্ড হয়েছে। মূলত আমি বিরোধী দলের চেয়ারম্যান তাই রাজনৈতিক কারণে আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ-উজ-জামান বলেন, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কর্মসূচির কারণে মাসিক সভা স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী সুবিধাজনক সময়ে ওই সভা করা হবে। তবে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, সভার বাইরে বিক্ষোভ মিছিল চলছিলো। এতে উপজেলা চেয়ারম্যান নিজেই সভা স্থগিত করেন। তাকে পুলিশ প্রহরায় বাসভবনে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ৪ মে গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান পৌর বিএনপির সভাপতি মোরাদ আলীর নিজ বাসভবনে পৌর বিএনপির পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংগঠিত করার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ মিছিল করেছিলো ছাত্রলীগ। পরে উপজেলা চেয়ারম্যানের পরিষদ কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয় ছাত্রলীগ। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মধ্যস্থতায় একদিন পরে তালা খোলা হয়।