হাউলী ইউনিয়ন ভেঙে জয়রামপুর ও রঘুনাথপুর ইউনিয়ন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি

চুয়াডাঙ্গার তিনটি মেয়াদোত্তীর্ণ ও নবগঠিত তিনটি ইউনিয়ন পরিষদে নিয়োগ করা হয়নি প্রশাসক

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়ন পরিষদ বিলুপ্ত করে নবগঠিত জয়রামপুর ও রঘুনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদ গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস। গত ৭ মে বিদায়ী জেলা প্রশাসক এই বিভক্ত প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেছেন। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, এরপরও কি দীর্ঘ ৬০ বছর পর হাউলী ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম থাকে? নাকি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অবশ্য গতকাল পর্যন্ত নবগঠিত দুটির একটি ইউনিয়নেও প্রশাসক নিযুক্ত করা হয়নি।
এদিকে সদর উপজেলার তিনটি মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিয়ন পরিষদ ও নবগঠিত তিনটি ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক নিয়োগ না দেয়ায় গ্রামীণ উন্নয়নে স্বাভাবিক কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। একইভাবে জীবননগর উপজেলার মেয়াদ উত্তীর্ণ উথলী ইউপি ও নবগঠিত মনোহরপুর এবং কেডিকে ইউপিতে প্রশাসকের মেয়াদ শেষ হলেও নির্বাচন না দেয়ায় সেখানেও উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৩০ এপ্রিল দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল হাসান হাউলী ইউনিয়ন পরিষদকে বিভক্ত করে জয়রামপুর ও রঘুনাথপুর ইউনিয়ন গঠন করে একটি প্রস্তাবনা দেন জেলা প্রশাসককে। ওই চিঠি পাওয়ার পর জেলা প্রশাসক নবগঠিত জয়রামপুর ও রঘুনাথপুর নবগঠিত ইউনিয়ন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেন। বিলুপ্ত হাউলী ইউনিয়নের ভোটার সংখ্যা ছিলো ২৯ হাজার ৫৪৭ জন। জয়রামপুর ইউনিয়ন পরিষদ ১০টি গ্রাম এবং রঘুনাথপুর ১০টি গ্রাম নিয়ে গঠন করা হয়েছে। জয়রামপুর ইউপিতে গ্রামগুলো হলো- ১ নং ওয়ার্ডের জয়রামপুর (আংশিক) শাহপাড়া, শেখপাড়া, দিঘপাড়া ও বারুইপাড়া। ২ নং ওয়ার্ডে জয়রামপুর (আংশিক), চৌধুরীপাড়া ও কুঠিপাড়া। ৩ নং ওয়ার্ডে জয়রামপুর (আংশিক), ডাক্তারপাড়া, ঠাকুরপাড়া, মল্লিকপাড়া ও কুমড়াদহপাড়া। এই তিন ওয়ার্ড নিয়ে ১ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ড গঠন করা হয়েছে। ৪ নং ওয়ার্ডে জয়রামপুর (আংশিক), নওদাপাড়া, ক্যাম্পপাড়া, বারান্দপাড়া ও হাজিপাড়া। ৫ নং ওয়ার্ডে জয়রামপুর (আংশিক) নতুনপাড়া, গাতিরপাড়া, স্টেশনপাড়া, চিলাপাড়া ও হালসাপাড়া। ৬ নং ওয়ার্ডে জয়রামপুর (আংশিক) মালিথাপাড়া, কলোনিপাড়া, মাঠপাড়া ও নোয়াখালীপাড়া। এই তিনটি ওয়ার্ড নিয়ে সংরক্ষিত ২ নং ওয়ার্ড গঠন করা হয়েছে। ৭ নং ওয়ার্ডে ডুগডুগি ও তারিনীপুর। ৮ নং ওয়ার্ডে বড়দুধপাতিলা। ৯ নং ওয়ার্ডে ছোটদুধপাতিলা। এই তিনটি ওয়ার্ড নিয়ে একটি সংরক্ষিত ৩ নং ওয়ার্ড গঠন করা হয়েছে।
রঘুনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১ নং ওয়ার্ড পুরাতন হাউলী ও নতুন হাউলী গ্রাম নিয়ে গঠন করা হয়েছে। ২ নং ওয়ার্ড নতুন বাস্তপুর গ্রাম নিয়ে গঠন করা হয়েছে। ৩ নং ওয়ার্ড পুরাতন বাস্তপুর গ্রাম নিয়ে গঠন করা হয়েছে। এই তিনটি ওয়ার্ড নিয়ে ১ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ড গঠন করা হয়েছে। ৪ নং ওয়ার্ড রঘুনাথপুর গ্রাম নিয়ে গঠন করা হয়েছে। ৫ নং ওয়ার্ড লোকনাথপুর (আংশিক) ও পূর্বপাড়া নিয়ে গঠন করা হয়েছে। ৬ নং ওয়ার্ড লোকনাথপুর (আংশিক) পশ্চিমপাড়া ও মাঝেরপাড়া নিয়ে গঠন করা হয়েছে। এই তিনটি ওয়ার্ড নিয়ে ২ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ড গঠন করা হয়েছে। ৭ নং ওয়ার্ড কাদিপুর গ্রাম নিয়ে গঠন করা হয়েছে। ৮ নং ওয়ার্ড গোবিন্দপুর গ্রাম নিয়ে গঠন করা হয়েছে। ৯ নং ওয়ার্ড রুদ্রনগর গ্রাম নিয়ে গঠন করা হয়েছে। এই তিনটি ওয়ার্ড নিয়ে ৩ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ড গঠন করা হয়েছে। গত ১৬ এপ্রিল এবং ২০১৬ সালের ২৮ মে হাউলী ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন মামলার কারণে স্থগিত হওয়ায় এখন আর নির্বাচনের আর কোনো সম্ভাবনা নেই।
