শিশু রিয়ার প্রাণহানিও কি আমাদের দায়িত্বশীল করবে না?

কেউ কি তার বাড়ির সদর দরজার সাদ বা স্লাব ইচ্ছে করে অরক্ষিত বা ঝুঁকিপূর্ণ করে রাখে? বড় ধরনের খেসারতে এ প্রশ্নেই যখন পার পাওয়া যায় তখন ইচ্ছেমত যেনতেনভাবে স্থাপনা নির্মাণ আর দোষের কি? গতপরশু চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের মাস্টারপাড়ার একটি বাড়ির সদর দরজার ছাদ পড়ে হতাহতের পর সঙ্গতঃ এসব প্রশ্নই সাধারণ মানুষের প্রধান আলোচ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাভাবিক। যখন কোনো ঘটনা ঘটে, তখন তা নিয়ে ক’দিন চর্চা হয়, পরে সবই আড়াল হয়ে যায়। এটাই যেন সমাজের রেওয়াজ। অথচ একটি ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে উপযুুক্ত পদক্ষেপই দায়িত্বশীলতার পরিচয়। সেই পরিচয়ের বড়ই অভাব।
স্বাধীনতা মানে যা ইচ্ছে তাই করা নয়। অন্যের অধিকার সংরক্ষণ করেই নিজেরটা করতে হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের মাস্টারপাড়ার আব্দুল ওহাব মিয়ার পুরাতন বাড়ির সদর দরজার ওপর দশ ইঞ্চির ইটের গাঁথুনির ওপর বিশাল আকৃতির ছাদ বসিয়ে রাখাটা নিজের স্থাবর সম্পত্তির ওপর ইচ্ছেমতো কিছু করা। কোন শহরে কি এটা করা যায়? অবশ্যই না। পৌর শহরে স্থাপনা নির্মাণের নকশা পৌরসভা থেকে অনুমোদন নিতে হয়। ওই নকশা কতোটুকু নিরাপদ, অন্যের কোনো রকম ক্ষতি হবে কি-না বা পৌর নাগরিকের চলাচলে বাঁধার সৃষ্টি হবে কি-না তা দেখা হয়। তাহলে আব্দুল ওহাব মিয়ার পুরোনো বাড়ির সদর দরজায় ওই নতুন ছাদ স্থাপন হলো কোন নকশা অনুপাতে? কয়েক শিশু খেলতে গিয়ে সেই অরক্ষিত ছাদ উল্টে পড়ে যখন প্রাণহানি হয় তখনও কি এই প্রশ্নটি উঠতে পারে না? পারে, কিন্তু আমরা তুলি না। প্রশ্ন তুলে অন্তত ন্যূনতম ধিক্কার জানানোর মধ্যদিয়েও যে সমাজের অন্যদের দায়িত্বশীল করা সম্ভব সেটাও কি জনপ্রতিনিধিদের উপলব্ধির বাইরে? অবশ্য ভোটের রাজনীতিতে কখনো কখনো কারো কারো উপলব্ধি বোধও ভোতা হয়ে যায় বটে।
না, এক শিশু নিহত হওয়ার ঘটনার জন্য অবশ্যই একটি বাড়ির মালিককে পুরোপুরি দোষারোপ করা চলে না। তিনি সুযোগ পেয়েছেন বলেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় স্লাব দরজার ওপর বসিয়ে রেখেছিলেন। ওই সুযোগ দাতাদের কুম্ভঘুম ভাঙানোর জন্য সমাজের সচেতনমহলকে অবশ্যই আরো সোচ্চার হওয়া দরকার। ওই সমাজের জনপ্রতিনিধিসহ আইন প্রয়োগে নিয়োজিতরা ততোটাই দায়িত্বশীল যতোটা সোচ্চার সমাজের মানুষ। সচেতন সাধারণ মানুষ উদাসীন হলে দায়িত্বশীলদের মধ্যেও উদাসীনতা ভর করে। বোধকরি আমাদের সমাজ সর্বক্ষেত্রে না হলেও কিছু ক্ষেত্রে সত্যিই বড় উদাসীন। ওই উদাসীনতারই চরম খেসারত শিশু রিয়ার প্রাণ।