পাউয়ারটিলারে প্রাণ হারালো দেউলির স্কুলছাত্র সম্রাট

দামুড়হুদা থেকে বালি নিয়ে পাটাচোরায় যাওয়ার সময় বিপত্তি

 

বখতিয়ার হোসেন বকুল: দামুড়হুদায় পাউয়ারটিলারের ধাক্কায় সম্রাট (১০) নামের এক স্কুলছাত্র নিহত হয়েছে। সে দেউলী গ্রামের মহাসিন আলীর ছেলে এবং দেউলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির ছাত্র। গতকাল বুধবার সকাল ৯টার দিকে দেউলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনেই ওই দুর্ঘটনা ঘটে।       প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল বুধবার সকাল ৯টার দিকে দামুড়হুদা দশমীপাড়ার আলিমের ছেলে রিপন দামুড়হুদা বাজারের বিশিষ্ট রড সিমেন্ট ব্যবসায়ী রবিউল হোসেনের দোকান থেকে পাউয়ারটিলারে করে বালিসহ ৩ বস্তা সিমেন্ট নিয়ে পাটাচোরায় যাচ্ছিলো। পাউয়ারটিলারটি দেউলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছুলে ওই সময় স্কুলছাত্র সম্রাট স্কুলেই এক শিক্ষকের কাছে থেকে প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরার জন্য সেসহ আরও ৪/৫ জন বাইরে বের হয়। এরপরপরই পাউয়ারটিলার চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং বালিভর্তি পাউয়ারটিলার স্কুলছাত্র সম্রাটকে পেছন থেকে ধাক্কা মারে। স্কুলছাত্র সম্রাটের সাথে থাকা অন্যরা দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেলেও  বালিভর্তি পাউয়ারটিলার তাকে চাপা দিয়ে পিষ্ট করে। স্থানীয় লোকজন তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে দ্রুত দামুড়হুদা উপজেলা স্মাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. হুসনে আরা নারগিছ স্কুলছাত্র সম্রাটকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতাল থেকে সম্রাটের মৃতদেহ বাড়িতে পৌঁছুলে মা চন্দনা খাতুনসহ স্বজনদের কাঁন্না আর আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে মা চন্দনা খাতুন বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন। একমাত্র ছেলের এভাবে মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না তিনি। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে ছুটে যান দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রফিকুল হাসান। পরে তিনি বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবহিত করেন এবং জেলা প্রশাসকের নির্দেশে নিহতের পরিবারকে আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা দেন। পরে দামুড়হুদা উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থ থেকে উপসহকারী প্রকৌশলী (দুর্যোগ) মো. নুরুজ্জামান ওই পরিবারের হাতে ৫ হাজার টাকা তুলে দেন। জেলা পরিষদের সদস্য দামুড়হুদা উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক শফিউল কবির ইউসুফ, দামুড়হুদা সদর ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক শরীফুল আলম মিল্টন, ইউপি সদস্য আবু সাইদ, সাবেক ইউপি সদস্য রাশেদুল ইসলাম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে পাউয়ারটিলার চালক রিপন দুর্ঘটনার পরপরই পাউয়ারটিলার ফেলে পালিয়ে যায়। পাউয়ারটিলারটি স্কুলছাত্র সম্রাটকে পিষ্ট করার পর প্রায় ৩৫ হাত দুরুত্বে গিয়ে পার্শবর্তী শহিদুলের বাড়ির ওঠানে থাকা ধানভর্তি গোলায় ধাক্কা দেয়ার পর বন্ধ হয়ে যায়। পাউয়ারটিলারের ধাক্কায় ধানভর্তি গোলা ভেঙেচুরে যায়। পরে পুলিশ দুর্ঘটনা কবলিত পাউয়ারটিলারটি জব্দ করে থানায় নিয়ে আসে। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নিহত স্কুলছাত্র সম্রাটের লাশের জানাজা শেষে নিজ গ্রামের কবরস্থানে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়। ২ বোন ও ১ ভাইয়ের মধ্যে সম্রাট ছিলো সকলের ছোট। এদিকে স্কুলছাত্র সম্রাট মারা যাওয়ার পরপরই স্কুল ছুটি ঘোষণা করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আবু জিহাদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, পাউয়ারটিলারের চালক রিপন পালিয়ে গেলেও পাউয়ারটিলারটি জব্দ করে থানায় নেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।