ঘূর্ণিঝড় মোরা সকালে আঘাত হানার পূর্বাভাস : উপকূলে মহাবিপদ সঙ্কেত

স্টাফ রিপোর্টার: ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় মোরা। ঘূর্ণিঝড়টি ভোরে মধ্যেই কিংবা সকালে উপকূলে আঘাত হানার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গতকাল রাতে এ প্রতিবেদন লেখার সময় প্রবল শক্তিশালী সাইক্লোনটি উপকূল থেকে ৩০৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। ভোরের দিকে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করার কথা। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ছয় জেলায় ১০ নম্বর মহাবিপদ  সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় অপর জেলাগুলো হলো নোয়খালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর। এই জেলা এবং এগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতেও ১০ নম্বর মহাবিপদ, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলের ১০ জেলা থেকে প্রায় তিন লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬২ কিলোমিটার এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর প্রচণ্ড উত্তাল।

এদিকে সাগরে থাকা ট্রলার ও জেলেদের নিয়ে শঙ্কার মধ্যে পড়েছেন কক্সবাজার উপকূলের ট্রলার মালিক ও জেলেদের স্বজনরা। ঘুর্ণিঝড়ের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য ওঠানামার কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে সকাল থেকেই। কক্সবাজার বিমানবন্দরের বিমান চলাচল বন্ধ করেছে সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি। এছাড়া চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিমানবন্দরকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বিকাল থেকে সারা দেশে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রেখেছে বিআইডব্লিউটিএ। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রাজধানীতেও গতকাল দুপুর থেকে আকাশ অন্ধকার হয়ে আসে। আর থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ঝরতে থাকে। ঢাকা থেকে ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়তে না হয় এ জন্য সকল জেলায় বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্ব এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্ব দিকে অবস্থান করছিলো। ঝড়ের গতি ঘণ্টায় ‘মোরা’ আরো উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে বাংলাদেশ সমুদ্রবন্দর ও উপকূলের কাছাকাছি ধেয়ে আসছে।এটি আরো ঘণীভূত হয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস থেকে জানানো হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোরার প্রভাবে উপকূলীয় জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

কক্সবাজার, পটুয়াখালী, বাগেরহাটসহ উপকূলীয় বিভিন্ন জেলায় সোমবার সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। বিকালে কক্সবাজারে নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বেশি উচ্চতার জোয়ারে প্লাবিত হওয়ায় লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। উপকূলীয় ১৯ জেলায় মাইকিং করে নিচু এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়ে। মেডিকেল টিম গঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য ও ৫০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে জরুরি উদ্ধার ও ত্রাণ তত্পরতার জন্য।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গোলাম মোস্তফা বলেন, সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় সব প্রস্তুতিই তারা নিয়েছেন। এছাড়া, ঝড়ের কারণে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থেকে প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আবহাওয়াবিদ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মাইকিং করে সমুদ্র সংলগ্ন এলাকার মানুষদের নিরাপদ স্থানে আসতে বলা হয়েছে। এর সঙ্গে কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, বাহারছড়া প্রভৃতি ইউনিয়নের লোকজনদের বিকালের আগেই নিরাপদ স্থানে সরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ এ কেএম রুহুল কুদ্দুস জানান, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’- এর প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ অতিক্রমকালে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর জেলাসমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ সহ ঘণ্টায় ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

আবহাওয়া দপ্তর থেকে প্রেরিত বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৮ নম্বর নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার সমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কক্সবাজারে ৪০ গ্রাম প্লাবিত: ঘূর্ণিঝড় শুরুর আগেই সাগরের পানি উত্তাল হয়ে কক্সবাজারের ৪০ গ্রাম প্লাবিত। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রায় পাঁচ কিলোমিটার ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের প্লাবনে ৪০ গ্রামের কয়েক’শ ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। পাউবো কক্সবাজারের প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে কয়েকটি ইউনিয়নের ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে আরও বেড়িবাঁধ বিলীন হলে ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যাও বাড়বে। জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার জন্য লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়েছে।

আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিন: এ বুলেটিনে বলা হয়, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তত্সংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ আরও সামান্য উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে একই এলাকায় (১৮.৮ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১.৩ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত ও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে ৩০ মে মঙ্গলবার সকাল নাগাদ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

এছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়োহাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় মোরানামকরণ কেন? ঘূর্ণিঝড়টির নাম ‘মোরা’ কেন, নামটি কোত্থেকে এলো তা নিয়ে অনেকের মধ্যে কৌতূহল রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, থাইল্যান্ডের কাছ থেকে আসা প্রস্তাবের ভিত্তিতে এই ঘূর্ণিঝড়টির (মোরা) নামকরণ করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ‘মোরা’ একটি থাই শব্দ। শব্দটির ইংরেজি অর্থ ‘স্টার অব দ্য সি’ অর্থ্যাৎ ‘সাগরের তারা’। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে অহরহ ঘূর্ণিঝড় হয়। কোথায় কখন কোনো ঝড় হয়, তা নিয়ে বিভ্রান্তি এড়াতে ঝড়ের আগাম নামকরণ করা হয়। ১৯৪৫ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে ঝড়ের নামকরণ শুরু হয়।

