২৬ মে’র মধ্যে হুমায়ুন বাঙ্গালকে গ্রেফতার করা না হলে তীব্র আন্দোলনের ঘোষণা

চুয়াডাঙ্গায় স্কুলছাত্রী রুবিনার হত্যাকারীর গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের দক্ষিণ গোরস্তানপাড়ার হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে ৫ম শ্রেণির ছাত্রী রুবিনা খাতুনকে ধর্ষণ শেষে হত্যার হোতা হুমায়ুন বাঙ্গালকে অবিলম্বে গ্রেতারের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, আগামী ২৬ মে’র মধ্যে সুদখোর নারী লিপ্সু মাদককারবারী হুমায়ুন বাঙ্গালকে গ্রেফতার করা না হলে পরদিন ২৭ মে শহীদ বেলা ১১টায় হাসান চত্বরে মানবন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে। ৩০ মে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশসহ কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
চুয়াডাঙ্গা হকপাড়া সংলগ্ন দক্ষিণ গোরস্তানপাড়ার রবিউল ইসলামের মেয়ে হাসপাতালপাড়ার রিজিয়া খাতুন প্রভাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী রুবিনা খাতুনকে গত ২ মে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। রুবিনা খাতুনকে ধর্ষণ ও হত্যার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছে তার সহপাঠী ও এলাকাবাসী। সহযোগিতায় ছিলো মানবতা ফাউন্ডেশন। গতকাল রোববার বেলা ১১টায় স্কুল শিক্ষার্থীদের একটি বিক্ষোভ মিছিল শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সামনে শেষ হয়। প্রেসক্লাবের সামনে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে অভিযুক্ত ধর্ষক ও হত্যাকারী হুমায়ূন বাঙ্গালসহ জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনে সোপর্দের দাবি জানানো হয়। পরে অনুষ্ঠিত হয় সংবাদ সম্মেলন। এ সময় রুবিনার মা চায়না খাতুন অভিযোগ করে বলেন, তার মেয়েকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না। কবর থেকে পুনঃরায় লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করে অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি জানান তিনি। রুবিনার বাবা রবিউল ইসলামও অভিন্ন দাবি করে বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ধর্ষণের বিষয়টি এড়িয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশও ঢিমেতালে মামলাটি তদন্ত করছে। অবিলম্বে জড়িতদের গ্রেফতার করে দ্রুত বিচার আইনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি। এ সময় বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
পরে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে একই দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মানবতা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট মানি খন্দকার। উপস্থিত ছিলেন রুবিনার পিতা রবিউল ইসলাম রবি, দাদা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলফা হোসেন, অ্যাড. কাইজার হোসেন জোয়ার্দ্দার, অ্যাড. জিল্লুর রহমান জালাল, অ্যাড. তানিয়া লাঞ্চ, মানবতা ফাউন্ডেশনের মোটিভেমন কর্মকর্তা জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ২ মে রিজিয়া খাতুন প্রভাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী রুবিনা খাতুনের লাশ তার বাড়ির আমগাছে ঝুলছিলো বলে প্রচার করে প্রতিবেশী হুমায়ুন বাঙ্গালসহ তার বাড়ির লোকজন। আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা চলে। পুলিশ রাতে লাশ উদ্ধার করে। পরদিন থানায় অপমৃত্যু রুজু করে লাশ ময়নাতদন্ত করা হলে এলাকার সাধারণ মানুষ ফুঁসে ওঠে। তারা বিক্ষোভ নিয়ে রাস্তায় নামে। অবশেষে মনবতার আইনগত সহায়তায় ৭ মে সদর থানায় রুবিনার মা চায়না কাতুন বাদি হয়ে মামলা করেন। এ মামলায় মূল আসামির স্ত্রী আরজিনাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। রুবিনার মা চানা খাতুন গৃহপরিচারিকা। পিতা রবি ঢাকার গার্মেন্টন্স শ্রমিক। বাড়িতে একা পেয়ে মাঝে মাঝেই রুবিনাকে ডেকে নিয়ে প্রতিবেশী হুমায়ুন বাঙ্গাল যৌন নিপিড়ন করতো। ঘটনার দিন ধর্ষণের পর হত্যা করে ঘটনা ভিন্ন খাতে নেয়ার জন্য রুবিনার পরনের পোশাকও বদলে দেয় হত্যাকারী। লাশের পরনের পোশাক কার ছিলো? এ প্রশ্নের জবাব এখনও পুলিশ বের করতে পারেনি। রুবিনা হত্যা মামলর পুলিশি তদন্তে আরো গতি প্রত্যাশায় এলাকাবাসী।