অসহিষ্ণুতা কারোর জন্য মঙ্গলজনক নয়

 

ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিত্সারত অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ছাত্রী আফিয়া জাহান চৈতীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত যে ঘটনাটি ঘটেছে তাকে কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না। অভিভাবকগণ চিকিত্সকগণের অবহেলাজনিত কারণে চৈতী মারা গেছে মর্মে অভিযোগ করেন এবং তারই জের ধরে হাসপাতালটিতে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয় আর লাঞ্ছিত করা হয় কর্তব্যরত চিকিত্সকদেরকে। ঘটনা এখানেই থেমে থাকেনি, গড়িয়েছে থানা-পুলিশ-আদালত পর্যন্ত। ‘ভুল চিকিত্সার’ কারণে ছাত্রীর মৃত্যু ঘটেছে এই অভিযোগের সত্য যাচাই বা নির্ণয়ের কোনো তোয়াক্কাই না করে ভাঙচুর আর চিকিত্সক লাঞ্ছনা তো চরম অসহিষ্ণু মানসিকতারই পরিচায়ক। যেকোনো মৃত্যুই দুঃখজনক। আর বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া কোনো তরুণ বা তরুণীর আকস্মিক মৃত্যুর ঘটনা তো আরো দুঃখজনক। কিন্তু চিকিত্সাধীন থাকা অবস্থায় কারও মৃত্যুর ঘটনা তো কোনো অস্বাভাবিক বিষয় নয়। প্রতিদিনই দেশে-বিদেশে চিকিত্সাধীন অবস্থায় অসংখ্য রোগীর মৃত্যু ঘটছে। এতে যদি ওই সকল মৃত্যুর জন্য ভুল চিকিত্সা বা চিকিত্সকদের অবহেলা-গাফিলতিকে দায়ী করে মানুষকে উত্তেজিত করা হয় এবং সেই উত্তেজনার জের যদি চিকিত্সক ও সংশ্লিষ্ট চিকিত্সা কেন্দ্রের ওপর গড়ায় তাহলে তো গোটা চিকিত্সা ব্যবস্থাই অচল হয়ে পড়ার জোগাড় হবে নিশ্চয়ই!

চিকিত্সা ক্ষেত্রে যে অবহেলা বা অদক্ষতাজনিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটে না তা নয়। কিন্তু তত্সত্ত্বেও আইন হাতে তুলে নেয়ার মানসিকতাকে তো কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেয়া চলে না। এই ঘটনায় সংক্ষুব্ধরা যেভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। চৈতীর মৃত্যু পরবর্তী ঘটনাবলি এই কারণেই সমর্থনযোগ্য নয় যে, তাতে সমাজে শুধু বাজে দৃষ্টান্তই স্থাপিত হয় না; সমাজ শৃঙ্খলাও যারপরনাই হুমকির মুখে পড়ে যায়। আইন হাতে তুলে নেয়ার পরিণতি যে কতো ভয়াবহ তা এই জাতি ইতঃপূর্বে যে দুই-একবার প্রত্যক্ষ করেনি তা নয়। ভুল চিকিত্সা বা অবহেলার অভিযোগ থাকলে তা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) বরাবর দাখিল করিতে পারেন। কেননা, চিকিত্সকদের বিরুদ্ধে আনীত যেকোনো অভিযোগ তদন্ত করার দায়িত্ব ও পূর্ণক্ষমতা এই বিএমডিসির ওপরই অর্পিত। এটা ছাড়াও নিয়মতান্ত্রিক আরও বহু পথ খোলা রয়েছে প্রতিবাদের। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার নিন্দা এবং চৈতীর মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করে আইন হাতে তুলে না নেয়ার যে পরামর্শ দিয়াছেন তা আশা করি সকলেই মেনে চলবেন। অসহিষ্ণুতা কারও জন্য মঙ্গলজনক নয়। চিকিত্সকদের ওপর এই হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন কর্মবিরতিসহ প্রতিবাদের যে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে এর ফলে এখন কতো মুমূর্ষু ও সঙ্কটাপন্ন রোগী মহসঙ্কটে পড়ে যাবে সে কথাটি চিকিত্সা সেবাদাতা ও সেবাগ্রহীতারা কি আদৌ একবারের জন্যও ভেবে দেখেছেন?