আবারও অস্থির শিক্ষাঙ্গন

একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষাব্যবস্থাকে এগিয়ে নেয়ার কোনো বিকল্প নেই। আর বলার অপেক্ষা রাখে না, শিক্ষার অগ্রগতির প্রশ্নে যেকোনো মূল্যেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুশিক্ষা অর্জনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এটা পরিলক্ষিত হয় যে, নানা কারণে মাঝেমধ্যেই দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অস্থির হয়ে ওঠে। যদি শিক্ষা অর্জনের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে অস্থিরতা বিরাজ করে তবে সামগ্রিক অর্থেই নেতিবাচক। শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন সিঅ্যান্ডবি এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নাজমুল হাসান ও মেহেদি হাসান নামের দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। আর এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবি, নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান, গতিরোধক, পদচারী-সেতু নির্মাণসহ আরও কয়েকটি দাবিতে প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। স্বাভাবিকভাবেই এই অবরোধের কারণে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে এবং ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।

অবরোধে যানজট সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি যেমন সত্য, তেমনিভাবে সহপাঠীর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনাটিও অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। সঙ্গত কারণেই সুশিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে হলে শিক্ষার্থীদের দাবির যৌক্তিকতা বিচার বিশ্লেষণ করতে হবে এবং যেকোনো সংকট সৃষ্টি হলে তার গ্রহণযোগ্য সমাধানে সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগ নেবে এমনটি প্রত্যাশিত। কিন্তু যদি এ ধরনের ঘটনায় সময়ক্ষেপণ হয় তবে শিক্ষার পরিবেশ বাধাগ্রস্ত হবে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষতির সম্মুখীন হবে যা সংশ্লিষ্টদের এড়িয়ে যাওয়ার বিষয় নয়। যখন এবারের ঘটনায় এমনটিও জানা যাচ্ছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়ক অবরোধকারী শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে। আর এ ঘটনার জের ধরে শনিবার বিকালে উপাচার্যের বাসভবনও ভাঙচুর করা হয়েছে তখন বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগজনক। উল্লেখ্য, দুপুরে উপাচার্য, সহউপাচার্যসহ কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তা শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছে এবং তারা দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে অবরোধ তুলে নিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ প্রত্যাহার করা হবে না বলে জানান শিক্ষার্থীরা। এছাড়া এমন অভিযোগও উঠে এসেছে, ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ আরও কয়েকজন নেতা আন্দোলনকারী কয়েকজনকে চড়-থাপ্পড় মারেন! এতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। উপাচার্য আবারও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে গেলে শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিকভাবে হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতাদের বিচারের দাবি করেন। উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় খুললে বিচার করবেন বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু শিক্ষার্থী তার কথায় আশ্বস্ত হননি।

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু যেন দেশে একটি স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে যা অত্যন্ত উৎকণ্ঠার। আর যখন শিক্ষার্থীরা সহপাঠীর মৃত্যুতে বেদানাক্রান্ত এবং দাবি তুলে ধরেছেন তখন তা বিবেচনা করে যৌক্তিকতা অনুযায়ী পূরণ করতে সংশ্লিষ্টরা পদক্ষেপ নেবেন এটি কাম্য। কিন্তু এ ধরনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভাঙচুর, অস্থিরতা বা কোনো প্রকার অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি কাম্য হতে পারে না। মনে রাখা দরকার, শুধু এ ঘটনাই নয় এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অস্থির হয়ে উঠেছে। ঘটেছে নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও। আমরা মনে করি, যে কোনো সংকট নিরসনের ক্ষেত্রে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য সমাধানে উদ্যোগী হতে হবে। এবারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতি বিচার বিশ্লেষণ করে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।