চুয়াডাঙ্গায় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছাড়াই গড়ে উঠছে ১০ তলা ভবন : ফায়ার সার্ভিসের আইন মানছেনা ভবন মালিকরা

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলায় বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকায় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছাড়াই গড়ে উঠছে একের পর এক ১০ তলা ভবন। এক্ষেত্রে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধের উপায় নিশ্চিতকরণে ফায়ার সার্ভিসের আইন কার্যকরের বাধ্য বাধকতা থাকলেও এসব ভবন নির্মাণে তা মানা হচ্ছে না। আবার বহুতল ভবনে আগুন নেভাতে যেসব ইকুইপমেন্টের প্রয়োজন তা স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কোনোটিতেই নেই। ফলে নির্মাণাধীন এসব ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিসহ ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, এসব ভবনে অগ্নিকাণ্ডের কোনো ঘটনা ঘটলে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া আর কোনো কিছুই করার থাকবে না।
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বড়বাজার, শহীদ হাসান চত্বর, শহীদ আবুল কাশেম সড়ক, শহীদ রবিউল ইসলাম সড়ক, সদর হাসপাতাল সড়ক, শহীদ আলাউল ইসলাম সড়ক, সদর হাসপাতাল সড়ক, কেদারগঞ্জ-মালোপাড়া, দক্ষিণ হাসপাতালপাড়া, গুলশানপাড়া, আলমডাঙ্গা, দামুড়হুদা ও জীবননগর উপজেলার অসংখ্য বহুতল ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে। সাত থেকে ১০ তলা পর্যন্ত উচ্চতার এসব ভবনের বেশির ভাগই যথাযথ আইন মেনে তৈরি হচ্ছে না। বহুতল ভবন নির্মাণে পৌরসভা ও ফায়ার সার্ভিসের যে তদারকি থাকার দরকার ছিলো এসব ভবন তৈরির ক্ষেত্রে তা যথাযথভাবে হচ্ছে না। ফলে এসব নিয়ম মানতে ভবন মালিকদেরও মাথা ব্যাথা নেই। আবার নির্মাণ শেষ হওয়া দুটি ভবনের বিষয়েও একই রকম অভিযোগ রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস আইন ২০০৩’র ৭ ও ৮ ধারা অনুযায়ী ছয় তলার ওপরে কোনো ভবন নির্মাণ করতে হলে ফায়ার সার্ভিসের অনাপত্তি পত্র এবং ভবন নির্মাণ শেষে বসবাস উপযোগী ছাড়পত্র নিতে হবে। অনাপত্তির মধ্যে ১৮টি শর্ত দেয়া হয় এবং ভবন নির্মাণ শেষে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ তা যাচাই করে ছাড়পত্র দিয়ে থাকেন।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, ছয়তলার ওপর ভবন নির্মাণ করতে হলে ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে নিত্য প্রয়োজনীয় চাহিদার বাইরে অতিরিক্ত ২ লাখ লিটার ধারণ ক্ষমতার জলাধার তৈরি করতে হবে। ভবনের সর্বশেষ ধাপে ৮০ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতা জলাধার থাকতে হবে। প্রতিটা ফ্লোরে লুজ রিল ও সংযোগ পয়েন্ট থাকতে হবে। আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে পানি তোলার জন্য জকি পাম্প এবং প্রশিক্ষিত জনবল থাকতে হবে। এসব ভবনের সামনের সড়ক অন্তত ৩০ ফুট চওড়া হতে হবে। ভবনের মাথার ওপর দিয়ে ১১ হাজার কেভি বা তার বেশি বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন যাওয়া চলবে না। জনবলের প্রয়োজন অনুযায়ী জরুরী বহির্গমন সিঁড়ি থাকতে এবং বিকল্প বিদ্যুত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তবেই অনাপত্তি সনদ ও ছাড়পত্র পাওয়া যাবে। কিন্তু ভবন নির্মাণকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তা এড়িয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে একাধিক ভবন মালিকের সাথে কথা বললে, এসব শর্তের বিষয়টি তাদের জানা নেই বলে দাবি করেন। নির্মাণাধীন সাততলা ভবনের মালিক আকরামুল হক বিশ্বাস খোকন জানান, প্রয়োজনীয় নকশা অনুমোদনের পর নির্মাণ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, নির্মাণকাজ যেহেতু প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তাই প্রয়োজনীয় সব শর্ত পূরণ করা হবে।
এদিকে বহুতল ভবনে আগুন নেভানোর জন্য জেলার চারটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনগুলোর কোনোটিই প্রস্তুত নয়। বহুতল ভবনে আগুন নেভানো ও আটকেপড়া মানুষকে উদ্ধারের জন্য টার্ন ট্রাবল লেভার (টিটিএল) এবং আগুন নেভানোর জন্য স্নোরকেল থাকা দরকার থাকলেও তা নেই। দ্বিতীয় শ্রেণির চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে একটি পানিবাহী, একটি পাম্পবাহী, একটি অ্যাম্বুলেন্স, একটি টানা গাড়ি ও একটি তৃতীয় কল গাড়ি রয়েছে। ফায়ারম্যান আছে মাত্র ১৬ জন।
চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন কর্মকর্তা আব্দুস ছালাম জানান, শহীদ হাসান চত্বরে নির্মাণাধীন বঙ্গজ গ্রুপের ১০ তলা ভবন নির্মাণে অনাপত্তি সনদ নেয়া হয়েছে। বাকিগুলোর বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও পৌরসভার কাছে কোনো তথ্য নেই।
চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী বলেন, পৌরসভা থেকে কেবলমাত্র নকশা অনুমোদন করা হয়। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ঠিকভাবে মানা হচ্ছে কি-না সেটার তদারকির দায়িত্ব ফায়ার সার্ভিসের। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে পৌরসভা নির্মাণকাজ বন্ধসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।