অনেক পাওয়ার এক জয় বাংলাদেশের

স্টাফ রিপোর্টার: ম্যাচের শেষ দিকে এক-দুই করে এগোচ্ছেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ। আর স্মৃতিতে ভেসে আসছে ২০১৬ সালের এক মার্চের রাতের কথা। ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এমনভাবেই তো ম্যাচের রাশ বাংলাদেশের পক্ষে নিয়ে এসেছিলেন এই দুই ব্যাটসম্যান। কিন্তু ৩ বলে ১ রানের সমীকরণের মুখে পর পর দুই বলে আউট হয়ে বাংলাদেশকে ডুবিয়ে এসেছিলেন এ দুজনই। না, আজ আর অমন কিছু হয়নি। ১০ বল বাকি রেখে বিজয়ের হাসি হেসেই মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ ডাবলিনের মাঠ ছেড়েছেন। হাতে হাত মিলিয়েই দুজন রান করেছেন। মুশফিকের ৪৫-কে টপকে জয় এনে দেয়া চারের শটে মাহমুদউল্লাহ করেছেন ৪৬। আর দুই ‘ভায়রা’র হাত মেলানো এক দিনে বাংলাদেশ পেল ঐতিহাসিক এক জয়। নিউজিল্যান্ডের ২৭০ রান তাড়া করতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়েই ম্যাচ বের করে এনেছে বাংলাদেশ। ১০ বলও বাকি ছিলো তখন। শেষ পর্যন্ত ট্রফিটা নিয়ে উল্লাস করল নিউজিল্যান্ডই। সিরিজের নিষ্পত্তি যে হয়ে গিয়েছিলো আগেই। তবু আজকের ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য হয়ে গেল অনেক কিছু পাওয়ার এক ম্যাচ। এই প্রথম নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বিদেশের মাটিতে জিতল বাংলাদেশ। তবে এর চেয়েও বড় উপলক্ষ হয়ে এল এই তথ্য এই জয় দিয়ে র‍্যাঙ্কিংয়ের ছয় নম্বর জায়গাটি নিশ্চিত করলো বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে এটিই বাংলাদেশের সেরা র‍্যাঙ্কিং-অর্জন। এই জয়ে এটিও প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেল, বিশ্বকাপে খেলতে আর বাছাই পর্বের ঝামেলায় যেতে হবে না মাশরাফির দলকে। আজকের ম্যাচটা রং বদলেছে বহুবার। এ কারণে শেষ দিকে সমীকরণ বাংলাদেশের দিকে হেলে থাকলেও শঙ্কা তো ছিলোই। ম্যাচটা শুরু থেকে পেন্ডুলামের মতোই দুলল শুধু। একবার এদিক যায় তো, একটু পরেই ওদিক। ইনিংসের প্রথম বলেই ছক্কা, তৃতীয় বলে আবার আউট সৌম্য। কখনো তামিম ইকবাল (৬৫) ও সাব্বির রহমানের (৬৫) ১৩৬ রানের জুটিতে পরিষ্কার বিজয় দেখছে বাংলাদেশ, আবার ক্ষণিকের পাগলামোতে ১৭ রানের মধ্যে নেই ৩ উইকেট! সাকিব আল হাসান কিছুক্ষণ চেষ্টা-চরিত্র করে ১৯ রানেই হুক করার প্রলোভনে আউট হয়ে এলেন। বাংলাদেশের রান তখন ১৯৯, জয় তখন ৭২ রান দূরে। হাতে উইকেট পাঁচটি, বলও আছে ৭০টি। জয়ের জন্য এমন সহজ সমীকরণ খুব কমই পাওয়া যায়, বিশেষ করে র‍্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা দলগুলোর সাথে। কিন্তু ইদানীং বাংলাদেশের স্লগ ওভারের পারফরম্যান্স ভয়ই দেখাচ্ছিলো। মাহমুদউল্লাহর অতিসাবধানী ব্যাটিংও। আর এই উইকেটেই নিউজিল্যান্ড ৪ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৫৩ করেছে জিমি নিশাম, কলিন মানরোদের নিয়ে।
কিন্তু মুশফিকুরই সাহস দিচ্ছিলেন। সাহসী সব শটে। স্কুপ করছেন, রিভার্স সুইংও। তাঁর আত্মবিশ্বাস ছুঁয়ে গেল মাহমুদউল্লাহকেও। ভাগ্যও সঙ্গী হলো এ দুজনের। জয় থেকে ৪০ রান দূরত্বে কভারে মাহমুদউল্লাহর একটি শট টম ল্যাথামের হাতের ফাঁক গলে পড়ে গেল। তা হোক। বাংলাদেশও তো ক্যাচ ফেলেছে চারবার। ল্যাথামই জীবন পেয়েছেন দুবার। তাঁর ৮৪, নিল ব্রুমের ৬৩; আর দুজনের ১৩৩ রানের জুটি ভয়ই দেখাচ্ছিল বাংলাদেশকে। ১ উইকেটে ১৫৬ রান তোলা নিউজিল্যান্ডকে পরে মাটিতে নামিয়ে এনেছেন সাকিব-মাশরাফি।
দুজনের পাশাপাশি ২ উইকেট নিয়েছেন ৭ মাস পর দলে ফেরা নাসির। নাসিরকে অবশ্য ব্যাটিংয়ে নামার চাপ আর নিতে হয়নি।
এ জয়ে দেশের বাইরে সব প্রতিপক্ষকে হারানোর বৃত্ত পূরণ হলো। ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ে প্রথমবারের মতো ছয়ে ওঠাও হলো। সে সাথে হলো ২০১৬ সালের বহু কষ্টের মুহূর্তটাকে কবর দেয়াও। এবার যে দল জিতিয়েই ফিরিয়েছেন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ। ম্যাচ সেরা হওয়ার পর মুশফিকের অবিমিশ্র হাসিও অনেকটা ভুলিয়ে দিল মার্চের সেই থমথমে মুখটাও।
এখন এই আত্মবিশ্বাসের রথে চড়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে কিছু করে দেখানোর পালা।