চুয়াডাঙ্গার তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসাইন ২০১৫ সালের ২৪ জুন সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়ন পুনর্গঠিত করে গড়াইটুপি নবগঠিত ইউনিয়ন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেন। একই সময়ে শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়ন পুনর্গঠিত করে মাখালডাঙ্গা নবগঠিত ইউনিয়ন পরিষদ গঠন করেন। একইদিনে বেগমপুর ইউনিয়ন পরিষদ পুনর্গঠিত করে নেহালপুর নবগঠিত ইউনিয়ন পরিষদ গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেন। এই ছয়টি ইউনিয়নে দীর্ঘ দুই বছরেও প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়নি। ফলে শঙ্ককরচন্দ্র ইউপিতে আব্দুর রহমান, তিতুদহ ইউপিতে আকতার হোসেন এবং বেগমপুর ইউপিতে আলী হোসেন চেয়ারম্যান হিসেবে দীর্ঘ প্রায় ১ বছর যাবত অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে মাঠপর্যায়ে জনগণ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ২০১৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি জীবননগর উপজেলার উথলী ইউনিয়ন পুনর্গঠিত করে মনোহরপুর ও কেডিকে নবগঠিত ইউনিয়ন পরিষদ গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেন জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস।
উথলী ইউনিয়ন পরিষদের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৩ সালের ৩ মার্চ। শঙ্করচন্দ্র, তিতুদহ ও বেগমপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৬ সালের ৪ জুন। জীবননগরের মনোহরপুর ও কেডিকে ইউনিয়নে প্রশাসক নিয়োগ করা হলেও তাদের ১৮০ দিনে মেয়াদ শেষ হয়েছে। অথচ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। আবার উথলী ইউনিয়নে দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। এখানে ইউপি চেয়ারম্যান শরীফ উদ্দিন মৃত্যুবরণ করায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে ইউপি সদস্য আব্দুল হান্নান দীর্ঘ ৩ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন।
বিলুপ্ত হাউলী ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী শাহ মিন্টুসহ পাঁচজন হাউলীকে ইউনিয়ন পরিষদ রেখে তিনটি ইউনিয়ন করার দাবিতে লিখিত আবেদন করেছেন- লোকনাথপুরের ইসরাইল হোসেন ও মসলেম মালিতা, কাদিপুরের মজিবর মালিতা এবং পুরাতন বাস্তপুরের জামাল উদ্দিন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, হাউলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বলেন, এই বিভক্তি হাউলী ইউনিয়নবাসী চায়না। হাউলী ইউনিয়নের জনগণকে জিম্মি করে পরিকল্পিতভাবে নির্বাচন বন্ধ করার পাঁয়তারা করছেন লিয়াকত আলী শাহ ও তার ভাই চেয়ারম্যান মিন্টু শাহ। যেকোনোভাবেই ক্ষমতায় থাকতে হবে তার। বিভক্ত যথাযথভাবে হয়নি বলেও জানান তিনি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা নাফিস সুলতানা জানান, বিভক্তির বিষয়টি তার জানা নেই। ইউএনও রফিকুল হাসান বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান জানান, হাউলী ইউনিয়ন বিভক্তকরণের কপি পেয়েছি এবং নির্বাচন কমিশনকে অবগত করানো হয়েছে। সদর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে প্রশাসক নিয়োগ দেন জেলা প্রশাসক। জীবননগরের তিনটি ইউনিয়নের ভোটার তালিকার পুনর্বিন্যাসর কাজ শেষের দিকে। কাজ শেষ হলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক আনজুমান আরা বলেন, হাউলী ইউনিয়ন বিভক্তকরণসহ নবগঠিত ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক সংক্রান্ত বিষয়ে নবাগত জেলা প্রশাসককে অবগত করানো হবে।