বোকাদের যারা ধোঁকা দেয় তাদের সোজা করবে কে?

কোনো কিছুর বিনিময়ে যেকোনো খেলাই কি জুয়া? নাকি কোন খেলায় কোন দল হারবে তা আগাম বাজি ধরাটাই জোয়া? জুয়া কখনোই কে নো ব্যক্তি বা জাতির জন্য মঙ্গলকর হয়নি, হয় না। হাতে গোনা কিছু মানুষ জুয়া বা বাজি ধরার মধ্যস্ততাকারী হয়ে সুবিধা নেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ সুবিধাটা থাকে আর্থিক। ক্ষতিগ্রস্ত হয় যে বা যারা জুয়ায় মত্ত হয়ে অর্থলগ্নি করে। কোনো কোনো লগ্নিকারী কখনো কখনো আর্থিক লাভবান হলেও তা যে নিতান্তই সাময়িক তা জুয়ায় মত্ত থাকা অবস্থায় বুঝতে না পারলেও যখন জুয়ায় লগ্নির মতো আর কিছুই থাকে না তখন বোঝে। চুয়াডাঙ্গায় এখন জুয়ার রমরমা। প্রকাশ্যে মাতামাতি হলেও পুলিশ প্রশাসনের নীরবতা সত্যিই রহস্যজনক। প্রশ্নবিদ্ধ বটে।
চুয়াডাঙ্গার প্রত্যন্ত অঞ্চলে র‌্যাফেল ড্র’র নামে এক প্রকার জুয়া চলছে। এ জুয়ায় মত্ত মুলত নি¤œ আয়ের নারী-পুরুষ। প্রত্যন্ত অঞ্চলের নি¤œ আয়ের পরিবারের গৃহিণীদের মধ্যেও লটারির টিকিট কেনার প্রবণতা পরিলক্ষিত হয় তুলনামূলক বেশি। হাতে গোনা কয়েকজন লাভবান হলেও কোনো পরিবারকে ওই লটারির টিকিট কিনতে গিয়ে একবেলা চুলোই জ্বলছে না। আবার কোনো কোনো সমিতির ক্ষুদ্র ঋণগ্রস্ত সদস্য হয়তো সপ্তার কিস্তিই দিতে পারছেন না। আর যে লাভবান হয় বলে বাহ্যিক দিক থেকে দেখা যায় তার আসল খবর নিতে গেলে দেখা যাবে চিত্রটা ভিন্ন। এছাড়া ক্রিকেট বা ফুটবলসহ নানা খেলা নিয়ে জুয়ায় মত্ত হওয়ার ক্ষতিকর প্রবণতা সমাজে দীর্ঘদিন ধরে পেয়ে বসেছে। বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরে উঠতি বয়সীদের মধ্যে আইপিএল খেলায় কে হারবে কে জিতবে তা নিয়ে বাজি ধরে মোটা অঙ্কের টাকা হার-জিতের ভয়ানক জুয়া চলে। গত বছর যে জুয়ার রেওয়াজ কিছু সোনার দোকানি ও স্বর্ণলঙ্কারের মধ্যে ছিলো, সেই রেওয়াজ এবার শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ছড়িয়েছে। লোভে পড়ে অনেকে বাড়ির ফ্রিজ, টিভিও বিক্রি করছে বলে খবর রয়েছে। তাছাড়া শহর ও শহরতলী থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে তাস নিয়ে জুয়ার আসর তো বসেই। মাঝে মাঝে এসব আসরে পুলিশি অভিযানের খবরও পত্রস্থ হয়। ক’দিন আগেই চুয়াডাঙ্গার বড়সলুয়ার এক জুয়ার আসর থেকে কয়েকজনকে পুলিশ পাকড়াও করে আইনে সোপর্দও করেছে। বন্ধ কি হয়েছে জোয়া?
জুয়া ক্ষতিকর। জুয়া জীবনকেই বিষিয়ে তোলে। ফলে কোনো প্রকারের জুয়াই নিজেকে জড়ানো উচিত নয়। সব সময়ই মনে রাখা দরকার, লোভ মানুষকে শুধু বিপথগামীই করে না, পথে বসায়। লোভ বা লোভী না হলে কি কেউ জুয়া খেলায় নিজেকে সামিল করে? তাছাড়া বাজি ধরে হারা বা অন্যকে হারানোর মধ্যে যে নেশাগ্রস্ততা তাতেও তো সেই লোভেরই প্রভাব। লোভে পড়া কোনো মানুষকে কি সুবুদ্ধির মানুষ বলা যায়? হতেও পারে, নাও পারে। এরকম অনিশ্চয়তা নিয়ে বাজিতে বা জুয়ায় মেতে নিজেকে পথে বসানোটা বোকাদেরই মানায়। বোকাদের যারা ধোকা দেয় তাদের সোজা করতে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সচেতনতার আলোও ছড়ানো চাই। সচেতনতার আলো লোভ সংবরণে হবে সহায়ক।