বখরা না পেয়ে লুটপাট : প্রতিবাদ করায় মহিলার হাত ভেঙে দেয়ার অভিযোগ

চুয়াডাঙ্গা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সদস্যদের বিরুদ্ধে দর্শনায় সাংবাদ সম্মেলন

দর্শনা অফিস: চুয়াডাঙ্গা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কতিপয় কর্মকর্তা ও সিপাহী একের পর এক ক্ষমতার অপব্যবহার করে আইনবিরোধী কার্যকলাপ করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় দিনদিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। লাগামহীন ঘোড়ার মতো ছুটে বেড়াচ্ছে টাকা আদায়ের জন্য। টাকা না দিলেও ঘটাচ্ছে নারী শ্লীলতাহানি। সাজানো মামলা দিয়ে করা হচ্ছে হয়রানি। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে এবার জীবননগরের সিংনগর গ্রামে অভিযানের নামে হয়রানি করা হয়েছে একটি পরিবারের সদস্যদের। ওয়্যারড্রপ ভেঙে করেছে লুটপাট। পাল্টা হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে গৃহকর্তার বিরুদ্ধে। প্রতিবাদ করায় মারধর করে মহিলার হাত ভেঙে দিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সদস্যরা। সঠিক তদন্তপূবর্ক অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থ গ্রহণের দাবিতে সোচ্চার আহত মহিলা জোসনা। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় দর্শনা প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনে জীবননগর উপজেলার উথলী ইউনিয়নের সিংনগর গ্রামের কৃষক মনিরুজ্জামান মনিরের স্ত্রী জোসনা খাতুন লিখিত বক্তব্যে বলেছেন, গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে চুয়াডাঙ্গা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ৭/৮ জন সদস্য জোসনার বাড়িতে জোড়পূর্বক ঢুকে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে তাণ্ডব চালায়। ঘরের আসবাবপত্র তছনছ করে। এ সময় বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে জোসনার বাম হাত ভেঙে দেয়। এক পর্যায়ে তারা ওয়্যারড্রপের তালা ভেঙে গরু বিক্রি ও জমি বন্দকির দেড়লাখ টাকা ও সোনার গয়নাগাটি লুটপাট করে। অভিযান চলাকালীন প্রতিবেশিদের ভিড় দেয়া হয়নি বাড়িতে। কোনো প্রকার মাদকদ্রব্য না পেয়ে টাকা-পয়সা ও গয়নাগাটি নিয়ে চলে যায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সদস্যরা। পরে শোনা যায়, জীবননগর থানায় জোচনার স্বামী মনিরুজ্জামান মনিরের বিরুদ্ধে হেরোইন উদ্ধারের মামলা দায়ের করা হয়েছে। জোসনা আরও বলেছেন, প্রকৃতপক্ষে যদি আমার বাড়ি থেকে কোনো প্রকার মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েই থাকতো তবে, আমাকে ধরে নিলোনা কেন? আসলে নিজেদের দোষ ঢাকতে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করেছে। এ ঘটনায় জোসনা মাদকদ্রব্য অধিদফতরের কতিপয় সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবেন বলে জানিয়েছেন। সাংবাদিক সম্মেলনে দর্শনা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। বিজিবি ও র‌্যাব ঘোষণা করেছে জিহাদ। প্রশাসনের এ তিন বাহিনী যেকোনো মূল্যে চুয়াডাঙ্গাকে মাদকমুক্ত করণের লক্ষেই লড়াইয়ে মাঠে নেমেছে। পুলিশের মাদকবিরোধী সভা-সমাবেশ ও বিজিবি সীমান্তে দফায় দফায় মাদকরোধে বৈঠক অব্যাহত রেখেছে। পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরা যখন মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার, ঠিক তখনি চুয়াডাঙ্গা মাদকদ্রব্য অধিদফতরের কতিপয় সদস্য বখরা আদায়ে মেতেছে। উৎকোচের টাকা বাড়াতে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে করা হচ্ছে হয়রানি। উৎসাহিত করা হচ্ছে মাদক কারবারে। পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবের ভয়ে মাদক কারবার ছাড়তে চাইলেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফরের আলোচিত কতিপয় অসাধু সদস্যের কারণে।

অভিযোগে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদফতরের পরিদর্শক বিশ্বাস মফিজুল ইসলাম ও তার জামাতা উপসহকারী পরিদর্শক আকবর আলী, সিপাহী আ. রশিদ, সোহরাব, হেলাল ও সোহেল চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন এলাকা মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছেন। রাত-দিন অবিরাম মাদক কারবারিদের ঠিকানায় দৌড়-ঝাপ আর বখরা আদায় যেন নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। মাদকবিরোধী অভিযানের নামে হয়রানিমূলক মামলায় ফাঁসিয়ে অতিরিক্ত ফয়দা আদায় ও চুক্তির দর বাড়ানোর মূল ভূমিকায় থাকেন আকবর আলী ও রশিদ। কোনো মাদক কারবারী এ ধান্দা থেকে নিজেকে গুটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাইলেই মুশকিল। আকবর ও রশিদসহ অভিযুক্তরা তড়িত গতিতে পৌঁছে যাবে সেই মাদক কারবারির কাছে। কেউ কেউ অভিযোগ করে বলেছে, চুয়াডাঙ্গা পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবের ভয়ে মাদক কারবার ছেড়ে দিলেও মাদকদ্রব্য অধিদফতরের ওই বাহিনীর কতিপয় সদস্যের কাছ থেকে রেহাই পাওয়া মুশকিল। মাদকবিরোধী অভিযানের নামে হয়রানি, মিথ্যা অভিযোগ তুলে মামলায় ফাঁসিয়ে ঝামেলায় জড়িয়ে দেয় তারা। কয়েকজন মাদক কারবারির কাছ থেকে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা মাদকদ্রব্য অধিদফতরের কথিত ক্যাশিয়ার আকবর আলী ও আ. রশিদ চুক্তি মাফিক দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক হারে অর্থ আদায় করে থাকেন। অভিযানের নামে গ্রাম, পাড়া ও মহল্লায় মহিলাদের অশ্লীল ভাষায় গালাগালি, শ্লীলতাহানি ও মারধরের ঘটনায় আকবর ও রশিদসহ অন্যদের বিরুদ্ধে গোটা এলাকা জুড়ে ব্যাপক সমলোচনার ঝড় উঠেছে। এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা মাদকদ্রব্য অধিদফতরের উপ-পরিচালক আসলাম হোসেনের সুদৃষ্টি কামনা করেছে এলাকাবাসী।