সাইবার আক্রমণ : ভবিষ্যতের সতর্কবার্তা

হঠাত একদিন যদি দেখা যায়, কারো মূল্যবান বাড়ি-গাড়িতে কেউ এসে তালা ঝুলিয়ে নোটিস টানিয় গিয়েছে- ‘তোমার এই সম্পদ এখন আমার দখলে, দখলমুক্ত করতে ৩০০ ডলার মুক্তিপণ দাও’ সম্প্রতি ভাচুর্য়াল জগতে অনেকটা এমনই এক ভয়ানক ঘটনা ঘটেছে বিশ্বজুড়ে। বিশ্বের শতাধিক দেশে গত শুক্রবার একটি মুক্তিপণ দাবিদার ভাইরাস (নাম ওয়ানাক্রাই) অর্থাৎ ‘র‌্যানসমওয়্যার’ ছড়িয়ে পড়ে। এই ভাইরাসটির আক্রমণে ইংল্যান্ড, চীন, স্পেন, ফ্রান্স, ইউক্রেন, জার্মানি, রাশিয়াসহ শতাধিক দেশের দুই লাখ কম্পিউটার সিস্টেম আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশেও আক্রান্ত হয় অন্তত ৩০টি প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার।
‘র‌্যানসমওয়্যার’ হলো একটি বিশেষ ম্যালওয়্যার বা ক্ষতিকর প্রোগ্রাম, যার নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে এর সাথে জড়িয়ে রয়েছে মুক্তিপণের বিষয়। কোনো ব্যবহারকারী এই ম্যালওয়্যার আক্রান্ত কোনো সফটওয়্যার বা পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করলে এই র‌্যানসমওয়্যার ওই কম্পিউটারের সিস্টেমে প্রবেশ করতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ই-মেলের মাধ্যমেই ছড়িয়েছে এই র‌্যানসামওয়্যার। তাই আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, জনসাধারণের ইনবক্সেই লুকিয়ে ররয়েছে অনেক ল্যান্ডমাইন। এই ভাইরাস তৈরি করিতে হ্যাকাররা মাইক্রোসফটের অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজের একটি দুর্বলতা কাজে লাগিয়েছে। মনে করা হচ্ছে, কয়েক মাস পূর্বেই মাইক্রোসফট এটা জানতো- সেজন্য তারা একটি নিরাপত্তা আপডেটও এনেছিলো।
প্রশ্ন হলো- এই সাইবার আক্রমণের উদ্দেশ্য কি নেহায়েতই মুক্তিপণ আদায়? কারণ মুক্তিপণ আদায়ের লক্ষ্যেই যদি এই আক্রমণ করা হয়ে থাকে, তাহলে হ্যাকারদের সেই উদ্দেশ্য মোটেই পূরণ হয়নি। জানা গেছে, সারাবিশ্বের দুই লক্ষাধিক কম্পিউটার হ্যাক করে তারা এখন পর্যন্ত মাত্র ৬০ হাজার ডলার মুক্তিপণ আদায় করতে পেরেছে। তাই অনেকেই মনে করছেন, এর নেপথ্যে আরো গভীর কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম লেটেস্ট সিকিউরিটি প্যাচ দিয়া আপডেট রাখার পাশাপাশি অ্যান্টিভাইরাস নিয়মিত আপডেট করাটা জরুরি। ওয়ানাক্রাই হামলা চালালে, সেই কম্পিউটারকে বাকি সব কম্পিউটার, ল্যান সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন করা প্রয়োজন। হ্যাকারদের দাবি মেনে বিটকয়েনে কোনো টাকা দেয়া উচিত নয়, কারণ তাতে সুরাহা নাও হতে পারে। এর পাশাপাশি মনে রাখতে হবে, এ ধরনের সাইবার আক্রমণ বিশ্বে ভবিষ্যতেও যখন তখন ঘটতে পারে। এজন্য সবার আগে প্রয়োজন হার্ড ড্রাইভের ব্যাকআপ রাখা। প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার নেটওয়ার্ক স্থাপনের সময়ও সতর্কতা রাখতে হবে, যাতে অনেক বেশি ব্যবহারকারী সিস্টেমে পুরা অ্যাকসেস নিতে না পারে।
সাইবার নিরাপত্তা সারাবিশ্বেরই অন্যতম মাথাব্যথার কারণ হিসাবে দেখা দিচ্ছে। স্পষ্টতই এই সমস্যা ভবিষ্যতে আরো প্রকট হবে। সুতরাং তার জন্য সতকর্তামূলক ব্যবস্থার ব্যাপারে আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতে। ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৯০ শতাংশ ব্যাংক কর্মকর্তা জানিয়েছেন- ব্যাংকিং খাতে সাইবার ঝুঁকি বাড়ছে। এই খাতের তথ্য নিরাপত্তা দুর্বলতার অন্যতম কারণ হলো- নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে ব্যাংক কর্মকর্তাদের অজ্ঞতা, গ্রাহকদের অসচেতনতা, বাইরের আইটি প্রতিষ্ঠানসমূহের ওপর ব্যাংকগুলোর অতি নির্ভরশীলতা, ব্যাংকিং খাতে দক্ষ আইটি কর্মকর্তার অভাব, কর্মীদের প্রশিক্ষণ না থাকা এবং বাজেট স্বল্পতা। সুতরাং সময়ের প্রয়োজনেই এখন এই ব্যাপারে তাত্পর্যপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।