ঘূর্ণিঝড় মোরামোকাবিলায় প্রস্তুতি: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ মোকাবিলায় সরকার সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব গোলাম মোস্তফা। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সন্ধ্যার মধ্যে উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এজন্য সকল আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখতে জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া উপকূলীয় এলাকায় উদ্ধার তত্পরতা চালানোর জন্য পর্যাপ্ত নৌযান প্রস্তত রাখা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি রোববার মধ্যরাতে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। এর নামকরণ করা হয়েছে ‘মোরা’। মঙ্গলবার সকালে এটি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ও কক্সবাজার উপকূলকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সমুদ্রে অবস্থিত সকল জাহাজ ও ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে গোলাম মোস্তফা জানান, মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জেলা-উপজেলার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষার জন্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। অবস্থার অবনতি হলে সন্ধ্যার মধ্যে উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসার জন্য বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, উপকূলীয় লোকদের সতর্কতামূলক তথ্য প্রচার ও তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসার জন্য সিপিপির ভলান্টিয়ারদের অনুরোধ করা হয়েছে। দুর্যোগে যাতে জানমালের ক্ষতি না হয় তার জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নিজের জানমাল রক্ষায় দুর্যোগ সংক্রান্ত বার্তাকে অবহেলা না করে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে আসতে উপকূলবাসীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ইতিমধ্যে প্রত্যেক জেলায় ত্রাণ তত্পরতা চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় চাল ও নগদ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক আবু সৈয়দ মোহাম্মদ হাসিম, অতিরিক্ত সচিব ফায়জুর রহমান ও অতিরিক্ত সচিব আমির হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

ভোলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৭টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সোমবার দুপুর থেকে উপকূলীয় এলাকায় প্রচার-প্রচারণা ও মাইকিং করছে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবকরা। জেলার চরাঞ্চলের মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে বলা হয়েছে। সমুদ্রবন্দর মোংলায় ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ মোকাবেলায় মোংলায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। সোমবার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত বন্দরের সকল বিভাগের প্রধানদের নিয়ে সভা করেছেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর একেএম ফারুক হাসান। তিনি জানান, বন্দরে আগত ও অবস্থানরত সকল দেশি-বিদেশি জাহাজগুলোর পণ্য বোঝাই-খালাস কাজ দুপুর ২টা থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে বন্দর জেটির কন্টেইনার ইয়ার্ডে কাজ চলছে। জাহাজসহ অন্য নৌযানগুলোকে শক্তভাবে নোঙ্গর/এ্যাংকোরেজ ও বেঁধে সতর্কাবস্থায় রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া বন্দরের হারবার বিভাগ কন্ট্রোল রুম চালু করেছে। নৌযান দুর্ঘটনা এড়াতে বন্দরে একটি উদ্ধারকারী টাকবোট প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি: বাগেরহাটে দুর্যোগ মোকাবেলায় উপজেলা সদরে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। দুপুর ১২টায় একটি দুর্যোগ প্রস্তুতি সভা শুরু হয়েছে। উপজেলার ৪৩ টি সাইক্লোন সেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপকূল বাসীকে আতংকিত না হয়ে সর্তকতার সাথে দূযোর্গ মোকাবেলার জন্য বিশেষ বার্তা প্রেরণ করা হয়েছে। মসজিদ এবং উপজেলার প্রশাসনের মাইক থেকে জরুরী মাইকিং করা হয়েছে। শুকনো খাবার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ( ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ মোকাবেলার বনবিভাগের পক্ষ থেকে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সকল ষ্টেশন কর্মকর্তাদের বেতার বার্তার মাধ্যমে সতর্ক করা হয়েছে। নৌযান গুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে।

সারাদেশে নৌ চলাচলবন্ধ ঘোষণা: ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় মোরা। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি গত রবিবার মধ্যরাতে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টির নামকরণ করা হয়েছে মোরা। আজ মঙ্গলবার সকালে এটি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে সোমবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ও কক্সবাজার উপকূলকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঘুর্ণিঝড় মোরার কারণে সারাদেশে নৌ- চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এতে করে সারাদেশের লাখ লাখ নৌ-যাত্রী সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। কবে কখন এই নৌ-যান বন্ধ ঘোষণা প্রত্যাহার করা হবে এই সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না কেউ।

বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর এম মোজাম্মেল হক এ ব্যাপারে বলেন, নিয়মিত আবহাওয়া অধিদফতরের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। সেখান থেকে সবুজ সংকেত পেলেই সারাদেশে লঞ্চ চলাচল পুনরায় চালু করা হবে। ঘূর্ণিঝড় মোরার কারণে গতকাল সোমবার দুপুর আড়াইটা থেকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মোরা পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে ও তত্সংলগ্ন এলাকা থেকে কিছুটা উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার ছাড়াও উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং জেলাগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।